• বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ২০ আশ্বিন ১৪৩০  |   ২৬ °সে
  • বেটা ভার্সন

সর্বশেষ :

sonargao

অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ডে কোটি টাকার চাঁদাবাজি

  মো. আকাশ, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

০৯ আগস্ট ২০২২, ১৩:১৭
অবৈধ ট্রাক স্ট্যান্ডে কোটি টাকার চাঁদাবাজি
শিমরাইল মোড় ট্রাক স্ট্যান্ড (ফাইল ছবি)

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জ অংশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান শিমরাইল মোড়। গুরুত্বপূর্ণ এ মোড়টি চিটাগাংরোড নামে পরিচিত। তবে এ মোড়ের অবৈধ ট্রাক-স্ট্যান্ড থেকে কোটি টাকার চাঁদা বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভারভ্যান (পিকআপ) মালিক সমিতির শিমরাইল শাখার সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলার বিরুদ্ধে।

জানা যায়, ক্ষমতার দাপটে শিমরাইল মোড়ের সড়ক ও জনপথ ভাগেবির জায়গা দখল করে ট্রাক-স্ট্যান্ড থেকে বছরে কোটি টাকার মতো চাঁদা আদায় করা হয় দেলোয়ার হোসেকে দেলার নামে। তার এই চাঁদাবাজ সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে একাধিক সন্ত্রাসী বাহিনীও পালেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন না থাকলেও চাঁদাবাজিতে খুব বেশি পারদর্শী দেলা। ট্রাক-স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন ভাবে চাঁদাবাজি করে বহু টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। দেলোয়ার হোসেন দেলা নিজে চলেন বিলাসবহুল গাড়ীতে।

ট্রাক মালিক সূত্রে জানা যায়, শিমরাইল মোড়ের ট্রাক টার্মিনালে আনুমানিক ৫০০টি ট্রাক ও পিকআপ রয়েছে, যেখানে প্রতিটি ট্রাক ও পিক-আপ থেকে মাঠ-সংস্করণ ফি নামে ৩০ টাকা করে বছরে ৫৪ লাখ টাকা, বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান (পিক-আপ) মালিক সমিতির নামে দৈনিক সার্ভিস চার্জ বাবদ ৫০ টাকা করে বছরে ৯০ লাখ টাকা, নাইট গার্ড ফি বাবদ ৩০ টাকা করে ৫৪ লাখ টাকা, আন্তঃ জেলার নামে ৩০ টাকা করে বছরে আরও ৫৪ লাখ টাকা। শুধু টার্মিনালের ভিতর থেকে চাঁদা আদায় হয় মোট দুই কোটি ৫২ লাখ টাকা।

তাছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টার্মিনালের বাহিরে আরও তিনটি জায়গা থেকে চাঁদা উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে এই দেলোয়ার হোসেনের দেলার বিরুদ্ধে।

শিমরাইল ড্যানিশ রোডে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০টি গাড়ী প্রবেশ করে, এসব গাড়ী থেকে প্রতিদিন ১১০ টাকা, রিনালয় সিএনজি পাম্পের পূর্ব পাশে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ গাড়ী প্রবেশ করে এ সকল গাড়ী থেকে প্রতিদিন ১১০ টাকা ও কাঁচপুর সেতুর নিচ দিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ অংশে গাড়ী আসা যাওয়ার জন্য চাঁদা দিতে হয় প্রতিটি ট্রাক ও পিকআপ চালকদের।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ট্রাক চালক জানান, প্রতিদিন স্ট্যান্ড থেকে গাড়ী বাহির করতে গেলেই আগে ৩০ টাকা রেখে দেয়। টাকা দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, দারোয়ান বিলের জন্য এই টাকা নেওয়া হয়।

আব্দুস ছালাম নামে এক ট্রাক চালক জানান, একদিন রাতের বেলা গাড়ী লক করে চা খেয়ে এসে দেখি আমার মোবাইল চুরি হয়ে গেছে। তাহলে দারোয়ানের টাকা দিয়ে লাভ কি।

আলাউদ্দিন নামে এক পিক-আপ চালক জানান, স্ট্যান্ডে গাড়ী রাখার লেইগা সংস্করণ ফি/উন্নয়ন ফি এর কথা কইয়া ৫০ টেকা কইরা নিয়া যায়, কিন্তু কোনো উন্নয়ন আর করে না। একটু বৃষ্টি আইলেই গাড়ীর চাক্কা ডাইব্বা জায়গা পানি উঠ্যা জায়গা মাঝে মাঝে বেশি বৃষ্টি হইলে মেইন রাস্তায় নিয়া গাড়ী রাখতে হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভারভ্যান (পিকআপ) মালিক সমিতির শিমরাইল শাখার সভাপতি দেলোয়ার হোসেকে একাধিকবার ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভারভ্যান (পিকআপ) মালিক সমিতির শিমরাইল শাখার যুগ্ম সম্পাদক মামুন হাওলাদার বলেন, টার্মিনালের এই জায়গাটা এক সময় নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ইজারা দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ দাবি করেন, এই জায়গাটি তাদের এনিয়ে সিটি কর্পোরেশন ও সওজের মধ্যে একটি মামলা চলতেছে। যার কারণে এখন কেউ ইজারা দিতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে টার্মিনালের বেহাল অবস্থা। গাড়ী গুলো ঠিক মতন রাখতে পারছি না। আর এই পরিবহনগুলো যদি ট্রার্মিনালে না থাকতে পাড়ে তাহলে মহাসড়ক দখল করে রাখবে। আর আমাদের এই ট্রাক টার্মিনালে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ গাড়ী যাতায়াত, যার জন্য ট্রাক টার্মিনালে এই গাড়ী গুলোর সংস্কার বাবদ আমরা ৩০ টাকা করে নেই যা আমাদের হয় না।

তিনি বলেছেন, স্থানীয় কাউন্সিলর সরকারি ভাবে যদি সিটি কর্পোরেশন থেকে আমাদের উন্নয়ন ফি বাবদ কিছু দিতেন তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়।

নাসিক ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুর উদ্দিন মিয়া জানান, ট্রাক টার্মিনাল সিটি কর্পোরেশনের জায়গা না এটি সওজের জায়গা এই বিষয়ে তারা দেখবেন আমাদের কিছু দেখার নাই।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাখাওয়াত হোসেন শামীম জানান, আমাদের এ জায়গায় আগে থেকেই ট্রাক-স্ট্যান্ড আছে। দীর্ঘদিন ধরে এখানে তারা ট্রাক-স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। আমারা পরিকল্পনা করেছি এখানে কাজ ধরবো। তবে এটি আর বেশি-দিন এভাবে থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, সামনে আমাদের একটি মেঘা প্রজেক্ট আছে তখন এখানে রাস্তা আরও বড় হবে এবং দুপাশে ডিভাইডার হবে। তখন সেখান দিয়ে কোনো গাড়ী ঢুকতে পারবে না। আর এখানে কোনো ট্রাক স্ট্যান্ডও থাকবে না।

র‍্যাব-১১ এর উপ-পরিচালক এ কে এম মনিরুল আলম বলেন, সু-নির্দিষ্ট তদন্ত করে এদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড