• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শতবর্ষী নগেন্দ্রবাড়ির পূজামণ্ডপ কি হারিয়ে যাবে?

  শাকিল মুরাদ

২০ অক্টোবর ২০১৮, ১১:৩৪
নগেন্দ্রবাড়ি
নগেন্দ্রবাড়ির পূজামণ্ডপ

“খালডাঙ্গার পালবাড়ির পূজা দেখা না হলে মন অতৃপ্ত থেকে যায়, মনে হয় দুর্গাপূজা দেখা হয়নি, তাই তো পরিবার পরিজন নিয়ে প্রতি বছর নদীর ওপারে পালবাড়ির দুর্গাপূজা দেখতে ছুটে আসি; দুর্গামায়ের চরণে প্রণাম করি-অঞ্জলি দেই এটাই বলছিলেন নালিতাবাড়ি শহরের তারাগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা পূজা রায়।

শতবর্ষী পুরোনো ঐতিহ্যবাহী পালবাড়ির পূজা নিয়ে এভাবেই তার অনুভূতি প্রকাশ করেন। পাহাড়ি খরস্রোতা নদী ভোগাই বিধৌত শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ি উপজেলার পৌর শহরের খালডাঙ্গা মহল্লার পালবাড়িতেই হতো উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা। কিন্তু এখন আর আগের মতো উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয় না দুর্গাপূজা। সময়ের স্রোতে তা কিছুটা ভাটা পড়ে যায়।

নগেন্দ্রবাড়ি

জানা যায়, ১৮৯৫ সালে পালপাড়ায় মঙ্গল রাম সরকার পারিবারিকভাবে তৈরি করেন শ্রী শ্রী মঙ্গল ভবন পূজামণ্ডপ। তৈরির পর থেকেই পারিবারিকভাবে চলতে থাকে দুর্গাপূজা। হঠাৎ মঙ্গল রাম সরকার স্বর্গীয় হয়।

এরপর থেকেই ঐতিহ্যবাহী এ মণ্ডপটির হাল ধরেন তার ছেলে নালিতাবাড়ির শিক্ষাগুরু নগেন্দ্র। যাকে (নগেন্দ্র স্যার) হিসেবেই সবাই চিনেন বা জানেন। এরপর নগেন্দ্র স্বর্গীয় হলে তার ৪ ছেলে মণ্ডপটি রক্ষায় কাজ করেন। ধীরে ধীরে শ্রী শ্রী মঙ্গল ভবন পূজা মণ্ডপটি পালবাড়ির নগেন্দ্র পূজামণ্ডপ হিসেবে মানুষের মনে জায়গা করে নেয়। যা পারিবারিক থেকে সার্বজনীনে পরিণত হয়। তারপর অনেক বছর উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয় দুর্গাপূজা।

১২৩ তম পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ মণ্ডপে আগে দুর্গাপূজাকে ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এক সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি হতো। কে হিন্দু কে মুসলিম তার বালাই নেই। সকলে মিলে একসঙ্গে দুর্গোৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতেন। পূজামণ্ডপের সামনে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আরতি ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কেবল দুর্গাপূজার ধর্মীয় অনুসঙ্গ থাকেনি, হয়ে উঠেছে সব শ্রেণির মানুষের আনন্দ-বিনোদনের অংশ। কিন্তু ২০০৮ সালে পূজা চলাকালীন সময়ে একটি শিশু মারা যায় সেখানে। এরপর কিছুদিন পর শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহকারি সচিব নগেন্দ্র’র ছোট ছেলে উৎপলাখ্য স্বর্গীয় হওয়ার পর থেকেই মণ্ডপটিতে কিছুটা ভাটা পড়ে যায়। যা এখনও ভাটায় রয়ে আছে। কিন্তু অনেকেই মনে করছেন ঐতিহ্যবাহী নগেন্দ্রবাড়ির পূজামণ্ডপটি কি হারিয়েই যাবে?

পালবাড়ির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক অঞ্জন চন্দ পাল বলেন, পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এ মণ্ডপটির অনুষ্ঠান কিছুটা ভাটা পড়েছে। কিন্তু তা ধীরে ধীরে আগেরমতো উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হবে দুর্গাপূজা। তিনি বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে আমাদের এখানে এক মহামিলনের সৃষ্টি হয়। পাল পরিবারের যে যেখানেই থাকুক এ দুর্গাপূজাকে ঘিরে সবাই একত্র হয়। ঐতিহ্য বজায় রেখে এবারও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পালবাড়ির পূজা মণ্ডপটি।

সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম এবং পালবাড়ির সন্তান বিশ্বনাথ পাল বলেন, আমার প্রয়াত বাবা নগেন্দ চন্দ পাল তার জীবদ্দশায় ৬০ বৎসর একাধারে এ পূজা মণ্ডপের সার্বিক কাজ পরিচালনা করেছেন। আমরা মাটির টানে, মায়ার বাঁধনে প্রতিবছর এ দুর্গাপূজার সময় নালিতাবাড়ির গ্রামের বাড়ি চলে আসি।

নালিতাবাড়ি পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক যোগেন রায় বলেন, পালবাড়ির নগেন্দ্রবাড়ির এটি একটি ঐতিহ্যবাহী পূজা মণ্ডপ। এখানে সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান, ভোজসহ বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে।

পূজা উদযাপন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানা যায়, এ বছর দেশে সার্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে মণ্ডপে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। পুলিশ, আনসার সদস্যদের পাশাপাশি ২২ সদস্য বিশিষ্ট সেচ্ছাসেবক দলও ভক্তবৃন্দের নিরাপত্তায় নিযুক্ত ছিল।

পালবাড়ির এই ঐতিহ্যবাহী নগেন্দ্র বাড়িতে দ্রুতই আগেরমতো উৎসব পরিবেশমুখর পরিবেশ ফিরে আসবে এমনটাই মনে করছেন হিন্দুধর্মাবলম্বীরা।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড