জে রাসেল, ফরিদপুর
মো. সামছুর রহমান। যিনি ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রধান সহকারী। তবে তিনি বড় বাবু নামেই অধিক খ্যাত। যাকে সবাই মেডিক্যাল হাসপাতালটিতে "সামছু" নামেই চিনেন। এক সময় তার ইশারায় চলতো এ মেডিক্যাল হাসপাতালটি এমন অভিযোগ অহরহ।
সরকারি চাকুরি বিধিতে না থাকলেও যিনি একই স্থানে ২৭ বছর ধরে বীর দর্পে চাকুরি করে গেছেন। অবশেষে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৭ আগস্ট ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী করা হয়। তবে নানা অজুহাতে সেখানে অফিস না করেই দুই মাসের অধিক সময় ধরে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই বীর দর্পে ঘুরে বেড়ান বলে অভিযোগ উঠেছে।
বদলির আদেশের পাঁচদিনের মাথায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন বটে; কিন্তু এরপর থেকে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আর দেখা মেলেনি এ প্রধান সহকারীর।
এছাড়া সামছুর বিরুদ্ধে চাকরির ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টেন্ডার বাণিজ্য, হাসপাতালটির বিভিন্ন কেনাকাটায় অনিয়ম, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগে অর্থ বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
অন্য দিকে সরকারি চাকরি বিধির নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে মেডিক্যাল হাসপাতালটিতে একনাগাড়ে ২৭ বছর চাকরি করার সুবাদে সব কিছুতেই তার সিন্ডিকেটের বলয় তৈরি হয়। এ হাসপাতালে থেকে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত টাকা দিয়ে ফরিদপুর জেলা ও জেলার বাইরেও নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া নামে-বেনামে ব্যাংকেও রয়েছে টাকার পাহাড়। তবে, হয়রানি ও তার ক্ষমতার ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস দেখায়নি এমনটাই হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবি।
এ ব্যাপারে সামছুর রহমান ওরফে সামছুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার ছেলে অসুস্থ। তাই মাঝেমাঝে এ হাসপাতালটিতে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া ফরিদপুর মেডিক্যাল হাসপাতালের প্রধান সহকারী হিসেবে একনাগাড়ে ২৭ বছর চাকরি করায় অনেক কাজই নতুন যোগদানকৃত প্রধান সহকারী মোবাশ্বাল হাসানকে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে। তাই একটু সময় দিতে হয় এখানে।
দুই মাস একটি হাসপাতালের নতুন যোগদানকৃত প্রধান সহকারীকে বুঝিয়ে দিতে সময় লাগে কি-না? এমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এছাড়া একই হাসপাতালে ২৭ বছর চাকরি করা সরকারের কোনো বিধিতে আছে কি-না ; এমন প্রশ্নের জবাবে সামছু বলেন, এটা আমার কি দোষ? এটা কর্তৃপক্ষ জানেন। এব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না; কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।
অন্য দিকে হাসপাতালটিতে কর্মরত থাকাকালীন বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবী করে বলেন, এগুলো ভিত্তিহীন। আমি কোনো অনিয়ম করিনি। এসব বানোয়াট কথাবার্তা। আমার বিরুদ্ধে কেউ অনিয়মের প্রমাণ দিতে পারলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিব।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মহসিন উদ্দিন ফকির বলেন, সামছুর রহমান নামে এক ব্যক্তি ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধান সহকারী হিসেবে যোগদান করেছেন। তিনি একটি ট্রেনিংয়ে ফরিদপুরে আছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা। কিন্তু আপনার ওইখানে সে যোগদান করলেও অফিস সময়ে গত দুইমাস যাবৎ ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়মিত দেখা মিলছে কেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক স্যার কয়েকদিন হাসপাতালটির নতুন যোগদানকৃত প্রধান সহকারীকে কাজগুলো বুঝিয়ে দিতে বলেছিলেন। তাই সামছুকে কয়েকদিন হাসপাতালটিতে যেতে বলেছিলাম। কিন্তু একটানা দুই মাস কাজ বুঝিয়ে দিতে পারেন কি-না সে? এমন প্রশ্নের জবাবে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, এ ব্যাপারে আপনি ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে জিজ্ঞেসা করেন।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, সামছু নামের কাউকে আমি চিনি না। হয়তো আমার যোগদানের পূর্বে তাকে বদলী করা হয়েছে। তবে, আপনার মেডিক্যাল হাসপাতাল নিয়মিত অফিস করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে; এমন প্রশ্নের জবাবে এ পরিচালক বলেন, সে এখন আমাদের অধীনে চাকরি করেনা; তিনি সিভিল সার্জনের অধীনে চাকরি করেন। তাই সিভিল সার্জনকে প্রশ্ন করুন। কেন আমার হাসপাতালে সামছু অফিস করেন?
এছাড়া হাসপাতালটি থেকে বদলির আগে সামছুর বিরুদ্ধে উঠা বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ পরিচালক বলেন, আমি এখানে যোগদানের পর তাকে পাইনি। তাই এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। আপনি আমার আগে এ হাসপাতালে কর্মরত পরিচালক সাহেবকে জিজ্ঞেসা করুন।
শামছুর বিরুদ্ধে উঠা নানা অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া পরিচালক ডা. সাইফুর রহমান বলেন, আমি হাসপাতালটিতে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে কোনো আউটসোর্সিংয়ে জনবল নিয়োগ কিংবা ট্রেন্ডারের কোনো কাজও হয়নি। তবে এসংক্রান্ত যেটুকু কাজ হওয়ার কথা ছিল তা পরবর্তীতে বাতিল করা হয়েছিল। তাই, তার (সামছু) ব্যাপারে কিছু বলতে পারছি না।
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন অফিসের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. শাহ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বলেন, এটা আমাদের জানা নেই। যদিও আপনার মাধ্যমে যেহেতু জানলাম; আমি সিভিল সার্জন স্যারকে জানিয়ে সামছুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলবো।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, একস্থান থেকে আরেক স্থানে বদলী করা হলে সেখানে যোগদান করার পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কারো অনুপস্থিত থাকার সুযোগ নেই। আর সেটা যদি কেউ করে থাকেন সেটা অপরাধ। সামছুর রহমান ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কেন অফিস করছেন না; তা আমার জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সিভিল সার্জন। তবে, সামছুর অনিয়মের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি সিভিল সার্জন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড