• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শিক্ষক সংকটে চরম দুর্ভোগে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

  সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ

১৭ নভেম্বর ২০২২, ১৪:৪৯
শিক্ষক সংকটে চরম দুর্ভোগে সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

মাত্র একজন শিক্ষককে দিয়ে ১১৬ শিক্ষার্থীকে পাঠদানের সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আরেক জন শিক্ষিকা যোগদান করলেও দুর্ভোগ কমেনি।

গত বুধবার সরেজমিন দেখা যায়, ক্লাসে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান একটি ক্লাস নিচ্ছেন আরেক ক্লাসে সহকারী শিক্ষিকা কুলসুম আক্তার শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন। তবে অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সংকটে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর টিফিন বিরতি হল।

জানা যায়, ১৯২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের পাঁচঠাকুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনে শিক্ষার্থীরা সুন্দর পরিবেশ পেয়েছে। পরিপাটি এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নেই। এখানে দীর্ঘ দিন দরে শিক্ষক সংকট রয়েছে। গত এক সপ্তাহ আগেও ১১৬ জন শিক্ষার্থীকে মাত্র একজন শিক্ষক ক্লাস নিতেন। তাকেই সামলাতে হতো দুই শিফটের ৬টি ক্লাস ও অফিসিয়াল সকল কার্যক্রম। এ জন্য সে বেশ বেগ পেতেন।

যদিও সম্প্রতি গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশ হলে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণে থাকা সহকারী শিক্ষিকা কুলসুম আক্তার তিন দিন আগে বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বর্তমানে সেখানে মোট দুইজন শিক্ষক রয়েছে। আরেক শিক্ষক এক বছরের ডিপিএড প্রশিক্ষণে রয়েছেন। যে কারণে শিক্ষক সংকটে শিক্ষার আলোর বিস্তার কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, যমুনার ভাঙনে পাঁচঠাকুরি গ্রামসহ এলাকার অধিকাংশ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। দু বছর আগেও এ বিদ্যালয়ে প্রায় আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। তবে নদী ভাঙনে এক দিকে এলাকা বিলনি অন্য দিকে শিক্ষক সংকটের কারণে দিনকে দিন এখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পূর্ণিমা ঘোষ অবসরে গেলে নিয়োগকৃত তিনজন শিক্ষক দ্বারা বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলে। তবে গত প্রায় সাড়ে ১০ মাস আগে তিনজন শিক্ষকের মধ্যে মোছা. রুপা খাতুন ডিপিএড প্রশিক্ষণে রয়েছেন।

ছোনগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছেন, দুই বছর ধরে যমুনার কড়াল গ্রাসে স্কুলের প্রায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থীদের বসতভিটে যমুনার ভাঙ্গনে নদী গর্ভে চলে যায়। ভাঙ্গনের কবলে পাঁচঠাকুরী গ্রামটি ভৌগলিক মানচিত্র থেকে মুছে যাবার উপক্রম হয়েছে। গ্রামের পঁচাত্তর শতাংশ রাক্ষসী যমুনার গর্ভে বিলীন হয়েছে। একই সাথে শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় হিমসিম খেতে হচ্ছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক সংযুক্তের দাবি জানাই।

বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতি খাতুন ও আলিফ বলেন, প্রতিদিন দু-একটি সাবজেক্টে ক্লাস হয়।

পাঁচঠাকুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল মমিন তালুকদার বলেছেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের দেখার দায়িত্ব। স্কুলের পাঠদানে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে শিক্ষক সংকট সমাধানে কার্যকরী ব্যবস্থার দাবি জানাই।

পাঁচঠাকুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, যমুনা নদীর ভাঙন থেকে স্কুলটি মাত্র ২শ গজ দুরে রয়েছে। স্থায়ী বাঁধ না হলে বিদ্যালয় ভবন বিলীনের আতঙ্কে রয়েছি। এর মধ্যে আবার শিক্ষক সংকট নতুন করে ভোগান্তি বাড়িয়েছিল। এক সপ্তাহ আগেও একা বিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও অফিস কার্যক্রম পরিচালনা কষ্টকর ছিল। এতে বেশ বেগ পেতে হতো। তবে সপ্তাহ খানেক আগে কুলসুম আক্তার ট্রেনিং শেষে বিদ্যালয়ে ফিরেছে। এছাড়া কাল পরশুর মধ্যে আরও একজন শিক্ষক ডেপুটেশনে এখানে দেয়ার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার জানিয়েছেন। এতে কিছুটা হলে পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাইয়ার সুলতানা জানান, ওই বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষক ডেপুটেশনে দেয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই যোগদান করবেন। এছাড়া সেখানে শূন্যপদ পূরণে জেলা শিক্ষা অফিসকে অবগত করা হয়েছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড