• বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২ আশ্বিন ১৪৩০  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন

সর্বশেষ :

sonargao

ঢাকার পাশের রূপগঞ্জে চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য

  সাইদুর রহমান, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩:৩৩
ঢাকার পাশের রূপগঞ্জে চলছে মাদকের রমরমা বাণিজ্য
মাদক সেবন করা হচ্ছে (ফাইল ছবি)

দিন দিন মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে রূপগঞ্জের তারাব পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড দিঘীবরাব বেরীবাদ এলাকায়। আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির ফলে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে মদ, ফেনসিডিল, গাঁজা ও ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য।

বেরীবাদ এলাকায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর টহল নেই বল্লেই চলে। জোবেদা মিলস্ কয়েক বছর ধরে বন্ধ থাকার কারণে দিঘীবরাব মিলের ৪নং গেইট মাদকের হট স্পটে পরিনত হয়েছে। সেবন থেকে বিক্রি সবই চলে এইখানে। বর্তমানে রূপগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য।

আর মাদকসেবীদের কাছে গাঁজা, ফেন্সিডিল মিলছে যখন তখন। এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। বাড়িতে বসেই পেয়ে যাচ্ছে গাঁজা। আর প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের অনৈতিক সুবিধা দিয়েই এসব অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

মাদকের ভয়াবহ ছোবলে ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ। যে বয়সে পড়াশুনা ও খেলাধুলায় মনোযোগী হওয়ার কথা, সে বয়সে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবন থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিচ্ছে মাদকের নেশা। যুবকদের পাশাপাশি স্কুলগামী কিশোর ও পথশিশুরাও আসক্ত হয়ে পড়ছে সর্বনাশা মাদকের নেশায়। আর এ নেশায় আক্রান্ত হয়ে অন্ধকার জীবনে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক তাজা প্রাণ। নেশা গ্রহণকারী শিশু-কিশোরদের মধ্যে বেশিরভাগই নিন্মবিত্ত পরিবারের সন্তান। যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৫ বছর।

ধূমপানের পাশাপাশি এসব যুবকরা গাঁজা, ফেন্সিডিল, চোলাই মদসহ সর্বনাশা ইয়াবা ও হেরোইনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পথশিশুরাও উপজেলার বিভিন্ন স্পটে মাদক সেবন করছে। হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা, হেরোইন, ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। আগামীতে যারা দেশের নেতৃত্ব দেবে সেই তরুণদের একটি বড় অংশ এখন ইয়াবা সেবন করে বিপথগামী হচ্ছে।

মাদক সহজলভ্য হওয়ায় দিন দিন সেবনকারী ও বিক্রেতারদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলছে। অন্যদিকে, নেশার জন্য টাকা জোগাড় করতে বাড়ছে চুরি, ছিনতাইয়ের মতো একাধিক ছোট-বড় ঘটনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে চোখে পড়ার মত কোন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, দিঘীবরাব এলাকার লিটন, ইমরান ও আফজাল কয়েক বছর ধরে মাদকের কারবার করে আসছে তাদের ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারে না। কেউ যদি প্রতিবাদ করে তারা তাদের ধরে মারধর করে। দিঘীবরাব এলাকার মাসুম কাজীর ছেলে লিটন। লিটন ইয়াবা ও গাঁজার ডিলার। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাসোয়ারা দিয়ে ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করে লিটন। সে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। লিটনকে কেউ মাদক ব্যবসায় বাঁধা দিলে স্থানীয় নেতারা তাদের হুমকি দিয়ে থাকে। এ কয়জন মাদক ব্যবসায়ী মাঝে লিটন সবচেয়ে বড় মাদকের যোগানদাতা।

দিঘীবরাব বেরীবাদ এলাকার জোবেদা মিলের ৪নং গেইটের সামনে ইমরানের গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান রয়েছে। এটা শুধু নামে মাত্র এই ব্যবসার আড়ালে সে ফেন্সিডিলের ব্যবসা করে থাকে। বিভিন্ন এলাকার মানুষ তার কাছ থেকে ফেন্সিডিল কিনতে আসে। সে ফয়সাল নামে এক কিশোরের মাধ্যমে ফেনসিডিল বিভিন্ন এলাকায় সাপ্লাই করে।

আর আফজাল বেরীবাদ এলাকায় আগে ছিনতাই করতো বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে নিউজ হলেও কাজ হয়নি। এখন সে ছিনতাইয়ের সাথে সাথে মাদক বিক্রি করে সে এখন গাঁজার ডিলার। সে কিশোর ছেলেদের দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিক্রি করে থাকে। তার নামে রূপগঞ্জ থানায় কয়েকটি মামলাও রয়েছে। আফজাল ও ইমরানের ভাগিনা আব্দুল্লাহ্ও ফেনসিডিল বিক্রি করে থাকে আবদুল্লাহ্ হচ্ছে ইমরান ও আফজালের বোন ফাহিমা বেগমের ছেলে। ফাহিমা বেগম এলাকায় মানবাধিকার কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, তাদের খোলামেলা মাদক বেচা-কেনার কারণে সমাজের পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। মাদকসেবীরা সকাল ১০টার পর হতে গভীর রাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চেপে মাদক বিক্রির বিভিন্ন স্পটে যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে এই এলাকা মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

এলাকাবাসীর দাবি, একাধিক স্পটে রয়েছে এইসব মাদক কারবারিদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণ ভয়ে মুখখুলতেও নারাজ। ভালো মানুষ সেজে মুখোশের আড়ালে বিক্রি করছে মাদক। এসব বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা আরো জোড়দার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকার খিলগাঁও থেকে বসন্ত বিলাসে ঘুরতে আসা সজীব মিয়া বলেন, আমরা অনেক দূর থেকে ঘুরতে আসছি জায়গাটা অনেক সুন্দর কিন্তু যাত্রামুড়ার সুইচ গেইট থেকে যখন গাড়িতে উঠলাম তখন সামনে আসতে দেখি ছোট ছোট ছেলেরা মাদক সেবন করছে। আর একজন কিশোর মাদক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এইসব দেখে পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে খুব বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।

মাদক বিক্রির ব্যাপারে লিটনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি মাদক বিক্রি করি এটা এলাকার সবাই জানে বলে হুমকির শুরে বলেন, আপনি পত্রিকাতে লিখলেও আমার কিছু যায় আসে না। আমি প্রশাসন ম্যানেজ করেই চলি। আপনাকে আমি দেখে নিব।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলার (গ-সার্কেল) সহকারী পুলিশ সুপার মো. আবির হোসেন বলেন, এই এলাকাতে পুলিশের টহল কম এখানে টহল বাড়ানোর চেষ্টা করব। যেহেতু এটা গ্রামের ভিতরে হওয়ায় তাই তথ্য নিয়ে এই মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড