মিলন মাহমুদ, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ৪৩৮ জন গ্রাহকের প্রায় চার কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘প্রজাপতি’ নামে একটি সমবায় সমিতির মালিকপক্ষ। জীবনের প্রায় সবটুকু সঞ্চয় হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে ওই গ্রাহকদের। উপজেলার জামশা ইউনিয়নের উত্তর জামশা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। সঞ্চিত টাকা ফিরে পেতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন মহলে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা।
উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে নিবন্ধন নেয় প্রজাপতি নামের সমবায় সমিতিটি। পরিচালনা পরিষদের ছয় সদস্যের কমিটিতে সভাপতি পদে জামশা ইউপির সদস্য আরিফ খান, সাধারণ সম্পাদক পদে নান্নু ও কোষাধ্যক্ষ পদে আব্দুল খালেক দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে সমিতিটিতে ৪৩৮ গ্রাহক রয়েছেন। উত্তর জামশা বাজারে একটি অফিস নিয়ে সমিতির কার্যক্রম চালানো হতো। তবে তিন মাস ধরে নেই অফিসের অস্তিত্ব।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সমিতিটি সঞ্চয় ও ঋণদান কর্মসূচি দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। কয়েক মাস পর অধিক লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা সঞ্চয় হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। সাধারণ মানুষ তাঁদের সবটুকু সঞ্চয় সমিতিতে জমা করেন। গ্রাহকের প্রায় চার কোটি টাকা সঞ্চয় রয়েছে। চার মাস ধরে সমিতিটি তাঁদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
উত্তর জামশা গ্রামের সাগর আলী বলেন, প্রজাপতি সমবায় সমিতিতে তিন লাখ টাকা সঞ্চয় হিসেবে জমা রেখেছিলাম। চার মাস ধরে সমিতির অফিস বন্ধ। সমিতির মালিক ইউপি সদস্য আরিফ খানের কাছে টাকা চাইলে শুধু সময় নেন, কিন্তু টাকা দেয় না। এ নিয়ে এলাকায় কয়েক দফা সালিস বৈঠক হয়েছে। কোনো সমাধান হচ্ছে না।
সেলিম মিয়া নামের একজন বলেন, আমি সৌদি প্রবাসী। আমার স্ত্রী আমার উপার্জনের ১০ লাখ টাকা প্রজাপতি সমবায় সমিতিতে সঞ্চয় করেন। হঠাৎ করে সমিতিটি বন্ধ হয়ে যায়। সমিতির তিন মালিক ইউপি সদস্য আরিফ, নান্নু, খালেক একে অপরের কাছে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু কেউ কোনো টাকা দিচ্ছেন না।’ কথা হলে একই অভিযোগ করেন ওই সমিতির গ্রাহক লোকমান হোসেন, মো. রফিক, মহর আলীসহ আরও কয়েকজন। কষ্টের টাকা ফেরত পেতে বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও কাজ না হওয়ার কথা জানান তারা।
সমিতির সভাপতি ও জামশা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আরিফ খান বলেন, সব গ্রাহককেই টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে পারব না।
জামশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী কামরুজ্জামান বলেন, সমিতির মালিক আরিফ খান, নান্নু ও খালেকের মধ্যে লেনদেনের হিসাব নিয়ে ঝামেলা চলছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। সমিতির কিছু কাগজপত্র পুড়ে যাওয়ায় তাঁদের মধ্যে ঝামেলা তৈরি হয়েছে। ওরা টাকা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরব আলী বলেন, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রজাপতি সমবায় সমিতির শেষ অডিট করা হয়েছিল। তবে কোনো গ্রাহক এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপন দেবনাথ বলেন, প্রজাপতি সমবায় সমিতির কোনো গ্রাহক আমাদের কাছে অভিযোগ করেননি। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড