• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রোগীরা

  নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

১৯ নভেম্বর ২০২২, ১১:০৩
ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রোগীরা

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়ার সময় ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের কারণে অতিষ্ঠ হচ্ছেন হাসপাতালে আসা রোগীরা। তারা নিয়মনীতি না মেনে যখন-তখন ঢুকে পড়ছেন বহির্বিভাগে। চিকিৎসকদের দিচ্ছেন উপঢৌকন। এ ছাড়া রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলছেন। এতে বিরক্ত হচ্ছেন সেবা নিতে আসা লোকজন।

অনেক রোগীরা জানায়, ব্যক্তিগত চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্রের ছবি আরেকজনকে দেওয়া ঠিক নয়। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় চিকিৎসকেরাও কেন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন? এতে আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, চিকিৎসকরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। বেশ কয়েকজন রোগী নিয়মানুযায়ী টিকিট কেটে তাদের কাছে চিকিৎসা নিতে যান। এ সময় ওষুধ কোম্পানির লোকদের ভিড় ঠেলে চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করেন রোগীরা। রোগীর আশেপাশে কোম্পানির লোকেরা ওষুধের বিভিন্ন নাম সম্বলিত প্যাড ও উপঢৌকন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন। চিকিৎসকও এর ফাঁকেই রোগীদের সমস্যার কথা জানতে চাচ্ছেন। পুরুষ রোগীরা অনায়াসে বলতে পারলেও নারী রোগীরা বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন।

চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আকলিমা জানান, তারা একটু ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে তিনি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসকের কক্ষে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোকদের উপস্থিতির কারণে তিনি তারা সমস্যার কথা সেভাবে বলতে পারেননি। স্বাভাবিক সমস্যার কথা বলেই ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাইরে বের হতেই কোম্পানির লোকেরা তার ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলা শুরু করেন।

চিকিৎসা নিতে আসা আলম, আলী আকবর ও রহিমা বেগমসহ অনেকে বলেন, কোম্পানির লোকদের চিকিৎসকেরা সুযোগ দেন, তাই তারা এভাবে চিকিৎসাসেবার কক্ষে থাকতে পারেন। চিকিৎসা নিতে এসে যদি আবার তা ব্যবসায় পরিণত হয়, এটা বেশ কষ্টের। চিকিৎসকেরাও ওষুধ লিখছেন কোম্পানির লোকদের মুখ দেখে দেখে।

বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, হাসপাতালে আসার কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তাই তারা সুযোগ পেলেই চিকিৎসকদের কক্ষ ভিজিট করেন। এখানে কারও ভোগান্তি হওয়ার কথা নয়।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. কিশোর কুমার ধর জানায়, প্রায়ই এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ আমাদের কাছে আসে। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা করেছি। এবং ফারিয়ার ভৈরবের সভাপতি আল-আতিক পায়েলকে বিষয়টি জানিয়েছি। কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রতিদিন আসতে পারবে না। যদি তারা আসে তাহলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যালস রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের (ফারিয়া) ভৈরবের সভাপতি আল-আতিক পায়েল বলেন, ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ডাক্তার ভিজিট করা উচিত, কারণ ডাক্তারদেরকে কোম্পানি অনারিয়াম (টাকা অথবা গিফট) দেওয়া হয় সেই অনু্যায়ী আমরা যারা কাছ করি তাদের কোম্পানির কোনো প্রোডাক্টের নাম লিখছে কিনা তা দেখার জন্য। আর মূলত প্রেসক্রিপশন দেখার জন্য আমাদের হাতে ধরার কোন নিয়ম নাই।

তিনি আরও বলেন, যখন কোনো রোগী বা কেমিস্ট প্রেসক্রিপশন নিয়ে ফার্মেসীতে যাবে তখন, যাতে করে কোনো রকম অভিযোগ না আসে সেভাবে তারা ভিজিট করবে। আর যদি কোনো প্রতিনিধি প্রেসক্রিপশন সার্ভে আইন অমান্য করে তাহলে তাদেরকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদেরকে আমি যোগদানের পরপরই তাদেরকে একটি নোটিশ দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সপ্তাহে দুই দিন রবিবার ও বৃহস্পতিবার দুপুর একটার পরে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার ভিজিট করতে পারবে। এছাড়া তারা এই দুইদিন ব্যতীত কেউ হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যদি তারা আমাদের নিয়মের বাহিরে আসে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড