• মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন

সর্বশেষ :

sonargao

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের অত্যাচারে জিম্মি এলাকাবাসী

  মনিরুজ্জামান, নরসিংদী

০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:৩৪
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের অত্যাচারে জিম্মি এলাকাবাসী
মরজাল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সানজিদা সুলতানা নাসিমা (ফাইল ছবি)

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সানজিদা সুলতানা নাসিমার বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, জমি জবর-দখলসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।

তার অপকর্মে দিশেহারা হয়ে তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, জেলা- উপজেলা প্রশাসনসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করে ও কোনো প্রতিকার মিলেনি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর। উল্টো বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি-ধমকি দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে বাকরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সানজিদা সুলতানা নাসিমা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে পুরো মরজাল ইউনিয়নবাসী জিম্মি হয়ে পড়ে। চেয়ারম্যান থাকাকালীন তিনি তার অনুগত কয়েকজন সদস্যের মাধ্যমে গরীব মানুষের কাছ থেকে বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ড, সরকারি গৃহনির্মাণ ইত্যাদির আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে উচ্চহারে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

তিনি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে মরজাল ইউনিয়নের মানুষকে এমনভাবে বাকরুদ্ধ ও জিম্মি করে রেখেছে যে তার ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না।

তার এসকল অপকর্মের তদন্ত করতে গত সোমবার সরেজমিনে তার এলাকায় গেলে এলাকাবাসী জানায়, সানজিদার বাড়িতে স্থানীয় রাজনীতিবিদ, নরসিংদীর বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের অবাধ যাতায়াত রয়েছে।

তাদের সাথে তার সখ্যতা, চাঁদাবাজি ও জনগণের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাট করে অল্পসময়ের মধ্যেই সে দুইটি পেট্রোল পাম্প, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিপুল পরিমাণ বিত্ত বৈভবের মালিক বনে যান।

তার দাপটের কাছে স্থানীয় লোকজন অসহায়। তার কুরুচিপূর্ণ ভাষা, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে তার নাম শুনলেই যেন ভয়ে আতকে উঠে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়নবাসী।

মরজাল বাসস্ট্যান্ড সমতা বাজারের সভাপতি ও মরজাল ইউনিয়ন আ. লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জহিরুল হক খান দুলাল বলেন, সানজিদা সুলতানা নাসিমা স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান সাদেক ও রিয়াদের আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে সবসময় ১০/১২ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে চলাফেরা করেন। তার কথাবার্তা এবং চলাফেরায় সবসময় একটা ভাব নিয়ে থাকে যার ফলে এলাকাবাসী তাকে ভয় পায়।

তিনি আরও বলেন, বিচারের জন্য কেউ তার শরণাপন্ন হলে সে তার কাছ থেকে অগ্রিম ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিয়েছে। চাঁদা নেওয়ার পর ও সে অনেককে সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত ও হয়রানি করে তাদের টাকা আত্মসাৎ করেছে। মহামারি করোনাকালীন সময়ে বিপুল পরিমাণ সরকারি অনুদান আসলে ও সে একাই সব আত্মসাৎ করেছে। এলাকার গরীব ও খেটে খাওয়া মানুষ তার কাছ থেকে কিছুই পায়নি। এখনো এলাকায় তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে।

তার দাবি, আমরা আপনাদের মাধ্যমে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই তারা যেন তার খুঁটির জোর চিহ্নিত করে তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করেন।

মরজাল ইউনিয়ন আ. লীগের সমবায় ও কৃষি বিষয়ক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমার বাড়ির পাশে একটি রাস্তার নির্মাণ কাজের জন্য সরকারিভাবে এক লাখ ৩৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সানজিদা সুলতানা নাসিমা সেই বরাদ্দ থেকে শুধু মাত্র দুই গাড়ি ইট পাঠিয়ে দেন; যার বাজার মূল্য তখন ২৬ হাজার টাকা ছিল। পরে বহুবার এ ব্যাপারে তার শরণাপন্ন হয়েও কোনো প্রতিকার মিলেনি উল্টো হুমকি-ধমকি দিয়ে বিদায় করে দিয়েছে।

তিনি বলেছেন, পরে বাধ্য হয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা তুলে আমরা সে রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ করেছি। তার এমন বহু অপকর্মের সাক্ষী মরজাল ইউনিয়নবাসী। কিন্তু আজও তার নাম শুনলে অনেকেই আঁতকে উঠে। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হয় না।আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

সাবেক ইউপি সদস্য রাশেদ মিয়া বলেন, ভিটি মরজাল এলাকার এক প্রতিবন্ধীকে ঘর দেওয়ার কথা বলে তিনি ১৭ হাজার টাকা চাঁদা নেন। চাঁদা নিয়ে ও তিনি তাকে ঘর দেয়নি। এতে করে ওই প্রতিবন্ধী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাছাড়া সে তার সাঙ্গপাঙ্গদের নামে শতাধিক মোবাইল সিম কিনে এগুলোর মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন, প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক ভাতার টাকা আত্মসাৎ করেছে। এভাবে এলাকার অসংখ্য মানুষ তার দ্বারা জুলুম, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছে। আমরা তার উপযুক্ত বিচার চাই।

মরজাল ইউনিয়ন পরিষদের ১, ৩ ও ৪নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য রেহেনা বেগম বলেন, সানজিদা সুলতানা নাসিমা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর এক বৎসর ভালোই ছিল। এরপর থেকে তার মাথায় কি আজরাইল ঢুকল বলতে পারব না। এক বৎসর পর থেকে টিআর, কাবিখা, বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, ১% টাকা ও মেম্বারদের স্বাক্ষর জাল করে স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা ও রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলনসহ সকল ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে দুর্নীতি শুরু করে।

সে আমার নাম করে দুকুন্দী ৪নং ওয়ার্ডে তিন লাখ ৯৪ হাজার টাকা মূল্যের একটি রাস্তা নির্মাণের সমুদয় অর্থ তুলে নেয়। তার বাসায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নিয়মিত যাতায়াত থাকায় তাদের ভয়ে আমি আমার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাইনি।

মরজাল ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ক্ষমতার লোভ এখনো তার পিছু ছাড়েনি। প্রতিপক্ষকে শেষ করে দিতে তিনি তার ভাড়াটিয়া বাহিনী দিয়ে আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। এলাকাবাসীর দোয়া ও ভালোবাসায় দীর্ঘ তিন মাস ঢাকার নিউরো সাইন্স হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে একটু ভালো আছি। তবে আঘাতের কারণে পূর্বের অনেক কথা ও স্মৃতিই তিনি মনে করতে পারছেন না বলে ও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সানজিদা সুলতানা নাসিমা'র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ সকল বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনার মুখ থেকেই আজ প্রথম শুনলাম। আমি জানি না কে আপনাকে দিয়ে আমার নিকট ফোন করিয়েছে!

তার দাবি, আপনারা পারলে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো আমার সামনে হাজির করুন নতুবা আমার বিরুদ্ধে থানায় অথবা কোর্টে মামলা করে দেন।

এ দিকে আগামী সম্মেলনে ইউনিয়ন আ. লীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নিতে এরই মধ্যে সানজিদা সুলতানা নাসিমা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সানজিদা সুলতানা নাসিমা মরজাল ইউনিয়ন আ. লীগের সভাপতির পদ বাগিয়ে নিতে পারলে মরজাল ইউনিয়নকে সে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করবেন বলে মত এলাকাবাসীর। তাই তাকে দলীয় কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব না দেওয়ার জন্য আ. লীগের জেলা-উপজেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান স্থানীয়রা।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড