• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কর্মমুখর সময় কাটছে শুঁটকি চাতালের শ্রমিকদের

  সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ

০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১৬
কর্মমুখর সময় কাটছে শুঁটকি চাতালের শ্রমিকদের
ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন শুঁটকি চাতালের শ্রমিকরা (ছবি : অধিকার)

চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও উল্লাপাড়ায় শুঁটকি তৈরির ধুম পড়েছে। ছোট বড় প্রায় শতাধিক চাতালে এ শুটকি তৈরির কার্যক্রম চলছে। চলতি বছর প্রায় ২৪০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছে মৎস্য অফিস।

প্রকারভেদে তিনশ থেকে সাতশ টাকা কেজি হিসেবে ১০ কোটি টাকার বেশি বিকিকিনি হবে। বর্তমানে শুটকি চাতালগুলোতে কেউবা মাছ কাটছে কেউবা মাছগুলো রোদের তাপে নাড়িয়ে শুকিয়ে নিচ্ছে কেউবা প্যাকেট জাত করছে। শুটকি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততার কারণে শুটকি চাতালগুলো কর্মমুখর হয়ে ওঠেছে। শুটকি চাতালে কাজ করে সহস্রাধিক নারী-পুরুষের মৌসুমি কর্মসংস্থান হয়েছে।

মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর শীত শুরু হবার সময় চলনবিলাঞ্চলের নদী-খাল-বিলের পানি কমে যায়। এত প্রচুর পরিমাণ দেশীয় মাছ ধরা পড়ে। ছোট-মাঝারী ধরনের মাছগুলোকে শুটকি ব্যবসায়ীরা কমমূল্যে কিনে চাতালে শুকিয়ে শুটকি তৈরি প্যাকেটজাত করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকেন।

সিরাজগঞ্জের তৈরি শুটকি জামালপুর, চিটাগাং ও সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন আড়তে চলে যায়। সেখান থেকে দেশের বাইরেই চলে যায়। এবছর ইতোমধ্যে উল্লাপাড়ায় ১২৬টন এবং তাড়াশে প্রায় ৯৫ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন হয়েছে। জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত শুটকি তৈরির কার্যক্রম চলবে। এতে প্রায় ২৪০ টন শুটকি উৎপাদন হবে। তাড়াশ ও উল্লাপাড়ায় প্রায় ৭০-৮০ জন শুটকি ব্যবসায়ী রয়েছে। ছোটবড় অন্তত শতাধিক চাতাল রয়েছে। প্রতি চাতালে অন্তত ১০-১৫ জন করে নারী-পুরুষ কাজ করে। এতে সহস্রাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

শুঁটকি ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, প্রতিমণ কাঁচা মাছ পাঁচ হাজার থেকে আট হাজার টাকা মন দরে কেনা হয়। পরে প্রতি তিন কেজি কাঁচা মাছ থেকে এক কেজি শুঁটকি তৈরি করা হয়। চাতালগুলোতে টেংরা, পুঁটি, খলশে, বাতাসি, চ্যালা, মলা, ঢেলা, টাকি, গুতুম, চিংড়ি, টাকি, গুছি, চান্দা, বোয়াল ও শৈল মাছসহ ছোট বড় অসংখ্য মিঠাপানির দেশীয় মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরি হয়। জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে শুঁটকি শুকানোর কাজ।

তিনি আরও জানান, সুস্বাদু হওয়ায় চলনবিলের মাছের শুঁটকির চাহিদা সারা দেশে।

শুঁটকি ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান জানান, চলনবিলে শুঁটকি তৈরির পর বাজারজাত করতে প্রায় একমাস সময় লাগে। শুকানোর পর প্যাকেটজাত করা হয়। তারপর শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। আবার অনেক ব্যবসায়ী চাতাল থেকেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেন শুঁটকি।

মহিষলুটি বাজারের ব্যবসায়ী আলম প্রামাণিক বলেন, শুটকি ব্যবসায় করতে লাখ লাখ টাকা চালান লাগে। চালানোর অভাবে ভালভাবে ব্যবসা করা যায় না। এটি একটি ভাল ব্যবসা হলেও সরকারের কোন প্রণোদনা নেই। কোন ব্যাংক বা ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান নেই। ফলে গতি পাচ্ছে না শুটকি ব্যবসা। তার মতে সরকারি সহায়তা পেলে শুঁটকির বাজার আরও সম্প্রসারিত হতো। এমনকি রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিদেশেও রপ্তানি করা যেতে পারত।

তিনি আরও জানান, একটি চাতালে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করে সংসার চালিয়ে থাকে। সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ কারণে সরকারের শুটকি তৈরি ব্যবসায়ীদের প্রতি নজর দেয়া উচিত।

ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, চলনবিলের তৈরি শুটকি অত্যন্ত সুস্বাদু। এখানকার তৈরি শুটকি সৈয়দপুর, রংপুর, দিনাজপুর, ঢাকা, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। প্রকারভেদে এখানকার শুটকি তিনশ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত কেজি ধরে বিক্রি হয়ে থাকে।

শুটকি কাজে নিয়োজিত আয়েশা খাতুন, হাফিজা খাতুন ও খাদিজা খাতুন বলেন, ভোরে উঠেই চাতালে চলে যান। শুঁটকি রোদে দিয়ে বাড়ি ফিরে রান্নাবান্না করে আবার যান শুঁটকি উঠিয়ে রাখতে। এ কাজে প্রতিদিনের মজুরি হিসেবে পান ২৫০ টাকা। তারা আরও জানান, কৃষি কাজের পাশাপাশি শীতের আগে-পরে প্রায় চারমাস শুটকির চাতালে কাজ করে থাকি। যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার খরচ ও ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার জোগান দেয়া যায়।

সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান জানান, মাছের উৎপাদন একটু কম থাকলেও চলতি বছর ২৪০ মেট্রিক শুটকি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যার দাম হবে প্রায় ১০ কোটি টাকার উপরে।

তিনি আরও জানান, ভালো মানের এবং কেমিক্যালমুক্ত শুটকি উৎপাদনে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়াও শুটকি ব্যবসা প্রসারের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন হলে শুটকি ব্যবসায়ী ও এর সাথে যেসকল শ্রমিকরা জড়িত তাদের উপকৃত হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড