রফিক, গাইবান্ধা
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুর পর তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয় প্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ নানা ভাবে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা।
এ দিকে দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকে তদবিরে ব্যস্ত। ফজলে রাব্বীর আসনে কে হবেন নৌকার মাঝি? এবার তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিগত এগারটি নির্বাচনে পাঁচবার জাতীয় পার্টি, চারবার আওয়ামী লীগ ও দুইবার বিএনপি জয়ী হয়। উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়নে ভুল করলে আসনটি জাপার (এরশাদ) হাতে চলে যেতে পারে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৭৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের মোট এগারটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে পাঁচবার জাতীয় পার্টি, চারবার আওয়ামী লীগ ও দুইবার বিএনপি জয়ী হয়। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের ওয়ালিউর রহমান ও ১৯৭৯ সালে (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির রোস্তম আলী মোল্লা এবং ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির মতিউর রহমান (পরে তিনি মারা যান) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এরপর ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির টিকিটে পরপর চারবার (১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ (১২ জুন) সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন মরহুম ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের আইন প্রতিমন্ত্রী মনোনীত হয়েছিলেন। এরপর ফজলে রাব্বী মিয়া দল বদলান। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে প্রথমবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে দল বদলানো ফজলে রাব্বী হেরে যান। সেই সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ।
এ আসনে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ফজলে রাব্বী মিয়া। দীর্ঘ ৪৫ বছর পর তিনি আসনটি আওয়ামী লীগকে উপহার দেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মনোনীত হন।
এ আসনের উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, মরহুম ফজলে রাব্বীর মেয়ে ফারজানা রাব্বী ও ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ।
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দুইটি ধারায় বিভক্ত। দুই উপজেলায় পৃথক কমিটি ছিল। একটি মরহুম ফজলে রাব্বী সমর্থিত আরেকটি মাহমুদ হাসান সমর্থিত। এখনো এ দ্বন্দ্ব বিদ্যমান।
মাহমুদ সমর্থিত নেতারা দাবি করেন, ফজলে রাব্বী বেঁচে থাকতে প্রতিটি নির্বাচনে মাহমুদ হাসান দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। মনোনয়ন না পেয়েও তিনি নিজে সক্রিয় থেকে দলকে চাঙ্গা রেখেছেন। মাহমুদ হাসান বলেন, তিনি ২০০৬ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ২০১১ সালের ১১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। এ সুবাদে দুই উপজেলার তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে তাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের মুল নেতৃত্ব তার সঙ্গে কাজ করছে। তাদের সঙ্গে নিয়ে এলাকার উন্নয়ন করেছেন। তিনি জনপ্রিয়তায় এগিয়ে আছেন। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন। উপ নির্বাচনে মনোনয়ন পেলে তিনি আসনটি পুন:উদ্ধার করতে পারবেন।
এ দিকে বাবা ফজলে রাব্বীর অসুস্থতা ও গত ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হওয়ার পর ফারজানা রাব্বী রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। মরহুম বাবার সুখ্যাতি কাজে লাগিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
ফজলে রাব্বী সমর্থিতরা বলেন, সাতবার সংসদ সদস্য ও দুই দফায় ডেপুটি স্পিকার হিসেবে রাব্বী রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। বাবার সফলতা মেয়েকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
ফারজানা রাব্বী বলেন, দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি শতভাগ আশাবাদী। নির্বাচিত হলে বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করবেন। বাবা যে সাঘাটা-ফুলছড়িকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন, যে মডেল টাউন করবেন, সেই স্বপ্ন পূরণ করতে তার এখানে আসা।
অপর দিকে মাহমুদ হাসানের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন জিএম সেলিম পারভেজ। তার খ্যাতি কাজে লাগিয়ে সেলিম পারভেজ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি মাহমুদ হাসানকে দলীয় মনোনয়ন দিতে আন্দোলন করেছেন। আসন্ন উপ-নির্বাচনে ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সেলিম পারভেজ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
সেলিম পারভেজ বলেন, চেয়ারম্যান হয়ে অনেক উন্নয়ন করেছেন। সংসদ সদস্য হলে উন্নয়ন করার পথ আরও সুগম হবে। তাই মনোনয়ন চাইবেন। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি আশাবাদী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়নে ভুল করলে আসনটি জাপার (এরশাদ) হাতে চলে যেতে পারে। কারণ উপ-নির্বাচনে জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা, গাইবান্ধা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক আতাউর রহমান সরকার এবং সাঘাটা উপজেলা জাপার সভাপতি, পরপর দুইবার নির্বাচিত সাঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম শহীদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
জাপা নেতারা মনে করেন, আতাউর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং গোলাম শহীদ উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে এলাকায় জাপার ইমেজ বেড়েছে। এছাড়া আসনটি দীর্ঘদিন জাপার দখলে ছিল। জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ২০০১ সালে এখানে সংসদ সদস্য ছিলেন। জাপা এখন সুসংগঠিত।
আতাউর জানান, তিনি জেলা পরিষদ থেকে সাঘাটা-ফুলছড়ির ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এ জন্য তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। মনোনয়ন পেলে ও উপ-নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আসনটি জাপাকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন। গোলাম শহীদও দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। তিনিও একই কথা বলেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড