রাকিব হোসেন অপ্র
প্রায় দেড়শ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছিল এই মন্দিরটি। কারও কারও মতে দুইশ বছরও হতে পারে এর বয়স। এক সময় হিন্দু ধর্মীয় সকল উৎসব উদযাপনের পাশাপাশি জমিদার শিরীষ করের শাসন ব্যবস্থাকে ঘিরে বেশ জাঁকজমক ছিল মন্দিরটি। এখন শুধুই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এটি। এক কথায় নিষ্প্রাণ। বলছি, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ গ্রামের করের বাড়ির মন্দিরটির কথা।
স্থানীয়রা জানায়, ভারতীয় উপমহাদেশে যখন জমিদার প্রথা চালু ছিল, তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি বৃহৎ গোষ্ঠী বর্তমান লক্ষ্মীপুর সদরের বাঙ্গাখাঁ এলাকায় বসবাস করত। তবে এর কোনো সুনির্দিষ্ট ইতিহাস সংরক্ষিত নেই।
ধারণা করা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের বহু আগে ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তিগুলো বিক্রি করে কিংবা বিক্রি না করেই দেশ ত্যাগ করেছিল এ অঞ্চলের হিন্দুরা। এরপর এ অঞ্চল থেকে বিলীন হতে থাকে সেই জনগোষ্ঠীর ইতিহাস। সূচনা হয় নতুন সভ্যতার।
অবাক করা বিষয় হলেও সত্য যে, জমিদার শিরীষ করের কথা এখনও মনে আছে স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে অনেকের। তারা দেখেছেন জমিদার শিরীষ করের শাসনামলের কিঞ্চিতাংশ, দেখেছেন তাঁর মন্দিরের ভরা যৌবন। তাদের মতে, বাঙ্গাখাঁ গ্রামের করের বাড়ির নামকরণ তৎকালীন কর জমিদারদের নামে করা হয়েছে। আর এই বাড়িতেই অবস্থিত সেই ঐতিহাসিক মন্দিরটি। এখনও দৃশ্যমান আছে লতাপাতায় মোড়ানো জরাজীর্ণ মন্দির ভবনের ভগ্নাবশেষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দোতলা ভবনের মন্দিরটিতে ছোট ছোট বহু জানালা আছে। প্রত্যেক কক্ষের দেওয়ালে প্রদীপ রাখার জন্য ৫ কোণা বিশিষ্ট ছোট ব্লক খালি রাখা হয়েছে। দরজাগুলো ছোট আকারের। ভবনটি নির্মাণে লম্বা এবং সরু বিশেষ এক প্রকার ইট ব্যবহার করা হয়েছে। কারুকাজ থাকলেও, এখন তা চোখে পড়ার মতো নয়। এখন লতাপাতা আর বনজঙ্গলে প্রায় মিশে গেছে মন্দিরটি। সিঁড়িগুলোও ব্যবহার অযোগ্য। স্থানীয় বাসিন্দারা এই ভবনের ভেতর শুকনো লাকড়ি, পাতা সংরক্ষণ করে রাখতে দেখা গেছে।
স্থানীয় আব্দুর নুর (৬০) দৈনিক অধিকার’কে বলেন, ‘এ অঞ্চলের সর্বশেষ জমিদার ছিলেন শিরীষ কর। প্রায় সাড়ে ১৯ একর জমিতে জমিদার বাড়ি, ঠাকুর বাড়ি, জেলে বাড়ি, কামার বাড়িসহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। ১২ মাসে ১৩ পূজা বেশ জাঁকজমকভাবে উদযাপন করা হতো জমিদার শিরীষ করের মন্দিরটিতে। আশপাশে সব বাড়ির হিন্দুরা গিয়ে ওই মন্দিরে পূজো উৎসব পালন করতো। আমরা তখন ছোট ছিলাম। পূজা উৎসবে গেলে আমাদেরকে সন্দেশ খেতে দিতো।’
হাজী মজিবুল হক (৬৫) দৈনিক অধিকার’কে বলেন, ‘সেই সময় মন্দিরটির বাইরে একটি ঘর ছিল। সেখানে জমিদার শিরীষ কর শালিস-দরবার করতেন। প্রতিদিন বিকালে গিয়ে লোকেরা সেখানে একত্রিত হতো। পূজার সময় সেখানে গান বাদ্যের ব্যবস্থা ছিল। মন্দিরের দোতলায় মূর্তিগুলো সাজানো ছিল। ছোট বেলায় আমিও মাঝে মধ্যে যেতাম। জমিদার শিরীষ করের জীবনাবসান এখানেই হয়েছিল বলেও জানান তিনি।’
এ দিকে মনা কর্তা আর ছৈল ঠাকুর নামে আরো দুজনের নাম বলতে পারলেও জমিদার শিরীষ করের অন্য কোনো নাম ছিল কি না তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি স্থানীয়দের কেউই। এখন জমিদার শিরীষ কর নেই। সেই জনগোষ্ঠীর বসবাসও এখানে নেই। তবে জমিদারের স্মৃতি আর শাসনামলের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে এই মন্দিরটি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড