মো. আকাশ, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) আদালতে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক চার্জশিট দাখিল করা হয়। সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমানের (মতি) বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করার পর সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করলে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী, স্থাবর সম্পদের মূল্য পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ এক হাজার ২২৪ টাকা ও অস্থাবর সম্পদ তিন কোটি ৯৭ লাখ ৪০ হাজার ৮০৩ টাকাসহ মোট নয় কোটি ৬২ লাখ ৪২ হাজার ২৭ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ এর ঘোষণা দেন।
কিন্তু তদন্তকালে স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ১৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮ হাজার ৮৬ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। যার মধ্যে গোপন করা সম্পদের পরিমাণ ৬ কোটি ৬২ লাখ ৮২ হাজার ৭৫৩ টাকা। এছাড়া মতিউর রহমানের বিভিন্ন ব্যাংকে ৭৪ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার ১১৪ টাকা জমা ও উত্তোলন করার তথ্য পাওয়া গেছে তদন্তে।
অন্য দিকে কাউন্সিলর মতিউর রহমানের (মতি) স্ত্রী রোকেয়া রহমানের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ১৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯১৯ টাকার অভিযোগ আনা হয়েছে দাখিল করা চার্জশিটে। এর মধ্যে গোপন করা সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৪২ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩২ টাকা। এছাড়া তদন্তকালে বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ১ কোটি ৭৬ লাখ ১৬ হাজার ৯৪ টাকা জমা ও উত্তোলনের তথ্য পাওয়া গেছে।
এ দিকে দীর্ঘদিন যাবত নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালান করছেন আলোচিত-সমালোচিত মতিউর রহমান মতি। বাংলাদেশের বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনা পর থেকেই হঠাৎ মতির ভাগ্য পরিবর্তনের চাবিকাঠি ঘুরে যান। তখন থেকে গতি বাড়ে তার টাকা উপার্জনের চাকার। নিজের জনবলকে খাঁটিয়েও তখন থেকেই হয়ে উঠেন অঢেল সম্পাদকের মালিক।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নাসিক ৬নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বিভিন্ন সময় পত্রিকার শিরোনামে দেখা মিলে তাকে। কখনো তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারধর আবার কখনো অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে শিরোনাম বনে যান।
সর্বশেষ দীর্ঘ ১৯ বছর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হয়। তবে তার পর থেকে আর কোনো কমিটি না হওয়ায় যুবলীগের সভাপতি বনে যান মতি। নিজেকে আহ্বায়ক নন সভাপতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি।
রাজনীতিতে অনেকটা সক্রিয় হওয়া তার আধিপত্য বিস্তারের শিকার হয়েছে নানান ব্যবসায়ীসহ জনসাধারণ।
সিদ্ধিরগঞ্জ এরিয়াটি শিল্প এরিয়া হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত। এখানে অবস্থিত আদমজী ইপিজেডটিতে প্রায় ৫৬টি ফ্যাক্টরি রয়েছে জানান ব্যবসায়ীরা। এই ইপিজেডের অভ্যন্তরে মতি ও তার সহযোগীদের আধিপত্য নিয়ে প্রায়সময়ই সংবাদ হয়েছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়।
নাম না বলা স্বত্বে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ইপিজেডের ফ্যাক্টরিগুলোর মধ্যে প্রায় ১৯টিতেই মতির একক ব্যবসা রয়েছে। শুধুই মতিই নন তার ভাই-ভাতিজাগণের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সংরক্ষিত ইপিজেড এর লাইসেন্সবাহী ব্যবসায়ীরা।
এ দিকে টানা দ্বিতীয় বারের মতো কাউন্সিলর হওয়ায় তার রাজত্ব যেন আরও বড় আকারে পরিণত হয়ে পড়েন। তার বিশাল বাহিনীর অত্যাচারে অন্যান্য মানুষজন ঢুকতেও সাহস পান না ইপিজেড এ।
অন্য দিকে তার নাতনি জামাই কিশোর গ্যাং লিডার পানি আক্তারের হামলা, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা থেকে রক্ষা পাননি ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে প্রায় সময়ই শিরোনামে দেখা মিলে তাকে।
গত (১৩ ডিসেম্বর) নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেড এর নির্মাণাধীন ফ্যাক্টরির নির্মাণ সামগ্রীর ২৫ লাখ টাকার লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করেছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪। এ ঘটনার মতির নাতনি জামাই পানি আক্তারসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিলো। তবে আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড