• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চরাঞ্চলে পৌঁছেনি শীতবস্ত্র, বেড়েছে শীতের তীব্রতা

  হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম

২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১০:০৮
চরাঞ্চলে পৌঁছেনি শীতবস্ত্র, বেড়েছে শীতের তীব্রতা

‘বাবারে বাড়ি ভাঙি সউগ গেইছে। এবার নতুন জাগাত আশ্রয় নিছি, কাঁইয়ো খোঁজও নিলে না, একটা কম্বলও দিলে না।’ এমন আক্ষেপের কথা জানালেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের শীপেরপাচি গ্রামের মাটি কেটে জীবন নির্বাহ করা বিধবা নারী মালেকা বেওয়া (৪৫)।

গত এক সপ্তাহ ধরে এখানে ১১ থেকে ১৪ ডিগ্রির মধ্যে আবহাওয়া ওঠানামা করছে। সকালে ঘনকুয়াশা আর ঠান্ডা হাওয়ার কারণে কাঁপছে শিশুসহ বয়স্করা। চরের খোলা প্রান্তর জুড়ে তীব্র বেগে ছুটছে হিম বাতাস। ফলে নৌকা নিয়ে পারাপার করা কিংবা মাঠে কাজ করতে ভীষণ বেগ পেতে হচ্ছে শ্রমজীবীদের।

মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত বৃষ্টির মতো ঝড়ছে শিশিরকনা। শহরে হেড লাইট জ¦ালিয়ে যানচলাচল করছে দুরপাল্লার গাড়িগুলো। গ্রামে এবং চরাঞ্চলে খোলা হাওয়ার কারণে মানুষ দেরী করে মাঠে কাজে নামছে।

কুড়িগ্রাম রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তুহিন মিয়া জানান, বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অবস্থা আরো কিছুদিন বিরাজ করবে বলে তিনি জানান।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মিয়া জানান, প্রতিবছর চরের মানুষ কমবেশী সহযোগিতা পেলেও এবার তেমন সাঁড়া মিলছে না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫শতাধিক কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। যারা পায়নি তারা পরিষদে এসে ভীর জমাচ্ছে। বিভিন্ন অভিযোগ করছে।

স্থানীয় সমাজসেবী আবুল হোসেন (৪০) জানান, ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী শিপেরপাচী, খাসেরচর, পোড়ারচর ও চর পার্বতীপুরে ৫ শতাধিক দরিদ্র পরিবার আছে। যারা প্রতিদিন শীতবস্ত্রের জন্য নদী পার হয়ে মেইনল্যান্ডে ভীর জমাচ্ছে। এবার কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি।

কথা হলো শিপেরপাচীর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি লোকমান (৪৫) ও বিধবা মালেকার (৪০) সাথে। তারা জানালেন, এই চরে প্রায় ১৫০টি খানা রয়েছে। এই শীতে এখন পর্যন্ত কেই সাঁড়া দেয়নি।

খাসের চরের দিনমজুর ছুরমান (৫০) ও মজিবর (৪৮) জানান, নদী ভাঙার পর আমরা ৪০টি পরিবার এখানে আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের কেউ কোন খোঁজখবর নেয় না একই কথা জানালেন পোড়ারচরের শরীফুল মাস্টার (৫৫) ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা নাদু শেখ (৫০)। তারা জানান, এই চরে প্রায় ১২০টি খানা রয়েছে। এখানকার মহিলাদের জন্য চাদর দিলে খুবই ভালো হতো। কম্বল আমরা চাই না।

চর পার্বতীপুরের সচেতন ব্যক্তি এনতাজ (৪৫) ও মাটির শ্রমিক কদভানু (৩৮) জানান, এই চরে ২শতাধিক খানা আছে। সবাই আমাদের চরকে কিছু না দিয়ে দুরের চরে যায়। প্রতিবার আমরা সরকারি-বেসরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হই।

আমাদের মহিলা ও পুরুষদের জন্য চাদর দিলে ভালো হয়। শিশুদের জন্য কাপড় কিনতে পারি না। এ ব্যাপারে কেউ সহযোগিতা করে না।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাসেদুল হাসান জানান, এখন পর্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারিভাবে সাড়ে ৪ হাজার কম্বল দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারিভাবে ২৭০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো চাহিদা চাওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র রয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলাগুলোতে ৩৮ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো ১৫ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। এছাড়াও বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত ২ হাজার কম্বল বিভিন্ন পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আমরা শিশুদের জন্য শীতবস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছি। আশা করছি সবাই মিলে আমরা শীতকে মোকাবিলা করতে পারবো।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড