জাহাঙ্গীর আলম, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম)
‘ধুধু জলে ওঠো ধূমায়িত অগ্নি, জাগো মাতা, কন্যা, বধূ, জায়া, ভগ্নি’ কবি নজরুলের কবিতায় মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে নারীর চিন্তা-চেতনায়, কর্মে, মননে, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে জেগে উঠাবার আহ্বানে সাড়া পড়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারায়।
এ উপজেলায় বিগত ১০ বছরেই শিক্ষায় নারীরা এগিয়ে গেছে বহুদূর। সরকারের বৈষম্যহীন মনোভাব এর ফলাফল কী হতে পারে এর অনন্য দৃষ্টান্ত এই উপজেলার নারী শিক্ষা। দেশের শাসনক্ষমতায় থাকা গণতান্ত্রিক সরকারই শিক্ষায় নারীর অংশ গ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভিন্ন নীতি অনুসরণ করেছে।
যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে সার্বিকভাবে শিক্ষায় পুরুষের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ বেশি। প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫১ দশমিক ৩৪ শতাংশই নারী। এর মধ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষায় ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী সংখ্যা বেশি।
উচ্চশিক্ষায়ও ছাত্রীর অংশগ্রহণ দিন দিন বাড়ছে। তবে মাদরাসা শিক্ষায় ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার কিছুটা কম।
উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৫ম শ্রেণি ও কেজি স্কুলসহ মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ১৮ হাজার ৮২৭, আর ছাত্রীর সংখ্যা ১৯ হাজার ২৮১।
এতে ৫০ দশমিক ৬০ শতাংশ ছাত্রী। মাধ্যমিকে মোট ২২ হাজার ৩২৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২ হাজার ৫৮২ জন ছাত্রী,যার মধ্যে ৫৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ ছাত্রী, কলেজ পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১২ হাজার ২২৬, এর মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা ৬২৬৪ যার মধ্যে ৫১ দশমিক ২৫ শতাংশ নারী এমনকি কারিগরি ও ভোকেশনালেও ২২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১২০ জন নারী, সেখানেও ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাফল্যের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত জিপিএ-৫ প্রাপ্তি ও পাসের হারের দিক থেকেও ছাত্রী বেশি।
অপর দিকে কর্মরত নারীদের সংখ্যাও বাড়ছে দিনদিন। উপজেলার ১১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ৬৬০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৯০ এবং নারী ৩৭০ জন। যার ৫৬ দশমিক ০৬ শতাংশই নারী। ৩৪টি মাদরাসা, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজেও কর্মরত নারীদের সংখ্যা বাড়ছে।
এদের মধ্যে ২৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা ৩৭১ জন। যার মধ্যে নারী শিক্ষিকা রয়েছে ১১৪ জন, এখানে ৩০ দশমিক ৭৩ শতাংশ নারী, কারিগরি ও ভোকেশনালে ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ, কলেজে ২৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ, মাদ্রাসায় ১৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ ও স্বতন্ত্র এবতেদিয়া মাদরাসায় ২৪ দশমিক ৭০ শতাংশ নারী শিক্ষক রয়েছে। যা ৫ বছর আগেও অনেক কম ছিল।
যদিও উপজেলায় নারী শিক্ষায় আলাদা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। দুইটি বালিকা বিদ্যালয় থাকলেও কোনো মহিলা কলেজ নেই। উপজেলায় শিল্প কারখানার সংখ্যা বাড়লেও নারীদের জন্য আলাদা কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। এতে করে নারীরা এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধা বলে মনে করেন উপজেলার নারী শিক্ষকরা।
আনোয়ারা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রিদুয়ানুল হক বলেন, সমাজে গতিশীলতা থাকলে নারীর শিক্ষায় অংশগ্রহণ বাড়ে। আমার কলেজে ১০ বছর পূর্বে নারী শিক্ষক ছিলেন দুইজন বর্তমানে ৩৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৫ জন নারী। নারী শিক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ, উচ্চ শিক্ষায় বিশেষ সুবিধাসহ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কারণে নারী শিক্ষা এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী হওয়ায় বর্তমানে নারীরা এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পেয়েছে।
আনোয়ারা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা পারুল বলেন, দেশে আট কোটি ১৬ লাখ পুরুষ আর আট কোটি ৩৩ লাখ নারী। সেখানে আর পুরুষ শিক্ষার হার ৭৬ শতাংশ সে ক্ষেত্রে নারী শিক্ষার হার ৭২ শতাংশ। নারী শিক্ষায় সরকার বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিলেও আমাদের সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে নারীরা অনেক পিছিয়ে।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, আনোয়ারায় ৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও কোনো মহিলা কলেজ নেই। পারিবারিক সুযোগ সুবিধা, নিরাপত্তা, সাইভারক্রাইম, মহিলা কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করলে এ উপজেলার নারীরা আরও এগিয়ে যাবে। সামাজিক সচেতনতা বাড়িয়ে নারীর প্রতি বৈষম্য দুর করতে হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক ওসমান গণি বলেন, নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে রোল মডেল। সরকারের শিক্ষা উপ-বৃত্তি ও অগ্রাধিকার প্রকল্পের কারণে নারী শিক্ষায় এ সফলতা এসেছে।
আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, নারী শিক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে। সরকার বিনা মূল্যে বই বিতরণ ও উপ বৃত্তি চালু করায় নারী শিক্ষার সুফল পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা কারখানায় নারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড