রফিক, গাইবান্ধা
খাল-বিলে পানি, কচুরিয়াপানা আর মাছ থাকলেও এখন চাষ হচ্ছে সবজি। কথাটি শুনতে অবাক লাগলেও পানির উপরে ভাসমান পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করছেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কৃষকরা। উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকের মধ্যে বেশ সারা ফেলছে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ। অনেকে কৃষক হয়েছেন স্বাবলম্বী।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের ঘেঁষেই সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের ঝাড়াবর্ষা বিল। এই বিলে এক সময় এলাকার মানুষ মাছ ধরলেও এখন পানি ওপরে ভাসছে ভেলা। সেই ভেলার ওপর দুলছে কৃষকের কলমি শাক, লালশাক, পুইশাকসহ বিভিন্ন রকমের সবজি। পরপর ভাসমান ৮টি বেডে বেশ ফলন হয়েছে সবজির।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ভাসমান সবজি চাষে সহযোগিতা করছে মেলোনাইস সেন্ট্রাল কমিটি বাংলাদেশ (এমসিসিবি) ও উন্নয়ন সংস্থা, উদয়ন স্বাবলম্বী সংস্থা নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। জেলার নিম্ন এলাকাগুলো বেশি সময় ধরে পানিতে ভরে থাকে। ফলে ওই এলাকার কৃষকরা ইচ্ছা থাকলেও সবজিসহ অনেক ফসল উৎপাদন থেকে পিছিয়ে থাকেন।
সম্প্রতি সংস্থার ফুড সিকিউরিটি প্রজেক্টের আওতায় ভাসমান বেডে সবজি চাষে উদ্যোগ নিয়েছেন সংস্থাটি। ৫/৬টি কলাগাছের ভেলা তৈরি করে তার ওপরে কচুরিপানা পেচিয়ে বেড তৈরি করা হয়েছে। তার সেই কচুরিয়াপানা আর হালমা মাটি ছিটিয়ে তৈরি হয় ভাসমান বেড। বেডের উপর বিভিন্ন জাতের বীজ রোপণ করা হয়।
বিলকিস নামে এক সবজি চাষি বলেন, বিলের মধ্যে বেড তৈরি করে তাতে কলমিশাক, লালশাক, পুইশাক ডাঁটাশাকের বীজ রোপণ করি। কিছু দিনের মধ্যেই তা গজাতে থাকে। বেশ ভালো ফলন হয়েছে। নিজের সবজির চাহিদা পূরণ করেও সপ্তাহে ৩/৪শ টাকা বিক্রি করা যায়।
সবজি চাষি তহমিনা বেগম বলেন আগে কখনো এভাবে সবজি চাষ করিনি। নতুন আবাদ করছি। খুবই ভালো এটি। খাওয়ার পাশাপাশি বিক্রি করে আয় করা যায়। সার ও কীটনাশক কম লাগে। এলাকায় ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে আগ্রহ বাড়ছে।
উদয়ন স্বাবলম্বী সংস্থার ফিল্ড অর্গানাইজার মমতা খাতুন বলেন বছরের বেশি সময় ধরে নিম্ন অঞ্চলগুলো বন্যা ও বৃষ্টির পানি জমে থাকে। ফলে উপযুক্ত সময়ে কৃষকরা সবজি চাষ করতে পারে না। তাই ভাসমান পদ্ধতিতে গাইবান্ধাসহ উত্তরের ১১টি জেলায় এ সবজি চাষ শুরু করা হয়েছে। এটি পরীক্ষামূলক চলছে। এ উদ্যোগ সফল হয়েছে। এখান থেকে একটি পরিবার সবজির চাহিদা পূরণ হচ্ছে, একই সাথে শাক-সবজি বিক্রি করে সংসারে বাড়তি আয় করছেন কৃষকরা।
তিনি আরও বলেন, দুইটি স্তরে তৈরি হয় এই বেড। লম্বায় ২৫-৩০ ফুট আর প্রস্তর ৪-৫ ফুট হয়ে থাকে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বেড তৈরি ও বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। এ জেলায় ২৪ টি বেডে সবজি চাষ করা হচ্ছে। একটি বেডে কয়েক প্রকার সবজি চাষ করা যায়।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বেলাল উদ্দিন জানান, এ পদ্ধতিতে জেলায় এটি প্রথম সবজি চাষ। আমরা তদারকি করছি। ভাসমান সবজি চাষে অনেক কৃষক উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। সবজি চাষে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড