• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মাদরাসার বাথরুমে শিশুর লাশ, মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

  মনিরুজ্জামান, নরসিংদী

০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:৩৬
মাদরাসার বাথরুমে শিশুর লাশ, মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা
উদ্ধারকৃত মরদেহ (ফাইল ছবি)

নরসিংদীর মাধবদীতে মাইশা আক্তার (১০) নামে এক শিশু শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

গেল বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) বিকালে নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন কুঁড়েরপাড় গ্রামের 'জামিয়া ক্বওমিয়া মহিলা মাদরাসার বাথরুম থেকে আবাসিক শাখার দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইশার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

সে মাধবদীর ভগীরথপুর গ্রামের মো. নেছার উদ্দিনের মেয়ে।

এর আগে চলতি বছরের ১৯ অক্টোবর একই মাদরাসার বাথরুম থেকে আফরিন আক্তার (১৪) নামে আরও একজন আবাসিক শাখার শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের দাবি ফাঁসিতে ঝুলে তারা আত্মহত্যা করেছে। যদিও মাইশার পরিবারের দাবি তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তারা মাইশার শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানান।

তারা আরও জানান, মাইশার মৃত্যুর ঘটনায় মাদরাসা কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর না দিয়ে তারা নিজেরাই লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।

জামিয়া ক্বওমিয়া মহিলা মাদরাসার মুহতামীম মুফতি আহসানউল্লাহ বলেন, আসরের নামাজের সময় ছাত্রীরা এস্তেঞ্জা করতে গিয়ে মাইশাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে মাদরাসার হুজুর ও খাদেমকে জানায়। পরে খবর পেয়ে শিক্ষকদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি মাইশাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার বাদ আসর ভগীরথীপুর কবরস্থানে মাইশার দাফন সম্পন্ন করা হয়।

মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা সামছুল আলম বকুল বলেন, আমি শেখেরচর হাটে ছিলাম। শিক্ষকরা আমাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মেয়েটিকে মৃত ঘোষণা করে। তবে ঘটনাটি কিভাবে ঘটলো আমরা বলতে পারছি না।

এ ব্যাপারে শিশু মাইশার চাচা মাওলানা মোছলেহ উদ্দিন জানান, মাইশার বাবা নেছার উদ্দিন সকালে মেয়েকে মাদরাসায় গিয়ে নাস্তা করিয়ে রেখে আসে। পরে দুপুরে পারিবারিক একটি দাওয়াতে মাইশার পরিবারসহ আমরা আত্মীয়র বাড়িতে যাই। সেখানে বিকাল ৪টার দিকে মাদরাসার হুজুরদের ফোন থেকে কল করে জানানো হয় আপনার মেয়ে অসুস্থ। তাকে আমরা নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসছি আপনারা হাসপাতালে আসেন। পরে আমার পরিবারের লোকজন হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পায় মাইশা মৃত।

কর্তব্যরত ডাক্তার জানায় মাইশাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মাইশার চাচা আরও বলেন নিহতের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ১০ বছরের শিশু বাচ্চা কিভাবে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করতে পারে? নিশ্চয়ই তাকে হত্যা করা হয়েছে।

মাইশার ফুফা আইনুল হক জানান আমরা খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে মাইশার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম দেখতে পাই। দেখেই বুঝা যায় এটা একটি হত্যা। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।

নিহত মাইশার মা বলেন, আমার মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তার সারা শরীরে মাইরের চিহ্ন রয়েছে। আমি খুনের বিচার চাই। মাদরাসার হুজুরই এই ঘটনার সাথে জড়িত। আমি এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। নিহতের বাবা নেছার উদ্দিনও তার মেয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন।

সমাজকর্মী সুমাইয়া আক্তার বলেন, মাদরাসাটিতে দেড় মাসের ব্যবধানে পরপর দুইজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা রহস্যজনক। দুইজন শিক্ষার্থীই মাদরাসাটির আবাসিক শাখার শিক্ষার্থী এবং দুজনের লাশ মাদরাসাটির মুখোমুখি দুটি বাথরুম থেকে উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সেইসাথে তিনি প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানান।

রাতে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কে এম শহিদুল ইসলাম সোহাগ ও মাধবদী থানার অফিসার ইনচার্জ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

ঘটনা সম্পর্কে মাধবদী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. রকিবুজ্জামান মুঠোফোনে জানান আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ময়নাতদন্তে রিপোর্ট আসার পর প্রকৃত ঘটনা বলা যাবে বলে ও জানান তিনি।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড