নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে তানজিনা ইসলাম (২৭) নামে এক গৃহবধূকে বাড়ির ৩য় তলা বাসা থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামী মাসুদুর রহমান এর বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে শহরের ভৈরব বাজারের বাতাসাপট্টি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
তানজিনা পৌর শহরের চন্ডিবের এলাকার মৃত মাজহারুল ইসলামের মেয়ে ও অভিযুক্ত স্বামী মাসুদুর রহমান পৌর শহরের বাতাসাপট্টি এলাকার আবুল খায়েরের ছেলে।
এ দিকে গৃহবধূ তানজিনার পরিবারের দাবি- হত্যা, অপর দিকে স্বামীর পরিবারের দাবি আত্মহত্যা।
তানজিনার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে দুপক্ষের সম্মতিতে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তানজিনাকে নানানভাবে অত্যাচার করছে স্বামী মাসুদুর রহমানসহ তার পরিবার। দীর্ঘ ১০ বছরের সংসারে ৫ বছরের ছেলে তাহমিদ ও ২ বছরের মেয়ে তাসলিম নামে দুটি সন্তান রয়েছে।
ঘটনার দিন মঙ্গলবার দুপুর ১টায় পরিবারের কাছে এলে তারা অসুস্থ তানজিনাকে ডাক্তার দেখিয়ে দেয় বলে জানায় পরিবার। শ্বশুরবাড়ি ফিরে যাওয়ার পর দুপুর আড়াইটার দিকে তারা জানতে পারে তানজিনা ৩য় তলা বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছে। পরে পরিবার খবর পেয়ে আনোয়ারা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে তানজিনার মৃত দেখতে পায়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।
এ বিষয়ে তানজিনার মাতা শাহনোয়ারা অভিযোগ করে বলেন, দশ বছর আগে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। নানান অত্যাচার ও অভিযোগের পরও অনেক কষ্টে মেয়ে আমার সংসার করে যাচ্ছে। আমার ছেলেরা জোর করে আমার মেয়েকে এ কষ্টের সংসার করতে বাধ্য করেছে। আমি আমার ছেলেদেরকে বলেছি আমার মেয়েকে তারা মেরে ফেলবে। আজ তাই সত্যি হলো, আমার বুক খালি হলো।
কান্নায় জর্জরিত মা দাবি করে বলেন, আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। তানজিনার ভাই জামিল মিয়া জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে আমার বোন তানজিনাকে চিকিৎসা করতে হাসপাতালে নিয়েছিলাম। কিন্তু তার স্বামী মাসুদুর রহমানকে বলে না আসায় সে ফোন দিয়ে হুমকি দিচ্ছে বাড়িতে গেলে তাকে মেরে ফেলবে। চিকিৎসা শেষে আমার বোনকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর পর ঘণ্টা খানেক পর জানতে পারি সে আত্মহত্যা করেছে। তার স্বামী আগেই আমার বোনকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। আমার বোন আত্মহত্যা করতে পারেনা। আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ইসমত তাহমিনা বলেছেন, হাসপাতালে আনার পর তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তার মাথার মধ্যে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নাক-মুখ দিয়ে রক্ষা বের হচ্ছে।
স্বামী মাসুদুর রহমান বলেন, আমাকে না বলে বাবার বাড়িতে গিয়েছিল এ প্রশ্ন করায় আমার সাথে তর্ক-বিতর্ক হয়। পরে সে রাগের মাথায় ৩য় তলা বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়ে যায়। তখন আমি আমার বাবা ও ভাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার স্ত্রীকে মৃত ঘোষণা করে।
ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমি নিজেই গিয়েছি এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তানজিনার স্বামী, শ্বশুর ও তার ভাইকে আমাদের হেফাজতে আনা হয়েছে। মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড