রফিকুল ইসলাম রফিক
গাইবান্ধায় শত বর্ষের পুরনো ঐতিহাসিক মন্দির থাকলেও সেখানে এখন আর হয় না আগের মত শারদীয় দুর্গা পূজা।
এ বছর হিন্দু সম্প্রদায়ের এই মহোৎসবকে ঘিরে মেতে উঠেছিল জেলার বিভিন্ন এলাকার ছোট বড় সব ধরনের মন্দিরগুলো। ঢাকের তালে তালে আনন্দের সাথে পালিত হয়েছে এই হিন্দু সম্প্রদায়ের মহাউৎসব।
জেলা পূজা উৎযাপন কমিটির তথ্য অনুসারে জেলা উপজেলা মিলে এবার ৬শ’ ৬৫পূজা মন্ডপে দুর্গোৎসব পালিত হয়েছে। জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে কালী মন্দির।
যা শত বছর পূর্বে এই তীরে কোনো এক সময় এক বটতলায় নিস্তা নন্দন বর্মন ও হরিদাস চন্দ্র বর্মন নামে দুই ব্যক্তি কালীর পূজা শুরু করে। ধীরে ধীরে সেই সময় তার আশেপাশে লোকজন ও পাড়ার লোকজন প্রায় সবাই এখানে বটতলায় এসে পূজা করত। এক পর্যায়ে সেটিই (বটতলা) দুর্গা পূজার কালীর মন্দির নামে পরিচিতি লাভ করে। যা আজ অবধি রয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর নিকট থেকে জানা যায়, বহুকাল আগে নিস্ত নন্দন ও হরিদাস নন্দনের উত্তরসূরী গনেশ চন্দ্র ও কার্তিক এই পুরাতন মন্দিরটি সংস্কার করে আসছিল। পরবর্তীতে তারা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে গেলে অকেজো হয়ে পড়ে এই মন্দিরটি।
‘এক সময় এই মন্দিরে দুর্গা পূজা মহা ধুমধামে পালিত হত। দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসত এই কালী মন্দিরে উৎসব পালন করার জন্য’ বলে দৈনিক অধিকারকে জানান নিমল চন্দ্র নামে এক বৃদ্ধা।
কালের বিবর্তনে তা আজ প্রায় ধ্বংসের পথে। বর্তমানে যদু চন্দ্র বর্মন এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে। যদু নিজের উদ্যোগে মন্দিরটি কয়েকবার সংস্কার করে। তিনি মন্দিরটি ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে।
সেই সাথে মন্দিরটির সংস্কার ও দুর্গা পূজা করার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও অর্থ ও লোকবলের অভাবে তা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবে যদু চন্দ্রের আশা আগামিতে এই মন্দিরে দুর্গা পূজার আয়োজন হবে। হারানো সেই ঐতিহ্য ফিরে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কোনো অনুদান পেলে মন্দিরটি বতর্মান অবস্থান থেকে আরও উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।’
রবি ঠাকুর বর্মন বলেন, ‘মন্দিরটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের পূর্বপুরুষরা এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত করে গেছে, তাদের কাছ থেকে পাওয়া এই মন্দির। এক সময় এই এলাকার একমাত্র মন্দির ছিল এটি। বড় ধরনের পূজা হত এখানে। দুঃখের বিষয় তা আজ হচ্ছে না। সেই আগের মত আর এই মন্দিরে পূজা হবে কিনা তা বলাবাহুল্য।’
দরবস্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই মন্দিরটি অনেক পুরাতন একটি মন্দির, এটি কে বা কারা প্রতিষ্ঠিত করেছে তা নিয়ে লোকদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। আগামীতে মন্দিরটির সংস্কারের জন্য সরকারী কিছু বরাদ্দ দেয়া হবে।
এদিকে জেলার পলাশবাড়ি উপজেলার পবনাপুর ইউপির সমিতির হাট এলাকায় কালিতলা ও দুর্গা পূজা মন্দির। কত সালে স্থাপিত হয়েছে তা জানা নেই কারো, তবে এলাকাবাসীর ধারনা দুইশত বর্ষের পূর্বে রবিদাস চন্দ্র নামে এক ব্যাক্তি এই মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এবং সেখানে নানা ভাবে পালন করা হত হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন উৎসব। জানা যায়, কয়েক বছর আগেও এই মন্দিরে দুর্গাপূজার উৎসব চললেও এবার সেখানে হয়নি কোনো পূজা।
অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে এই মন্দির। একই অবস্থায় রয়েছে উপজেলার বরিশাল ইউপির মীরজাপুর কালী মন্দির, সদর উপজেলার তালুকজামিরা বাজারে দুর্গা মন্দির, ভেলাকোপা শন্তশের দুর্গা মন্দির।
এ সব মন্দিরে এবারও হয়নি শারদীয় দুর্গা পূজা। অবহেলায় পরে রয়েছে এই সব শত বর্ষের মন্দির। হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি সরকারিভাবে এই মন্দিরগুলো সংস্কার করা হলে আগের মতই জীবিত হয়ে উঠবে মন্দিরগুলো।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড