• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালালেন ইউপি চেয়ারম্যান

  সাইফুল ইসলাম, শরীয়তপুর

০৫ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:২০
দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালালেন ইউপি চেয়ারম্যান
আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অভিযুক্ত চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হাওলাদার (ফাইল ছবি)

শরীয়তপুর সদর উপজেলায় অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রকল্পে এক ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা জানতে চাইলে শরীয়তপুর সদরের আংগারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও সদস্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আলিমুল মোল্যা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছেন। ওই হামলার সময় তিন সাংবাদিকের মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, মোটরসাইকেলের লুকিংগ্লাস ও হেলমেট ভাঙচুর করা হয়েছে।

এ সময় দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি শরীফুল আলম ইমনসহ পাঁচ সাংবাদিককে জীবন নাশের হুমকি দেয়া হয়েছে।

হামলায় আহত সাংবাদিকরা জানান, কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের অনিয়মের বিষয়ে চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানতে শরীয়তপুরের কর্মরত পাঁচ সাংবাদিক রবিবার দুপুরে আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান। তার কাছে ঘটনাটির সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পরেন।

তখন তাদের ওপর হামলা করেন ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে আলিমুল হক। তারা এখন টেলিভিশন ও চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের মাইক্রোফোন আছার মারেন, ক্যামেরা ফেলে দেন। এ সময় প্রথম আলোর মোটরসাইকেলের লুকিংগ্লাস ও হেলমেট ভেঙ্গে ফেলেন। ওই দুই ব্যক্তি সাংবাদিকদের গালাগালি দিয়ে জীবন নাশের হুমকি ও চাঁদাবাজি মামলায় জরানের ভয় দেখান।

এখন টেলিভিশনের সাংবাদিক কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, দরিদ্র মানুষের জন্য বাস্তবায়ন করা প্রকল্পে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনা নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করি। বিষয়টির বক্তব্য জানতে গেলে চেয়ারম্যান তার লোকজন নিয়ে আমাদের ওপর চরাও হন। পরিষদের একটি কক্ষে আমাদের আটকে হেনস্তা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেব।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গ্রামের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তারই একটি 'অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি'প্রকল্প। ওই প্রকল্পের আওতায় বছরে দুই দফা ৪০ দিন করে দরিদ্র মানুষ কাজ করার সুযোগ পান। প্রকল্পের শ্রমিকরা মাটি কাটা, রাস্তার ঘাস পরিষ্কার, ডোবার কচুরিপানা পরিষ্কারসহ বিভিন্ন কাজ করেন। এ কাজের জন্য শ্রমিকদের প্রতি দিন ৪০০ টাকা মজুরী দেয়া হয়।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তালিক প্রস্তুত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ওই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষ করে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে ওই শ্রমিকদের বিকাশ নম্বরে কাজের টাকা পরিশোধ করা হয়।

নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচির কাজ শুরু হয়েছে। আংগারিয়া ইউনিয়নে ৬৮ শ্রমিকের অনুকূলে ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ২ নম্বর ওয়ার্ডের চরচটাং গ্রামে ১৪ জন শ্রমিক দিয়ে একটি মাটির রাস্তা সংস্কার চলছে। ওই প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছে ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন।

ওই ১৪ শ্রমিকের নামের তালিকায় ইউপি সদস্যর স্ত্রী নাছিমা বেগম, ছেলে আলিমুল হক মোল্যা, মেয়ে সোনিয়া বেগম, ছেলের স্ত্রী হালিমা আক্তার, ভাই আবু সিদ্দিক মোল্যা, ছেলের শাশুড়ি, শ্যালিকাসহ ১১ জনের নাম রয়েছে। তাদের নামের বিকাশ নম্বরে শ্রমিকের মজুরী দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ইউপি সদস্যর পরিবারের কেউ মাটি কাটা শ্রমিকের কাজ করেন না।

২০২১-২০২২ অর্থ বছরে চরচটাং গ্রামে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে ২০ জন শ্রমিকের বিপরীতে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন তার পরিবারের সদস্যদের নামের তালিকার বিকাশ নম্বর দিয়ে ওই টাকা উত্তোলন করেছেন। সেই প্রকল্পে ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি ধান ক্ষেতে ৫০ মিটার রাস্তা সংস্কার করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

নতুন প্রকল্পে কাজকরা শ্রমিক ইকবাল হোসেন বলেন, আমারা সাতজন শ্রমিক ছয় দিন কাজ করে একটি রাস্তা সংস্কার করেছি। আরেকটি রাস্তার ৯০ মিটার সংস্কার করছি। ওই দুটি রাস্তায় আমাদের ৮০ হাজার টাকা বিল দেয়া হবে। ইউপি মেম্বারের ছেলে আলিমুল চুক্তি অনুযায়ী আমাদের টাকা দিচ্ছেন।

ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে বলেন। এছাড়া কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পে কোনো অবস্থায় এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম থাকা যাবে না। এক্ষেত্রে ইউপি মেম্বারের কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, এক ইউপি চেয়ারম্যান কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছেন এমন তথ্য পেয়েছি। তারা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড