• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাজারে উঠছে পানিফল, লাভের আশায় কৃষকরা

  কে এম রেজাউল করিম, দেবহাটা (সাতক্ষীরা)

২৪ নভেম্বর ২০২২, ০৯:৫২
বাজারে উঠছে পানিফল, লাভের আশায় কৃষকরা

সাতক্ষীরার বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে পানি ফল। অন্য ফলের পাশাপাশি পানি ফল বাজার দখল করতে শুরু করায় দিনে দিনে চাহিদা বাড়ছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফলটি ছোট বড় সব মানুষের পছন্দের। এ ফলের ইংরেজি নাম ‘water-chestnut’ এবং উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম ‘natans’।

পানি ফলের আদিনিবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা হলেও এর প্রথম দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় পানি ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। পানিফল একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। জলাশয় ও বিল-ঝিলে এ ফলটি জন্মে। পানি ফলের এক একটি গাছ প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানি ফলের স্থানীয় নাম ‘সিংড়া’।

ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ফলচাষ শুরু হয় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এবং ফল সংগ্রহ করা হয় অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে। পানিফল কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ এবং পরিপক্ব হলে কালো রং ধারণ করে। ফলটির পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিন্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাসঁ। কাঁচা ফলের নরম শাসঁ খেতে বেশ সুস্বাদু। প্রতি ১০০ গ্রাম পানিফলে ৮৪.৯ গ্রাম পানি, ০.৯ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ২.৫ গ্রাম আমিষ, ০.৯ গ্রাম চর্বি, ১১.৭ গ্রাম শর্করা, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৮ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.১১ মিলি গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ ও ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।

তাছাড়া এ ফলে ৬৫ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি থাকে। পানিফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে। দেহের প্রয়োজনীয় খনিজ লবণগুলোর মধ্যে ক্যালসিয়াম অন্যতম। ফসফরাসের সহযোগিতায় শরীরের হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করা ক্যালসিয়ামের প্রধান কাজ। লৌহ অত্যন্ত জরুরি একটি খনিজ লবণ। লৌহের অভাবে মানবদেহে অপুষ্টিজনিত রক্তশূণ্যতা দেখা দেয়। ছোট ছেলেমেয়েরা এবং গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েরা অতি সহজে রোগের শিকার হয়।

পানি ফলে যথেষ্ট পরিমাণে লৌহ পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম পানিফলে ভিটামিন ‘সি’ এর পরিমাণ ১৫ মিলিগ্রাম আর শসাতে আছে ভিটামিন ‘সি’ মাত্র ৫ মিলিগ্রাম। ভিটামিন ‘সি’ শরীরে চামড়া, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য রক্ষায় অপরিহার্য। তাছাড়া ভিটামিন ‘সি’ অন্ত্রে লৌহ শোষণে সাহায্য করে। বাংলাদেশের শতকরা ৯৩ ভাগ পরিবার ভিটামিন ‘সি’ এর অভাবে ভুগছে। খাদ্যে ভিটামিন ‘সি’ এর ঘাটতি বিবেচনা করে এ ফলের প্রতি আমাদের অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

পানি ফল কাঁচা খাওয়া হয়, তবে সিদ্ধ করেও খাওয়া যায়। কাঁচা পানিফল দুর্বল ও অসুস্থ মানুষের জন্য সহজপাচ্য খাবার। ফলের শুকনো শাঁস রুটি করে খেলে এলার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগ উপশম হয়। পিত্ত্বপ্রদাহ, উদরাময় ও তলপেটের ব্যথা উপশমে পানিফল খাওয়ায় প্রচলন রয়েছে। বিছাপোকা কামড়ের যন্ত্রণায় থেঁতলানো কাঁচা ফলের প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। পানিফল খুব লাভজনক একটি ফসল। এর উৎপাদন খরচ খুব কম।

সাতক্ষীরা জেলার সদর, কলারোয়া, দেবহাটা, কালীগঞ্জ, আশাশুনি, সদরের আংশিক ও শ্যামনগর উপজেলায় জলাবদ্ধ এলাকার চাষিরা পানিফল চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। ফলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ ফলের চাষ। সেই সাথে বাড়ছে ফলটির জনপ্রিয়তা। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর এ ফল সারা দেশে ফল হিসেবে পরিচিতি না থাকলেও দিনে-দিনে এর চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।

পানি চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছর দেবহাটাসহ সাতক্ষীরা জেলার চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মৌসুমি ফল হিসেবে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন উপজেলাতে ব্যাপক পরিমাণ চাষ হচ্ছে পানিফলের। জেলা কৃষি খামার বাড়ির তথ্য মতে এবছর সাতক্ষীরার উপজেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে এ চাষাবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ১৬শ জন কৃষক এ চাষের সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছেন। পানি ফল চাষি শাহিনুর ইসলাম বলেন, বর্তমানে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে পানিফল বিক্রি করছি। এছাড়া ২ হাজার থেকে ২৫শত টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। ভালো ফলন হলে খরচ বাদ দিয়ে লাভবান হব।

পানি ফল ব্যবসায়ী বাবু সরদার বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে পানিফলের ব্যবসা করে আসছি। মৌসুমি এ ফলে ভাল লাভ পাওয়া যায়। আমি এই ফলের মৌসুমে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, চিটাগাং, সিলেট, রাজশাহী, বেনাপোল, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ফল রপ্তানি করি।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক ড. জামাল উদ্দীন জানান, সাতক্ষীরা জেলায় পানি ফল চাষের বিপুল সম্ভাবনা আছে। এখানকার জলাভূমি ও পরিবেশ পানি ফল চাষের জন্য উপযুক্ত। সাতক্ষীরা জেলায় পানির ফল চাষের মাধ্যমে বেকারত্ব নিরসনসহ বিপুল পরিমাণে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড