মো. রেজোয়ান ইসলাম, নীলফামারী
মূলভবন ও শৌচাগারসহ শহীদ মিনার ৬ শতকে নির্মিত হলেও হদিস মিলছে না বাকি ৫০ শতক জমির। দায়সারা মন্তব্যে গড়িমসি তথ্য প্রদান প্রধান শিক্ষকের। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া যেন এক রূপকথার গল্প যা কল্পনা কেও হার মানায়।
শিক্ষা অফিসারের ভিন্ন মন্তব্য ইঙ্গিত করে সরিষাতেই ভূত! বলছি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার "মধ্য গয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়" -এর হালচালের কথা।
দৈনিক অধিকারের প্রতিবেদক কাগজপত্রসহ জমি উদ্ধারের পদক্ষেপ জানতে চাইলে নানান টালবাহানায় প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, স্কুলের ৫৬ শতক জায়গার মধ্যে মাত্র ৬ শতক আমাদের দখলে এবং বাকি ৫০ শতক জায়গা কোথায় তা আমাদের জানা নেই।
তিনি জানান- ৩০ শতক জায়গা মানুষের, দখল দেয় না। ২০ শতক জায়গা পাইনি। ৩০ শতক জায়গা স্কুলের নামে কাগজপত্র প্রায় কমপ্লিট। নিজেকে মাত্রাতিরিক্ত ব্যস্ত দেখিয়ে, এ বিষয়ে ইতি টানতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি।
জমি রেজিস্ট্রির প্রায় ৪৯ বছর অথচ বাস্তবতায় জমির কোনো হদিস না থাকার কারণে প্রধান শিক্ষক বলেন, মসজিদ মাঠকে স্কুলের খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছি। সে জন্য অবশিষ্ট পঞ্চাশ শতক জমি উদ্ধারে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
প্রধান শিক্ষক মো. আনিসুর রহমান দৈনিক অধিকারকে জানান, ১৯৮১ সালে এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমার নিয়োগ হয়। কোনো এক সময় বিদ্যালয় সরকারিকরণের গুঞ্জন উঠলেও রেজিস্ট্রেশন না থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয় স্থাপনের উপযুক্ত পরিবেশ ও জায়গা সংকট দেখা দিলে। মসজিদ মাঠ সংলগ্ন জমির মালিক গোলাম মোস্তফা হতে ছয় শতক জমি তৎকালীন সময়ে কর্মরত শিক্ষকদের নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যালয়ের নামে ক্রয় করা হয়েছিল।
তিনি জানিয়েছেন, অন্যত্র বিদ্যালয়ের ৫০ শতক জায়গা থাকলেও সেখানে বিদ্যালয় স্থাপন না করায় রেজিস্ট্রেশনের জন্য মসজিদ মাঠকে বিদ্যালয়ে নিজস্ব (৫৬ শতক) সম্পত্তি উল্লেখ করে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। প্রতিমাসে সে আলোকেই ধারাবাহিকভাবে শিক্ষা অফিসে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
১৯৭৪ সালে বিদ্যালয়কে ৫০ শতক জায়গা দান করেন মো. মজিবর রহমান ও মো. দৌলত কাজী এবং তারা উভয়েই প্রয়াত।
এ প্রসঙ্গে জমি দাতা প্রয়াত মো. মজিবর রহমানের ছেলে নুরুল আমিন নান্নু (আইনজীবী) দৈনিক অধিকারকে বলেন, আমার বাবা স্কুলে জমি দিয়েছে এটা জানি। কিন্তু জমির পরিমাণ জানা নেই।
আরেক দাতা কাজী দৌলত উদ্দীনের ছেলে কাজী ইনসান দৈনিক অধিকারকে বলেছেন, আমার বাবা স্কুলের উন্নয়ন জন্য ১৯৭৪ সালে জমি দিলেও আজ অবধি স্কুল কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে জমিতে কখনো আসেনি। স্কুলের স্বার্থে জমি উদ্ধারে আমি সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করব।
এছাড়াও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ শিক্ষার্থীরা যথা সময়ে বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করেন তিনি। কিন্তু সরেজমিনে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যের উল্টো চিত্র দেখা গেছে। গত কয়েক দিনে বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীকে সকাল নয়টা ৩০ মিনিটেও বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি।
দৈনিক অধিকারকে স্কুল সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। স্কুলের জমি উদ্ধারে খুব দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদকে দৈনিক অধিকার থেকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফিরোজুল আলম দৈনিক অধিকারকে (১৯ ডিসেম্বর) জানান, সকাল দশটায় পরীক্ষা, সবাই সময়মতো চলে আসবে। শিক্ষকগণ দশটায় আসবেন। এখন পরীক্ষা চলছে। এসময় ভিজিট করে কোনো লাভ নেই। স্কুলের জায়গার বিষয়ে শিক্ষা অফিসার জানান জমি কি পরিমাণ আছে দলিল দেখতে হবে। তিন মাস পর লোকটার (প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান) অবসরে যাবেন কি করব আর? নতুন শিক্ষক আসলে তখন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার দৈনিক অধিকারকে জানান, পরীক্ষা চলুক আর নাই চলুক নয়টাই শিক্ষকদের আসতে হবে। এদের দায় দায়িত্ব কি? শিক্ষার এই কর্মকর্তা জানান, দুই মাস পর অবসরে হোক বা দুইদিন পর, দায়িত্বে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। কাউ এই দায়িত্বে অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড