• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নিয়ম মেনে চলছে না ইট ভাটা, দেদারসে পুড়ছে কাঠ

  সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ

০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:৪১
নিয়ম মেনে চলছে না ইট ভাটা, দেদারসে পুড়ছে কাঠ

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় গড়ে উঠেছে ৬১টি ইটভাটা। যদিও পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য বলছে- এর মধ্যে ৩১টিরই নেই কোনো অনুমোদন। নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এসব ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে গাছপালা। ভাটার কালো ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

নিয়ম অনুযায়ী ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা পোড়ানোর কথা। তবে ইটভাটা মালিক সমিতির দাবি, কয়লা সংকটের কারণে তারা জ্বালানি কাঠ পোড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। আর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, কয়লার পরিবর্তে জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।

অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইটভাটার জন্য নামকরা এই রায়গঞ্জে প্রতিবছরই নতুন নতুন ভাটা তৈরি হচ্ছে। জেলার মোট ১৪০টি ইটভাটার ৬১টিই গড়ে উঠেছে এখানে। আর পুরো সিরাজগঞ্জে মাত্র ৪৬টি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে। বাকিগুলো চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই। এছাড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইট পোড়ানোর লাইন্সেস অনেকের থাকলেও অনেক ইটভাটা মলিক তা বছর বছর নবায়ন করেন না।

ইটভাটা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ করে কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর পরিমাণ বেড়ে গেছে। ফসলি জমির উপ বিভাগের মাটি কেটে তৈরি হচ্ছে ইট। এতে জমি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। ইটভাটার নির্গত ধোঁয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে শিশুসহ সব বয়সী মানুষ। হুমকির মুখে পড়ছে জীব-বৈচিত্র্য।

ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা সরকার বলেন, প্রতি রাউন্ড ইট পেড়াতে প্রচুর পরিমাণে কয়লা লাগে। বর্তমানে জোগান কম থাকায় টাকা দিয়ে কয়লা পাওয়া যায়। আর কয়লার দাম বেড়েছে তিন গুণ। বাধ্য হয়ে ইট পোড়াতে কাঠের ব্যবহার করা হচ্ছে। মৌসুমের এই সময়ে আমরা প্রচুর পরিমাণে ইট তৈরি করি। তাই এই সময় জ্বালানির প্রয়োজন বেশি।

এল আর ব্রিকসের মালিক ফারুক হোসেন বলেন, কয়লার দাম তিন থেকে চার গুণ বেড়েছে। বাজারে পাওয়াও যায় না। এক মৌসুমে সাত থেকে আট লাখ ইট পোড়াতে প্রায় ১৩০ টন কয়লা লাগে। এক হাজার টন কয়লার দাম আগে ছিল ৯০ লাখ টাকা, এখন কিনতে হচ্ছে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকায়।

রায়গঞ্জ উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ খান বলেন, পরিবেশের ক্ষতি তো হচ্ছেই। কিন্তু এ ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই।

রায়গঞ্জ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাচ্চু বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সমন্বয় সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রায়গঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা দেওয়ান শহিদুজ্জামান জানান, তারা অভিযানে নামবেন। ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ পোড়ালেই জরিমানাসহ ইটভাটা বন্ধের সুপারিশ করবেন তারা।

রায়গঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানজিল পারভেজ জানান, এরই মধ্যে তিনটি ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়েছে। ইটভাটায় জ্বালানি কাঠ ব্যবহার রোধে মালিকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে যারা শর্ত ভাঙবেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান থাকবে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহীর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ পরিচালক মেজবাহুল আলম বলেন, ভাটাগুলোর হালনাগাদ তালিকা করা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, যাচাই-বাছাইয়ের সময় তারা ছাড়পত্র পাবে না।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড