শফিয়েল আলম সুমন, ময়মনসিংহে
ময়মনসিংহে ভ্রমনপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জয়নুল আবেদিন উদ্যান। আর জনপ্রিয় হবে না কেনো কি নেই উদ্যানে। ময়মনসিংহ সিটি করপেরোশন জয়নুল আবেদিন সংগ্রহ শালা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার স্থানকে জয়নুল উদ্যান নামে সংরক্ষিত করে চিত্তবিনোদনের জন্য শিশু কিশোরসহ নানা বয়সী মানুষের ব্রক্ষপুত্রের বুকে নানান বৃক্ষের সমারহ ঘটিয়েছে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা মিনি চিড়িয়াখানা, দোলনা, ট্রেন, ম্যাজিক নৌকাসহ বিভিন্ন রাইড।
উদ্যানের বাইরে নাগরদোলা, চরকি, ঘোড়ার গাড়ি টমটমে ঘুরে বেড়ানো সহ আরও অনেক কিছু। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন পার্কের মেইন গেইট হতে কাচারি জিরো পয়েন্ট মোড় সংলগ্ন অবস্থিত প্রায় ৪০০ মিটার ওয়াকওয়ে রাস্তা এবং তার পাশেই ২৭০ টি গার্ডেন বাতি স্থাপন করে উদ্যানকে আরও উজ্জ্বল করে দিয়েছে। তবে বক্ষপুত্র নদ ড্রেজিং সম্পন্ন হলে আরও সৌন্দর্য বর্ধিত হবে বলে অনেকে মনে করেছেন।
মিনি চিড়িয়াখানায় আছে ভালুক, বানর, সজারু, খরগোশ, ময়ূর, উটপাখি,গাধা, ধনেশ, কুমিরছানা, হরিণ, অজগর সাপ, ঘুঘু, বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখি। মিনি চিড়িয়াখানার টিকিটের মূল্য ৩০ টাকা। রাইডগুলোতে চড়তে হলে ৩০ থেকে ৫০ টাকার টিকিট কাটতে হয়।
উদ্যান এলাকার একাধিক ঘাটে আছে বাহারি ও রঙিন পালতোলা নৌকার সারি। এগুলো ভাড়া ঠিক করে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ভেসে আসতে পারেন ভ্রমণপ্রেমীরা। এছাড়া আছে ব্রহ্মপুত্র নদমুখী টাইলসে মোড়ানো বসার জায়গা, নামাজখানা, বৈশাখী মঞ্চ, ভাষা সৈনিক মোস্তফা মতিন পাঠাগার ও টয়লেটসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।
ভেতরে-বাইরে রয়েছে অসংখ্য চটপটি, ফুসকা ও চা-কফির দোকান। উদ্যানের ভেতরে শিশু-কিশোরদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে দোলনায় চড়াসহ বিভিন্ন বিনোদনের সুযোগ। শিশুদের খেলনাসহ নানান পণ্য সামগ্রীর পসরাও সাজিয়ে বসেছে অনেক হকার।
এক সময় কাচিঝুলি সাহেব কোয়ার্টার সংলগ্ন এই জায়গার নাম ছিল উমেদ আলী পার্ক। ব্রিটিশ শাসনামলে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের নৈসর্গিক পরিবেশের এই পার্কের পাশেই ছিল ময়মনসিংহ কালেক্টরটে কর্মরত ইংরেজ সাহেবদের বাস ভবন গুলো। সেই থেকে সাহেব কোয়ার্টার হিসেবে পরিচিতি পায় এলাকাটি। ময়মনসিংহ নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ বরাবর পশ্চিম দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার পেরিয়ে সড়কটি চলে গেছে সার্কিট হাউস মাঠ হয়ে কাচিঝুলি মোড়ে। এর মধ্যে কাচারি ফেরিঘাট থেকে কাচিঝুলির শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন জাদুঘর পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র পাড়ের প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গাই উমেদ আলী পার্ক হিসেবে বিবেচিত।
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ব্রহ্মপুত্রের বুকে পালতোলা নৌকা, মাঝিদের গুণ টানা, চরের মানুষের জীবন-জীবিকা, নদী পারাপারের অপেক্ষাসহ ময়মনসিংহে বসে অসংখ্য ছবি এঁকেছেন। শিল্পাচার্যের দুর্লভ সব শিল্পকর্ম নিয়ে জয়নুল সংগ্রহশালা তথা জয়নুল জাদুঘর এই ব্রহ্মপুত্র পাড়েই অবস্থিত। জয়নুল জাদুঘর আধুনিকায়ন করে শিল্পাচার্যের অসংখ্য দুর্লভ শিল্পকর্ম ও ছবি রাখা হয়েছে। এক সময় শিল্পাচার্যেও ৭০ টি ছবি নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে জয়নুল আবেদিনের আঁকা ৬১ টি মৌলিক শিল্পকর্ম, ১ টি শিল্পকর্মের ডিজিটাল অনুকৃতি,তাঁর ও ব্যবহৃত ৮০ টি নিদর্শন ও ৫৩ টি আলোকচিত্র রয়েছে।
অধ্যক্ষ শাহ মোস্তফা নুরসহ অনেকে জানান জয়নুল উদ্যান কে সৌন্দর্য বর্ধিত করতে মেয়র ইকরামূল হক টিটু কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন ওয়াক ওয়েতে বাইক চলাচল না করতে পারে তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
শেরপুরের বাসিন্দা মার্কেটিং অফিসার ফজলে লোহানী রিপন পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে জায়গাটির নিরাপত্তা ও সৌন্দর্যে মুগ্ধ। তিনি বলেন,পালতোলা নৌকায় ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ভেসে বেড়ানোর আনন্দই আলাদা। অতিরিক্ত আনন্দ হিসেবে বাচ্চাদের শিল্পাচার্যের শিল্পকর্ম দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া। জয়নুল উদ্যানের ভেতর মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানচলাচল নিষিদ্ধ করেছে সিটি করপোরেশন। ফলে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা স্বস্তি পাচ্ছেন। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় নজরদারি অব্যাহত আছে।
এছাড়া আইনশৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যরা পোশাকে ও সিভিল পোশাকে নজরদারিতে রাখছেন পুরো পার্ক এলাকা। নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যার পর পার্ক এলাকায় থাকার অনুমতি নেই।
ওডি/ওএইচ
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সহযোগী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড