মো. রুম্মান হাওলাদার, পিরোজপুর
সাগরে মাছ ধরতে পারলেই জোটে তাদের অন্ন, নিষেধাজ্ঞা থাকলে আয় বন্ধ। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার এমন আট হাজার ২৩০ জন নিবন্ধিত জেলে টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ জীবন-জীবিকার তাগিদে আবারও গভীর সমুদ্রে শত শত ট্রলার নিয়ে ছুটবেন মাছ শিকারে।
গত শুক্রবার মধ্যরাতে (১২টায়) শেষ হয় সরকার ঘোষিত টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। উপজেলার বিভিন্ন জেলেপল্লী ও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের নিবন্ধিত জেলেরা গতকাল সাগর যাত্রার সকল প্রস্তুতি সেরে রাখলেও শেষ মুহূর্তে সবাই যেতে পারেনি। ফলে আজ শনিবার (২৯ অক্টোবর) নিবন্ধিত জেলেদের সিংহভাগ যাচ্ছে সাগরযাত্রায়।
এর আগে শুক্রবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ট্রলার মেরামত, নতুন জাল তৈরি ও পুরানো জাল সেলাইসহ সমুদ্রে মাছ ধরার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে অপেক্ষায় আছে উপকূলের মৎস্যজীবীরা। এতদিন তারা ফিশিং বোট, ট্রলার ও ছোট ছোট ইঞ্জিন নৌকা ডাঙ্গায় তুলে রেখেছিল। কেউ বোট মেরামত, কেউ আবার জালসহ উপকরণ সংগ্রহে প্রায় ২২ দিন অলস সময় পার করেছে। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে গভীর সমুদ্রে ফিশিং বোট, ট্রলার নিয়ে মাছ শিকারের নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা বেশি সাপলেজা, তুষখালী, বেতমোড়, বড়মাছুয়া, টিকিকাটা, হলতা গুলিশাখালী ও আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নে।
এর মধ্যে সাপলেজা ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের আছে এক হাজার ২৯৩ জন, তুষখালী ইউনিয়নে এক হাজার ১৭৯ জন, বেতমোড়ে ৯৮২ জন, বড়মাছুয়ায় ৯৪২ জন, টিকিকাটা ইউনিয়নে ৬৫০ জন, হলতা গুলিশাখালীতে ৬১০ জন, আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নে ৫৬৯ জন, ধানিসাফা ইউনিয়নে আছে ৪৫২ জন।
মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে উপকূলীয় এ এলাকা গুলোতে এখন জেলেদের পদচারণায় মুখর।
সাপলেজা ইউনিয়নের খেতাছিড়া গ্রামের জেলে জসিম জানান, দীর্ঘ ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা এবং ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং শেষে আবার সমুদ্রে মাছ ধরতে পারবো বলে আনন্দ লাগতেছে। তবে ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। আমাদের মত জেলেদের অনেকের ঋণ রয়েছে। ২২দিন ধরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এখন মাছ ধরে আয়করে তা পরিশোধ করতে হবে। এবার অনেক আশায় নিয়ে আমরা সাগরে নামবো।
বেতমোড়, টিকিকাটা, বড়মাছুয়া, গুলিশাখালী, আমড়াগাছিয়া, তুষখালী, ধানিসাফা এলাকার জেলেরা জানায় আবরোধকালীন সময় যে চাল পাওয়া যায় তা দিয়ে তাদের ৬/৭ সদস্য বিশিষ্ট পরিবার চলে না। অনেক সময় নির্দিষ্ট পরিমাণের থেকে কম চাল পাওয়ায় অর্ধাহারে থাকতে হয়। তবুও প্রশাসনের নিয়ম মেনে ২২টি দিন মাছ না ধরে অভাব-অনটনে কাটিয়েছি।
ছেঁড়া জাল জোড়ানো, জালে প্লুট লাগানো এবং ট্রলার মেরামতের কাজে সময় পার করেছি। এখন সাগরে যাওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি, ইনশাল্লাহ সবাই মিলে আজ সাগরে নামব।
এ দিকে মিরুখালী ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৭৩ জন থাকলেও ফিশিং বোট নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া জেলের সংখ্যা কম। একই অবস্থা পৌর শহর ও সদর ইউনিয়নের জেলেদের। পৌর শহরে নিবন্ধিত কার্ডধারী জেলের সংখ্যা ১৪৮ জন, সদরে রয়েছে ৪৭৯ জন জেলে। এ অঞ্চলের জেলেরা সাধারণত স্থানীয় পুকুর, হাওর-বাওর, নদী-নালা, খাল-বিলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে।
অবরোধকালীন সময়ে এসব এলাকায় অভিযান পরিচালনাও হয়েছে কম বলে জানা যায়। তবে অবরোধ মানা জেলেদের দেখা যায়, মাছ শিকারের জালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ঠিক করতে। এদের কেউ কেউ আবার গতকাল মধ্যরাতে বাড়ির আশপাশের খাল-বিলে নেমেছে মাছ শিকারে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলিউর রহমান জানান, সারা দেশে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর মাছ শিকারের টানা ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে আমরা এতোদিন কাজ করেছি। ইলিশ ধরা বন্ধে উপজেলার বলেশ্বর নদীর ছোট মাছুয়া, হোতাখাল, তুলাতলা, কাটাখাল, মাঝের খাল, বড়মাছুয়া খেয়া ঘাট, মাঝের চর, সাংরাইল বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়েছি। শুক্রবার মধ্যরাতে ২২ দিনের মাছ শিকারের অবোরধ শেষ হয়।
উপকূলীয় প্রান্তিক জেলেদের মাঝে একটা আনন্দ ও উৎসব বিরাজ করছে। উপজেলায় মোট নিবন্ধিত জেলে ৮২৩০ জন। অবোরধকালীন সময়ে কার্ডধারী জেলেদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। আশাকরি এবার জেলেদের জালে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়বে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড