• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হার না মানা এক নারীর গল্প

  মো. মুশফিকুর রহমান (রিজভি), সাতক্ষীরা

২১ অক্টোবর ২০১৮, ২০:০৪
সাতক্ষীরা
৩৯ বছর দেবহাটার ইছামতি নদীতে জাল টেনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন ছকিনা খাতুন

জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক নারী ছকিনা খাতুন। স্বামীর মৃত্যুর পর দীর্ঘ ৩৯ বছর দেবহাটার ইছামতি নদীতে জাল টেনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। মাছ ধরেই তার একমাত্র ছেলের লেখাপড়ার খরচসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করছেন।

ছকিনা খাতুন সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ নাংলা গ্রামের মৃত আকবর আলীর স্ত্রী। একই গ্রামের এক গরীব পরিবারে ১৯৬৮ সালে তার জন্ম। অভাবের তাড়নায় পড়ে ছোটবেলা থেকে নদীতে মাছ ধরতে-ধরতে বেড়ে ওঠেন তিনি। অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে পড়ালোখাও বেশি দূর গড়ায়নি। অল্প বয়সেই হয়ে যায় বিয়ে।

কিন্তু বিয়ের পরও তিনি সুখের সন্ধান পাননি। বিয়ের মাত্র কয়েক বছেরর মধ্যে সন্তান সম্ভবা অবস্থায় তার স্বামী মারা যান। আর স্বামীর মৃত্যুর পর থেকেই মূলত শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম।

ছকিনা খাতুন জানান, তিনি অত্যন্ত গরীব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অভাবের সংসারে অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে বেশিদূর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। ফলে ছোট বেলাতেই তিনি নদীতে জাল টেনে রেণু পোনা ধরা শুরু করেন।

তিনি আরও জানান, রেণু পোনা ধরে তিনি দিনে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা আয় করেন। ঐ রেনু পোনাগুলো তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। সেখান থেকেই তার নদীর সাথেই জীবনের সম্পর্ক হয়ে যায়। পরে তার পিতা মাতা আকবর আলীর সাথে তার বিবাহ দেন। তার বৈবাহিত জীবনে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু তিনি জাল টেনে মাছ ধরা বন্ধ করেননি। কয়েক বছর পরে তার স্বামী মারা যান। আবারও তার জীবনে নেমে আসে দুর্বিসহ অন্ধকার। সংসারের খরচ ও আর ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু নদীতে মাছ ধরেই তার কোনো রকমে সংসারটি চলতে থাকে। জীবনের প্রয়োজনে তিনি আর পিছু ফিরে তাকাননি।

ছকিনা খাতুন জানান, কখনো ভোরবেলা থেকে দুপুর পর্যন্ত আবার কখনো দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে জাল টেনে মাছ ধরেন। এভাবে তিনি একসময় এলাকার অন্য অস্বচ্ছল নারীদের জন্যও অনুকরণীয় হয়ে ওঠেন। তার এলাকার এবং আশেপাশের অনেক মহিলা ও পুরুষ এখন এই ইছামতি নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই নদীর সাথের মিশে আছে তাদের ভালো মন্দ, সংসার ও দৈনন্দিন কাজকর্ম।

সারাদিনের ক্লান্তি শেষে সন্তানের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে পারেন এতেই অনেক খুশি ছকিনা খাতুন। তার আশা তার সন্তান একদিন মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠবে। সেদিন তার সকল দুঃখ-দুর্দশা দূর হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড