তরিকুল ইসলাম তরুন, কুষ্টিয়া
২৫ কোটি ইটে আড়াইশো কোটি টাকার বার্ষিক বাণিজ্য কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে। অন্তত ২৮টি ইট ভাটায় নষ্ট করেছে অন্তত ২০টি বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। নামমাত্র দু-একটি কয়লার ভাটা থাকলেও বাকিসব চলে গাছ পুড়িয়ে, কাটা হয় ফসলী মাটি। কোনো কোনো উদ্যোক্তা কয়লার ভাটা বন্ধ রেখে লাগামহীন চালাচ্ছেন গাছ পোড়ানো ভাটা। ইটের ভাটাতেই বসানো হয়েছে কাঠ কাটা কল।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় সামষ্টিক অর্থনীতি ও পরিবেশ ভারসাম্যে বিরূপ প্রভাব এনে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেদারসে চালানো হচ্ছে ইটের ভাটা, যেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শিশুসহ শত-শত মানুষ।
উপজেলার স্বরূপপুর-বাজুডাঙ্গা এলাকায় ৩টি ইটের ভাটায় সরেজমিনে কাঠ পুড়তে দেখা যায়। মজুদ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ কাটা গাছ। এসব ইট ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে ফসলের ক্ষেতেই। এখানকার নুরী ব্রিক্সের স্বত্বাধিকারী বজলুর রহমান ওরফে কটা বলেন, আমার কোন কাগজপত্র নাই এভাবেই চালিয়ে যাচ্ছি, ব্যবসা চালাতে কোন সমস্যা হয়না।
আরেক দিকে উপজেলার শাদীপুর ফসলের মাঠ এখন ইট ভাটার দখলে। এই এলাকায় ইটের ভাটা পাঁচটি। যার মধ্যে একটিতে কয়লার জ্বালানী আয়োজন থাকলেও তা অব্যবহৃত। ওই ভাটাতেই বসানো হয়েছে কাঠ ফাঁড়ার মেশিন। এখানে কমবেশি সব ভাটাতেই স' মিল বসিয়ে গাছ কেটে জ্বালানী তৈরি করা হয়। আল সালেহ লাইফ লাইন ব্রিক্সের স্বত্বাধিকারী মামুন বলেন, আমার দু'টি ভাটা একটি কয়লায় চলে আরেকটি খড়িতে। তবে, তার ভাটায় কয়লার মজুদ না থাকলেও আছে কাটা গাছের বিশাল মজুদ।
বিশ্বাস ব্রিক্সের পরিচালক আনোয়ারুল জানান, মালিকদের ঐক্য নাই, যে যার মতো ছন্নছাড়া হয়ে ব্যবসা করছে। ইতিবাচক ভাবে পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো অভিভাবক নেই যে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
দৌলতপুরের চক দৌলতপুর এলাকার রমজান আলীর নুরু ব্রিক্স ছাড়াও দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় চলছে ৪টি ইটের ভাটা। সবার অবস্থাই পরিবেশ বিপর্যয়ে বেগতিক।
ডাংমড়কা এলাকার তিনটি ফসলের মাঠে ইট ভাটা চারটি। ইট পোড়াতে সবাই নির্ভরশীল ফসলের ক্ষেতের মাটি এবং কাটা গাছের ওপর। এই এলাকায় নতুন ভাটা মালিক মোফাজ্জল হকও এগিয়েছে একই পথে, প্রথম লটেই গাছ পুড়িয়ে শুরু তাদের। ইতোমধ্যেই মজুদ করা হয়েছে কাটা গাছ।
দৌলতপুর থানা থেকে রিফায়েতপুরের পথে উদ্যোক্তা ওলি এবং নজরুলের দুটি ভাটা। নজরুলের ভাটায় কয়লার আয়োজন থাকলেও ওলির ভাটা খড়ি নির্ভর। গলাকাটি এলাকায় তিনটি, বড়গাংদিয়ায় একটি, আদাবাড়িয়ায় একটি, খলিশাকুন্ডীতে একটি এবং জয়রামপুর-কল্যাণপুর এলাকায় তিনটি ইট ভাটা চলছে ফসলের ক্ষেতে।
চলতি মাসেও দাড়ের পাড়া, গোবর গাড়া, নারায়নপুর, বড়গাংদিয়া এলাকায় ফসলের ক্ষেতের মাটি কাটা হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩০ বিঘা জমিতে।
সংগৃহীত তথ্যে বলছে, কুষ্টিয়ার এই দৌলতপুর উপজেলায় ইট পোড়ানোর একেক মৌসুমেই কাটা গাছের প্রয়োজন হয় কমের ঘরে এক লাখ টন, যার চলতি বাজারমূল্য অন্তত ৪০ কোটি টাকা।
দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, এসব ইট ভাটা দীর্ঘদিন ধরে চলছে, আমি দায়িত্বে আসার আগেই। তখন কিভাবে হয়েছে বলতে পারবো না। সমস্যাটি সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারি প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে, এ বিষয়ে আশ্বস্ত করছি।
দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, ইট ভাটার কালো ধোঁয়া এজমাসহ ফুসফুসের নানা জটিলতা তৈরি করে। দৌলতপুরে এধরণের রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, দৌলতপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়া ইট ভাটা একটি, বাঁকি ২৮টি অবৈধ। সবাইকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড