নাসিম আজাদ, পলাশ (নরসিংদী)
মুজিব বর্ষে অসহায়, হত-দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপহারের ঘরগুলো যেন এখন সুখের স্বর্গ। ছোট্ট ঘরটির একটুকরো জায়গায় শাক-সবজি, ফলমূল ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে সবুজ রঙে রাঙিয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর পুরো চারপাশ।
দেখতেও নয়নাভিরাম, মহা খুশি ও আনন্দ উল্লাসে দিন যাপন করছেন পরিবারগুলো। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে ওরা এখন সুখেই আছে। এখন আর নানান টেনশনে দিন কাটে না। সাহেবের কটু কথা শুনতে হয় না।
বলছিলাম পলাশ উপজেলার মাঝের চর গ্রামের পাঁচ সন্তানের জনক-জননী ষাট বছর বয়সী গৃহহীন-ভূমিহীন কাজল মিয়া আর তার স্ত্রী পঞ্চাষোর্ধ আলেছা বেগমের সংসার জীবনের সুখ-দুঃখের কথা।
কাজল মিয়ার নিজের বাড়িঘর বলতে কিছুই ছিল না। তার স্ত্রী আলেছা বেগমের বাপের বাড়িতেও ঠাঁই পাবার মতো এক খণ্ড জমি ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার জমিসহ সেমি পাকা একক গৃহ পেয়ে তারা এখন সুখেই আছে। তারা এখন পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের ‘মাঝের চর আশ্রয়ণ প্রকল্প’ এর স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে সুখেই দিন যাপন করছে।
নতুন বাড়িতে উঠে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। অন্যান্যদের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন। এই প্রকল্পে ২১টি গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার বসবাস করছে। ভিন্ন ভিন্ন পরিবার হলেও তারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের আত্মীয় হয়ে গেছেন। বাড়ির আঙিনা সমূহে বৃক্ষের সমারোহ দেখে মনে হয় চির চেনা পল্লী মায়ের সবুজে ঘেরা এ যেন ২১টি পরিবারের এক পল্লীগ্রাম। ভূমি এবং ঘর পেয়ে তারা খুবই খুশি। কারণ, এখন মাস শেষে বাড়ি ভাড়ার চিন্তা করতে হয় না।
খাস জমিতে বাচারি করে থাকতো বলে প্রভাবশালীদের তাফালিং দেখতে হয়। ভাসমান জীবনের অবসান ঘটিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা করে দিয়েছেন বলে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাগণ।
মাছ শিকারি (জেলে) কাজল মিয়া সন্তান-সন্ততি নিয়ে থাকতো পাশের টেংগর পাড়া গ্রামের ঢাকায় বসবাসরত টিটু মোল্লা বাড়িতে। বিশাল বাড়ি ফলের বাগান, বাড়িঘর দেখেশুনে রাখা ছিল তার কাজ। প্রতিটি মুহূর্ত তাকে এবং তার স্ত্রীকে টেনশনে থাকতে হতো। বাড়িত কেউ কখনো গিয়ে না জানি কি ক্ষতি করে ফেলে বা গাছের ফলফলাদি নষ্ট করে ফেলে। যার জন্য মালিকের গালমন্দ শুনতে হবে। এখন তাদের কোনো টেনশন নাই। সুখেই আছে তারা। শুধু তারাই নন, এই নতুন পল্লীর নারী-পুরুষ প্রায় সকলেই কোনো না কোনো কাজ করে আয় রোজগার করে চলছে।
এই প্রকল্পের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানে মাছ শিকারি ছাড়াও রয়েছে দিন মজুর,রাজমিস্ত্রি,যোগালি, বর্গাচাষি, পাওয়ার লুম শ্রমিক ও অটোরিকসা চালক। এখানে সবাই কর্মজীবী। গৃহিণীরাও কোনো না কোনো কাজ করে সাংসারিক আয় বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করছে।
এই পল্লীর বাসিন্দা হেনা আক্তার ভাগীতে অন্যের গাভী পালন করে বছরে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বাড়তি আয় করার সুযোগ হয়েছে নিজ বাড়ি-ঘর পেয়েছে বলে। তার স্বামী কিরণ মিয়া রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। বাড়ি ভাড়া দিতে হয় না বলে এখন সংসারজীবনে তারাও সুখী। তাদের দুই ছেলে। পাশের ক্ষুদি মাহমুদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তারা পড়ছে।
পলাশ উপজেলার আশ্রয় প্রকল্পের মধ্যে বেশিরভাগ ঘর রয়েছে উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নে দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্প। এখানকার ইউপি চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলাম গাজী বলেন, আমি প্রায় সময়ই সেখানে যাই, তাদের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নেই। প্রতি ইদেও আমি উপস্থিত থেকে তাদের মধ্যে চাল, ডাল, তৈল, সেমাই, চিনিসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী বিতরণ করি। এমনকি গোস্তের ব্যবস্থাও করে দেই। আলহামদুলিল্লাহ, এখানে বসবাসরত পরিবারগুলো সুখে শান্তিতেই দিন কাটাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ় প্রত্যয়ের সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১ম ও ২য় পর্যায়ে নরসিংদী জেলায় মোট ২৮৭টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। ৩য় পর্যায়ে জেলার ৬টি উপজেলায় ৪১৯টি ঘর নির্মাণের অনুমোদন পাওয়ার পর নির্মাণ কাজ চলছে।
এর মধ্যে পলাশ উপজেলায় ৬৩টি ঘর রয়েছে। এই বছরের ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশব্যাপী ২৬২২৯ জন উপকারভোগীর মধ্যে ভূমি ও গৃহ হস্তান্তর করেন। এর মধ্যে পলাশ উপজেলায় ৪২টিসহ জেলায় বিতরণ করেন জমিসহ ২৫৬টি ঘর।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড