হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপূত্র ও ধরলা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বিকালে ব্রহ্মপূত্র নদের পানি ২৬ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি ২৭ সেন্টিমিটার কমে গিয়ে ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি কমার সাথে সাথে স্বস্থি ফিরে আসছে বানভাসীদের মাঝে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, এবারের বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার ৪৯টি ইউনিয়নের প্রায় ৩১৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে পানিবন্দি হয়ে পরে ১ লাখ ৫২ হাজার ৩৩৮ জন মানুষ। এতে বন্যায় তলিয়ে যায় ১৫ হাজার ৮৫১ হেক্টর ফসলি জমিন।
মাছের ক্ষতি হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার। বন্যায় পাঠদান বন্ধ হয়ে যায় মোট ১২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। বন্যায় ৯৪৪টি নলকুপ ও ৩০২টি লেট্রিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
টানা বন্যায় ঘরবন্দী মানুষ পরেছে ভীষণ ভোগান্তির মধ্যে। এখনো অনেক বাড়ীতে নলকুপ-লেট্রিন তলিয়ে গেছে। নষ্ট হয়ে গেছে গবাদি পশুর খড়। ফলে গো-খাদ্য আর বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন তারা। বাড়ীর বয়স্ক ও নারীরা স্বাভাবিকভাবে লেট্রিন ব্যবহার করতে না পেরে ভীষণ বিপাকে রয়েছে।
শুকনো জালানি না থাকায় অনেক কষ্ট করে রান্না করতে হচ্ছে তাদেরকে। ফলে এক বেলা রান্না করে সেই রান্না দিয়ে দিন পার করছেন তারা। জেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছে বানভাসী মানুষ।
অনেকে অভিযোগ করছেন, ত্রাণ দেয়া তো দুরের কথা; এখন পর্যন্ত কেউ তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না। বিশেষ করে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ কাজ না পেয়ে রয়েছে চরম বিপাকে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের নুরানী পাড়া গ্রামের খাদিজা বেগম জানালেন, নলকুপ ডুবি গেইছে। সেই পানি সবাই খাবার নাগছি। পায়খানা তলে গেইছে বয়ষ্ক মানুষ আর বউ-ঝিদের খুব সমস্যা হইছে।
এই এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ীতে পানি উঠেছে। অনেকে রাতে সড়কে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেই সড়কেও নেই নলকুপ ও লেট্রিনের ব্যবস্থা। ফলে বানভাসী মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে।
সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের আকবর আলী জানান, ৫-৬ দিন থাকি পানিত পরি আছি। বাড়িত থাকি বের হবার পারছি না। খুব কষ্টোত আছি।
সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চর বড়াইবাড়ি এলাকার আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যার কারণে কাজকর্ম বন্ধ ঠিকমত বাজার করতে পারছি না। খাওয়া দাওয়ার সমস্যায় পরছি। পানিতে চলাফেরা করতে করতে পায়ে ঘা হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বাতেন সরকার জানান, সরকারিভাবে আমার ইউনিয়নের জন্য চার টন চাল পেয়েছি তা বুধবার ১০ কেজি করে বিতরণ করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক বানভাসী মানুষকে দেয়া সম্ভব হয়নি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, চলতি বন্যায় প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত ৫৩৮ মেটিকটন চাল, ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার উপ-বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ওডি/কেএইচআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড