ভোলা প্রতিনিধি
আগামী ১ নভেম্বর জেডিসি পরিক্ষা দিবে তানিয়া। নিজের পড়া লেখার খরচ ও সংসার চালাতে এ অবস্থায় অন্ধ মায়ের সঙ্গে পথেঘাটে ভিক্ষা করে বেড়ায় সে। সপ্তাহে একদিন স্কুল বন্ধ রেখে তাকে এ কাজ করতে হয়। দুই বোন ও মাকে ফেলে বাবা মনছুর আলী চট্টগ্রাম পালিয়ে যায়।
মা রাশেদা অন্ধ সংসারে আয়ের কোন ব্যবস্থা না থাকায় অন্ধ মায়ের সাথে ভিক্ষা করে। কিন্তু ভিক্ষা করলেও পড়ালেখা ছাড়েনি তানিয়া। এ পর্যন্ত চালিয়ে এসে ১ নভেম্বর জেডিসি পরীক্ষা দিতে বসছে সে।এরপর আরও পড়ার স্বপ্ন তার।
ভিক্ষা করা অবস্থায় তানিয়া ও তার মা রাশেদার সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। জানা যায় জীবনের গল্প। রাশেদা বেগম আর মনছুর আলী দম্পতির দুই কন্যা সন্তান। ছেলে নেই। অন্ধ রাশেদার বড় মেয়ে সারমিনের জন্মের পর তানিয়া ৩ মাসের গর্ভে থাকা অবস্থায় সংসার ফেলে স্বামী মনছুর আলী চলে যায় চট্টগ্রামে।
আজও ফিরে আসেনি মনছুর আলী। সেই থেকেই রাশেদার ভিক্ষাবৃত্তি বেঁচে নেওয়া। অন্ধ রাশেদা ভিক্ষা করে বিয়ে দেন বড় মেয়ে শারমিনকে। যার বয়স বর্তমানে ২০ বছর। রাশেদার অভিযোগ মেয়ের ঘরে নাতি-নাতনি হয়েছে। মেয়ের জামাই যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। তাকে অটোরিকশা কিনে দেওয়ার জন্য। রাশেদার ছোট মেয়ে তানিয়া। স্থানীয় মন্তাজউদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায় পড়ে।
এবার জেডিসি পরিক্ষা দেবে। ক্লাশ রোল ১৪। পড়া লেখায় খুব ভালো বলে মাদ্রাসা সুপার জানান। মা অন্ধ থাকায় একা ভিক্ষা করতে পারেন না। তাই মাকে সহযোগিতা করতে সপ্তাহে একদিন ক্লাস বন্ধ রেখে প্রতি বৃহস্পতি বার অন্ধ মায়ের ভিক্ষার সঙ্গী হয় জেডেসি পরিক্ষার্থী তানিয়া।
লালমোহন বাজারের দোকানে দোকানে সারাদিন তারা ভিক্ষা করে। দুপুরে কোনো বাড়িতে খাবার খুঁজে খেয়ে নেয় মা ও মেয়ে। সারাদিনের ভিক্ষার টাকা দিয়ে সংসার চলে।
তানিয়ার খাতা কলম কিনতে হয়। তার উপর বড় মেয়ে নাতি-নাতনি নিয়ে মাঝে মধ্যে এসে অতিথি হয় ওঠে।
রাশেদা জানায়, তানিয়া বড় হচ্ছে। সে মাদ্রাসায় পড়ে। ক্লাস রেখে ভিক্ষা করতে আসতে চায় না। তবুও বুজিয়ে সুনিয়ে তার পর নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, ভিক্ষার টাকায় কাগজ, কলম কিনতে হয়, মেয়ের হাত খরচ চালাই। তারপরেও মেয়েটা শিক্ষিত হোক তা চান রাশেদা বেগম।
তানিয়া জানায় প্রতিদিন ক্লাসে যাই। সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার মায়ের ভিক্ষার সঙ্গী হওয়ার জন্য আমি আসি। মা আমাকে ছাড়া চলতেই পারে না। ক্লাস বাদ দিয়ে ভিক্ষার সঙ্গী হতে আমার খারাপ লাগে, কি করুম আমরা গরীব। মা অন্ধ চোখে দেখে না। বাপ কে আমি জন্মের পর চোখে দেখিনি। বেঁচে আছে না মরে গেছে তাও জানি না।
এ ব্যাপারে মন্তাজ উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা শফি উল্যাহ জানান, তানিয়া আমাদের মাদ্রাসার নিয়মিত ছাত্রী। মডেল টেস্ট পরিক্ষা দিয়েছে। মাদ্রাসা থেকে সে এবার জেডিসি পরিক্ষা দিবে। গরীব অসহায় ভিক্ষা করে সংসার চলে দেখে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ফ্রি রেজিস্টেশন করে দিয়েছি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড