মো. মাহবুবুর রহমান রানা, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ)
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ভিক্ষা না করার শর্তে ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন। এ পর্যন্ত ১৫ জন নারী পুরুষ ভিক্ষুককে দোকান ঘর ও মালপত্র দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পর্যায় ক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নের ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসন।
উপজেলা সমাজসেবা ও নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাটুরিয়া উপজেলা ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ১৭ লক্ষ টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। নয়টি ইউনিয়নে ভিক্ষুকদের তালিকা প্রস্তুত করে সকল ভিক্ষুককে পুনর্বাসন ও বিকল্প বর্ম সংস্থান করা হবে।
সাটুরিয়ার ফুকুরহাটি গ্রামের আলীনগরের ভিক্ষুক আনোয়ার হোসেন জন্ম থেকেই সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি প্রায় ২০ বছর ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে সংসার চালাত। পনের বছর আগে সে বিয়েও করে প্রতিবন্ধী এক মেয়েকে। তার সংসারে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে জন্ম হয়। সন্তান দুটিও শারীরিক প্রতিবন্ধী। একই পরিবারে চারজন প্রতিবন্ধী থাকার পরও শুধু আনোয়ার হোসেন পান প্রতিবন্ধী ভাতা।
সাটুরিয়ার উত্তর কাউন্নারা গ্রামের সত্তরর্ধ্ব খেদু মিয়া ২৫ বছর ধরে ভিক্ষা করে জীবন যাপন করত। সে এলাকায় ভিক্ষা না করলেও বাহিরে গিয়ে ভিক্ষা করে আয় রোজগার করে সংসার চালাত। ভিক্ষা করতে গিয়ে সে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে পেটে আঘাত পান। পেটে বড় ধরণের অপারেশন করার পরও সে ভিক্ষা করে পরিবারের ৮ সদস্যর আহার যোগাড় করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাটুরিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুকুরহাটি আলিনগর গ্রামের মো. আনোয়ার হোসেনকে একটি ছোট ঘণ্টি দোকান ঘর ও ১৫ হাজার টাকার মালপত্র কিনে দিয়েছেন। দোকানের মালপত্র সব বিক্রি করে খেয়ে ফেলেছেন। এখন খালি দোকান নিয়ে বসে আছে আনোয়ার হোসেন। দোকানে মালপত্র না থাকায় স্ত্রী শাহানা বেগমকে দিয়ে গ্রামে গ্রামে আবার সে ভিক্ষা ভিত্তি করে সংসার চালাচ্ছে।
প্রতিবন্ধী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমার পরিবারের সবাই প্রতিবন্ধী। সরকারিভাবে আমাকে দোকান ঘর দিয়েছিল ভিক্ষা না করার শর্তে। আমি প্রতিদিন ১০০ শত টাকা থেকে ২০০ শত টাকা ভিক্ষা করে আয় রোজগার করতাম। দোকান দেওয়ার পর আমি প্রতিদিন ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার মালপত্র বিক্রি করতাম। এতে আমার আয় হতো ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা লাভ হয়। দোকানের মালপত্র বিক্রি করে মূলধন পুঁজি সব খেয়ে ফেলেছি। আমি ভিক্ষা না করলেও আমার স্ত্রী ভিক্ষা করে সংসার চালাচ্ছে।
ধূলা গ্রামের মমতাজ বেগম ও কমলপুর গ্রামের উজফা বেগম বলেছেন, মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করতাম। আগের মতো এখন আর মানুষ ভিক্ষা দেয় না। বুড়ো বয়সে মানুষের কাছে হাত পাততে লজ্জা লাগে। তারপরও পেটের দায়ে ভিক্ষা করতাম। ইউএনও স্যার আমাগো দোকান করে দেওয়ায় এখন আর ভিক্ষা করি না। দোকান থেকে যে আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।
সাটুরিয়ার উত্তর কাউন্নরা গ্রামের সত্তরর্ধ্ব বয়সী খেদুমিয়া দোকানে বসে গান শুনছিলেন- ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কমনে আসে যায়, ধরতে পারলে মনোবেড়ি দিতাম পাখির পায়।’ এমন সময় সাটুরিয়ার সমকালের প্রতিনিধি তার দোকানে গিয়ে হাজির হন। তিনি বলেন, পরিবারের ৮ সদস্যের মধ্যে ভিক্ষা করে ৪ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। দুই ছেলেকে মানুষ করেছি। এখন কেউ ধরা দেই না। ওদের জন্য ভিক্ষা করতে গিয়ে জীবনটাই হারিয়ে ফেলেছিলাম।
তিনি বলেছেন, একমাস আগে সাটুরিয়ার ইউএনও শারমিন আরা আমাকে ভিক্ষা না করার শর্তে একটি দোকান ঘর দেন। দোকানের মালপত্র কিনে দেন। বয়সের বাড়ে আমি এখন ভিক্ষা না করে দোকানে বসে মালপত্র বিক্রি করি। প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এতে আমার ২ শতাধিক টাকা লাভ হয়। এ দিয়ে কোর রকম চলছি। সময় পেলে মনের আনন্দে গান শুনি।
যদিও এই দুই ভিক্ষুক বলেন, ভিক্ষা নয় স্বাবলম্বী হতে চাই প্রশাসনের এই মহতী উদ্যোগকে তারা সাদরে গ্রহণ করেছে।
সাটুরিয়া উপজেলা ইউএনও শারমিন আরা বলেন, ভিক্ষা নয় স্বাবলম্বী হতে চাই এই শ্লোগানকে সামনে রেখে ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি কর্মসংস্থান সহায়ক বিপণী বিতান করে দিয়ে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। ভিক্ষা না করার শর্তে এ পর্যন্ত ১৫ ভিক্ষুককে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রতি ভিক্ষুককে বিভিন্ন কাইটিরিয়ায় সরকারিভাবে অনুদান দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, যেসব ভিক্ষুককে দোকান ঘর করে দেওয়া হয়েছে তা চেনার উপায় হচ্ছে লাল সবুজের ঘর দেখলেই বুঝা যাবে এখানে ভিক্ষুক পুনর্বাসন করা হয়েছে। ভিক্ষুক পুনর্বাসন জেলা প্রশাসক আব্দুল লতিফ উদ্বোধন করেছেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড