মোস্তাকিম আল রাব্বি সাকিব, মনিরামপুর (যশোর)
চলতি বছরে পাটের আবাদ বৃদ্ধি ও পাটের বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটলেও পানির অভাবে পাট জাঁগ দেওয়া (পচানো) নিয়ে বিপাকে পড়েছেন যশোর জেলার পাট চাষিরা। তীব্র খরায় খাল-বিলসহ বিভিন্ন ডোবা, নালার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কাঁচা পাট কাটতে পারছে না এ অঞ্চলের পাট চাষিরা। কোথাও কোথাও পানির অভাবে খেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে পাটগাছ।
জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর, ঝিকরগাছা, শার্শাসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, ছোট বড় খাল-বিলসহ বিভিন্ন ডোবা ও নালার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় প্রান্তিক কৃষকরা সোনালি আশেঁর পাট কাটতে পারছে না। অনেকেই আবার ভারি বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন ডোবা-নালায় পানি ভরাট হওয়ার আশায় পাট কাঁটা শুরু করলেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা না পেয়ে পানির অভাবে পাট জাঁগ দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অনেক কৃষক পাট কেটে জমির মধ্যেই রেখে দিয়েছেন পাটের আটি। আবার অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে শ্যালো মেশিন ও মোটরের পানি দিয়ে পাট জাঁগ দিতে গিয়ে বাড়তি খরচের কারণে লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা। সেচ দিয়ে জাগ দিয়ে প্রতি বিঘায় খরচ হচ্ছে বাড়তি ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। এমন অবস্থায় চাষ বৃদ্ধি ও ভালো ফলন হলেও লাভের জায়গায় লোকসান গুনতে হবে বলে জানান এ অঞ্চলের পাট চাষিরা।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী- এ বছর যশোর জেলায় পাটের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ হাজার ২০০ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ২৪ হাজার ৮৮০ হেক্টর। এরই মধ্যে কর্তন করা হয়েছে ১ হাজার ৭৪১ হেক্টর জমির কাঁচা পাট।
বৃষ্টির অভাবে এক দিকে চাষিরা যেমন রয়েছে মহাবিপদে; অন্য দিকে কৃষকরা রোপা আমন ধানও বুনতে পারছেন না। পাট কেটে ওঠানোর পরপরই জমিতে চাষ দিয়ে রোপা আমন ধান বুনেন কৃষকেরা। আর তাই সোনালি আঁশ এখন কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি না থাকায় রোদে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হচ্ছে এসব কাঁচা পাট।
সদর উপজেলার কচুয়া গ্রামের পাট চাষি সাইদ দফাদার বলেন, এ বছর আমি আড়াই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে আমার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। এ দিকে বৃষ্টি কম হওয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। ফলে খরচ আরও ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা বেড়ে যাচ্ছে।
বাঘারপাড়া উপজেলার নারকেবাড়িয়া পাট চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় কোথায় পাট জাগ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত পানি নেই। সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এ বছর পাটের বাজারদর কম হয়ে গেলে আমাদের পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না।
মনিরামপুর উপজেলার চালুয়াহাটি শফিকুল ইসলাম টুলু গ্রামের বলেন, আমি দু-বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। শ্রমিক আর সেচ খরচ দিয়ে এ বছর ব্যায় বেশি। এ জন্য সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমরা যেন ন্যায্য মূল্যটা পাই।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক সৌমিত্র সরকার বলেন, এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় চাষিদের খরচ অন্যান্য বারের তুলনায় বেশি হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান বাজারমূল্য যা আছে তাতে চাষিদের লোকসান হবে না তবে দাম কমে গেলে চাষিরা সমস্যায় পড়বে।
কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা মিলবে, ঘরে উঠবে সোনালি ফসলের সোনালি আঁশ। প্রাপ্য মজুরি পেয়ে হাসি ফুটবে মুখে, এমন বিভোর স্বপ্নে বুক বেঁধে আছেন এই অঞ্চলের প্রান্তিক চাষিরা।
সম্পাদক: মো. তাজবীর হোসাইন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড