রাকিব হাসনাত, পাবনা
পাবনার ভাঙ্গুড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আন্তঃবার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে দাওয়াত না করায় চেয়ারম্যানের নির্দেশে দুই শিক্ষককে পেটালো তার ক্যাডার বাহিনী। পরে এই ক্যাডার বাহিনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুর করে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়।
শনিবার (২৮ মে) সন্ধায় হাবিবুর রহমান নামের এক শিক্ষক বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনোয়ার খান মিঠুর নির্দেশে এই মারধর ও হামলা চালানো হয় বলে ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষকরা অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, খানমরিচ ইউনিয়নের ২৮ টি বিদ্যালয়কে দুটি ভাগে বিভক্ত করে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে আজ (শনিবার) ইউনিয়নের চন্ডিপুর খেলার মাঠে চৌদ্দটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশে বাহিরের অতিথিদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে বিদ্যালয়ের প্রবীণ প্রধান শিক্ষকরা সকাল ৯ টায় এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।
এদিকে, এদিন সকাল সোয়া দশটার দিকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনোয়ার খান এই অনুষ্ঠানে এসে দাওয়াত না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেসময় শিক্ষকরা তাকে বসতে বললেও তিনি চলে যান। কিছুক্ষণ পর শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে প্রধান শিক্ষকরা খেলার মাঠের পাশে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মনোয়ার খানের নির্দেশে তৌকির, মাসুদ ও আবুল কালামসহ কয়েকজন যুবক বাঁশের লাঠি দিয়ে দাসমরিচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে (৫৭) পেটায়। এ সময় অন্য শিক্ষকরা দৌঁড়ে পালিয়ে রক্ষা পায়।
পরে সাড়ে দশটার দিকে তৌকির, মাসুদ ও আবুল কালামসহ প্রায় ১৫ জন যুবক লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা চালিয়ে মাঠের মঞ্চ ভাঙচুর করে। এই হামলায় চন্ডিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুনসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়। এর পরপরই মাঠ থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা চলে গেলে অনুষ্ঠান পণ্ড হয়ে যায়।
সুলতানপুর বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাসিনুজ্জামান স্বপন বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তার পরামর্শে অনুষ্ঠানে বিশেষ ব্যক্তিদের দাওয়াত করা হয়নি। চেয়ারম্যানকে আগামী ৩০ তারিখ চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় দাওয়াত করা হয়েছে। কিন্তু এই তুচ্ছ কারণে শিক্ষকদের মারধর করে চেয়ারম্যান এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো। বর্তমানে এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দাসমরিচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, ফাইনাল খেলা প্রতিযোগিতার দিন চেয়ারম্যানকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হলে সেই জন্য তাকে উদ্বোধনের দিন দাওয়াত দেওয়া হয়নি। সেজন্য চেয়ারম্যান আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তার লোকজন দিয়ে মারধর করিয়েছেন। এটি শিক্ষক সমাজের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর। ইউএনও স্যারের নিকট অভিযোগ দিয়েছি। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তি দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে চেয়ারম্যান মনোয়ার খানের মোবাইল ফোনে অন্তত চারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি অন্য একটি নাম্বার থেকে ফোন করা হলে তিনি বক্তব্য দিতে পারবেন না বলে জানান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি জানার পরেই থানা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে জানানো হয়েছে এবং থানা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে প্রক্রিয়া করা হচ্ছে।
ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ভুটভুটি উল্টে খাদে, গরু ব্যবসায়ীর প্রাণহানি
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাহিদ হাসান খান জানান, চেয়ারম্যানকে দাওয়াত না দেওয়ায় তার লোকজন শিক্ষকদের মারধর করেছে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওডি/এমকেএইচ
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সহযোগী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড