মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
শীত নিবারণের জন্য লেপ তৈরির প্রধান উপকরণ লাল সালু কাপড়। শীত আসার সাথে সাথে কদর বেড়েছে লাল সালু কাপড়ের। বর্তমানে লাল সালু কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাল সালু কাপড় তৈরির জন্য ব্যস্ততা বেড়েছে নরসিংদীর তাঁতি পল্লীতে।
জেলার বিভিন্ন এলাকার সবুজ মাঠে শোভা পাচ্ছে লাল সালু কাপড়। রোদে শুকাতে দেওয়া এসকল কাপড় দূর থেকে দেখলে মনে হয় কোন প্রেয়সী তার প্রিয়জনকে উষ্ণ সংবর্ধনা দিতে চিত্র শিল্পীকে দিয়ে সবুজ গালিচায় লাল সালুর আলপনা এঁকে রেখেছেন।
লালসালু হলো বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি করা লাল রঙের কাপড়। বহু যুগ ধরে নরসিংদীর মাধবদী বাবুরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার মহাজনরা বিশেষ পদ্ধতিতে এ লাল সালু কাপড় তৈরি করে আসছে।
লেপ তৈরি, বিরিয়ানি বা হালিমের পাতিলের আবরণ, বিভিন্ন মাজারের পতাকা, বিপদ সংকেত ও জরুরি কিছু সাংকেতিক কাজে লাল নিশানা তৈরিতে এ লাল সালু কাপড় প্রাচীন যুগ থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
অগ্রহায়ণ, পৌষ ও মাঘ এ তিন মাস এ কাপড়ের বেশ চাহিদা থাকে ফলে এসময়ে লালসালু তৈরির ধুম লাগে তাছাড়া বছরের অন্যান্য সময়েও স্বল্প পরিসরে এ কাপড় তৈরি করা হয়।
সাদা মারখিন কাপড়ে প্রথমে রাসায়নিক কেমিক্যাল মিশিয়ে হলুদ রঙ করে তারপর হলুদ রঙের কাপড়ের উপর লাল রঙ করে কয়েক ধাপে কাপড়ের লাল রঙ ‘পাকা’ করা হয়। পরে দিগন্ত বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে সারি সারি কাপড় বিছিয়ে দিয়ে শুকিয়ে সেখানেই ভাঁজ করে বিক্রির জন্য বান্ডিল আকারে লালসালু কাপড় প্রস্তুত করেন শ্রমিকেরা।
কাপড়ের রঙ করার কাজটি তিন থেকে চার মাসের জন্য হয়ে থাকে। এতে স্থানীয় শ্রমিকরা কাজ করলেও এর একটি বড় অংশ ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে আসে।
কাপড় শ্রমিক ইমন বলেন, প্রতিটি কাপড়ের রোলে এক হাজার গজের মতো কাপড় থাকে। প্রতিটি রোল (এক হাজার গজ) রঙ করে রোদে শুকিয়ে তা ভাঁজ করে মহাজনের নিকট পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত একজন শ্রমিক চারশ টাকা মজুরি পান।
নুরুজ্জামান বলেন, একজন শ্রমিক দিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার গজ কাপড়ের কাজ করতে পারে। আমরা রং করা থেকে শুরু করে প্রথার রৌদ্র তাপ উপেক্ষা করে দৈনিক সর্বোচ্চ আটশ টাকা মজুরি পাই। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এ টাকা দিয়ে সংসারের ভরণপোষণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
লাল সালু কাপড়ের মহাজন আনোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘ ৩০ বৎসর তাবৎ লাল সালু কাপড়ের ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু বর্তমান সময়ে সূতা, রং এবং কেমিক্যালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে লোকসানের মুখে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী এ পেশা নিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে।
সুতা, কেমিক্যাল ও রঙয়ের মূল্য যে হারে বাড়ছে সে অনুপাতে কাপড়ের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত না হওয়ায় ক্রমাগত লোকসান গুনতে গিয়ে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। তাই এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড