ওবায়দুল কবির সম্রাট, কয়রা (খুলনা)
খুলনার কয়রা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান কোহিনুর ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জোরপূর্বক নিরঞ্জন মুন্ডা নামে এক আদিবাসীর জমির ধান লুটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারটি আদালতে মামলা করেছে। মামলা করায় ইউপি সদস্য ক্ষিপ্ত হয়ে আদিবাসীদের হুমকি দিলে গতকাল রবিবার কয়রা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে নিরঞ্জন মুন্ডা।
কয়রা সদর ইউনিয়নের ১নং কয়রা গ্রামে ওই মুন্ডা পরিবারের বসতভিটা। জমি নিয়ে ইউপি সদস্য কহিনুরের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে নিরঞ্জন মুন্ডার।
নিরঞ্জন মুন্ডার দাবি, তার পৈতৃক সম্পত্তিতে ধান লাগিয়েছিলেন তিনি। তবে সে ধানের সবটাই লুটে নিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য কহিনুর ও তার লোকজন।
তিনি জানান, কয়রা মৌজার এস.এ ৪৮৮ খতিয়ানের ১৬১৫ এবং ১৬৪১ দাগের ১ একর ৩৬ শতক জমি পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘদিন ভোগ দখল এবং চাষাবাদ করে আসছেন তিনি। তবে গত বর্ষা মৌসুমে ধান রোপণের সময় ইউপি সদস্য মোঃ কোহিনুর ইসলাম তার দলবল নিয়ে ওই জমি দখলের চেষ্টা করলে তিনি কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪৩৯/২২ নং একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালত তখন কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে নিরঞ্জন মুন্ডার পক্ষে রায় দিয়ে চাষাবাদ অব্যাহত রাখতে বলেন। এবং ইউপি সদস্যকে জমিতে বেআইনি প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
নিরঞ্জন মুন্ডা বলেন, তার রোপিত পাকা ধান সহ ফসলের আনুমানিক বাজার মূল্য ৯০ হাজার ৪ শত টাকা। কিন্তু গত ১২ ডিসেম্বর (সোমবার) সকালে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ইউপি সদস্য কোহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে ১২/১৩ জন লোক দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী কৃষক নিরঞ্জন মুন্ডা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি একজন নিরীহ কৃষক। কহিনুর মেম্বার এলাকার প্রভাবশালী। মেম্বার লোকজন নিয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আমার জমির ধান কাটতে আসলে আমি আর আমার স্ত্রী বাসন্তী মুন্ডা বাঁধা দিলে আমাদের গলা ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে সব দান লুটে নিয়ে গেছে।
আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই, বলে তিনি কাঁদতে থাকেন। এ ঘটনার পর গত ১৩ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) নিরঞ্জন মুন্ডা কয়রা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ইউপি সদস্য কোহিনুর ইসলাম গাজীকে ১নং আসামি করে ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
নিরঞ্জন মুন্ডার স্ত্রী বাসন্তী মুন্ডা বলেছেন, এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তারা আমার পরিবারের সদস্যদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। এমনকি আমাদের পক্ষে যারা কথা বলেছেন, ইউপি সদস্যের লোকজন তাদেরও হুমকি দিচ্ছে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। রবিবার কয়রা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান কোহিনুর বলেন, আমি আদিবাসীদের ধান কাঁটার সাথে জড়িত নই। মূলত স্থানীয় রুহুল আমিন মুন্সির সাথে ওই জমি নিয়ে নিরঞ্জন মুন্ডার বিরোধ রয়েছে। দুই পক্ষের বিরোধ নিরসনের জন্য আমি ধান নিজ জিম্মায় রেখেছি। নিরঞ্জন ও তার স্ত্রী বাসন্তী মুন্ডাকে গলা ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবিএমএস দোহা বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনের একটি জমি নিয়ে বিরোধের কথা জানতে পেয়েছি। যাতে কেউ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটনাতে না পারেন, সে জন্য ওই এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড