মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
নরসিংদীর শিবপুরে স্বামী মোফাজ্জল প্রধানকে (৩৮) হত্যার পর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন স্ত্রী ঝুনু বেগম (৩৫)। শুক্রবার (২২ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে ওই নারী থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
গত বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টার দিকে শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে সারারাত লাশের পাশে বসে থেকে শুক্রবার সকালে স্বামীর লাশ ঘরে রেখে তালা দিয়ে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন ঘাতক স্ত্রী ঝুনু বেগম। পরবর্তীকালে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে ওই নারীর স্বামীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মোফাজ্জল প্রধান (৩৮) শিবপুরের মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামের মৃত ওয়াজ উদ্দিন প্রধানের ছেলে। তার স্ত্রী একই এলাকার মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে। মোফাজ্জল রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন, অন্য দিকে ঝুনু বেগম স্থানীয় একটি তৈরি পোশাক কারখানার কর্মী ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, মোফাজ্জল ও ঝুনু একে অপরকে ভালোবেসে ২০ বছর আগে বিয়ে করেন। এর আগে ঝুনু বেগমকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছিলেন তার মা–বাবা। কিন্তু বিয়ের দুই দিনের মাথায় ওই স্বামীকে ছেড়ে ভালোবাসার টানে প্রেমিক মোফাজ্জলের কাছে চলে আসেন তিনি। এই দম্পতির ১৭ বছর বয়সী একজন ছেলে রয়েছে।
ওই নারীর বরাতে পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘরের আলমারিতে জমানো কিছু টাকা স্ত্রী ঝুনু বেগমের কাছে চেয়েছিলেন মোফাজ্জল। কিন্তু স্ত্রী ঝুনু বেগম ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এরপর কথা–কাটাকাটির এক পর্যায়ে ঘরে থাকা একটি শাবল নিয়ে আসেন মোফাজ্জল। ওই শাবল দিয়ে আলমারি ভাঙতে গেলে মোফাজ্জলকে বাধা দেন ঝুনু বেগম। পরে ওই শাবল নিয়ে স্ত্রী ঝুনু বেগমের ওপর আক্রমণ করতে আসেন তিনি। এ সময় উভয়ের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি হয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তার হাত থেকে শাবলটি ছিনিয়ে নেন ঝুনু। উত্তেজিত অবস্থায় ওই শাবল দিয়ে স্বামীর মাথায় পরপর তিনটি আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মোফাজ্জলের।
পরে সারারাত স্বামীর লাশের পাশেই বসে ছিলেন ঝুনু বেগম। রাত পেরিয়ে সকাল হলে ওই ঘরে তালা দিয়ে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে শিবপুর মডেল থানায় আসেন ঝুনু বেগম। পরে সহকারী উপ পরিদর্শক জিয়াউর রহমানের কাছে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন তিনি। এ সময় বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়াকে জানানো হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পরে দুপুরে ঘরের তালা ভেঙে মোফাজ্জলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত মোফাজ্জলের স্বজন ও প্রতিবেশী রিপন প্রধান বলেন, নিহত মোফাজ্জল আমার বড় ভাইয়ের শ্যালক ছিলেন। গত রাতে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে অথচ আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত আমরা কেউ কিছুই টের পাইনি। ঝুনু বেগম নিজেই ওই ঘরে তালা মেরে সকালে থানায় গিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পুলিশকে জানিয়েছে। পরে থানা থেকে খবর নেওয়া হলে আমরা বিষয়টি জানতে পারি। মোফাজ্জল ও ঝুনুর প্রেমের বিয়ে হলেও অভাবের কারণে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল।
শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছেন ঝুনু বেগম। তিনি এখন থানা হাজতে আটক আছেন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শাবলটিও উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সম্পাদক: মো. তাজবীর হোসাইন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড