নাজির আহমেদ আল-আমিন, ভৈরব
কিশোরগঞ্জের ভৈরব থানা কমপ্লেক্সের ভিতর থেকে মামলা ও জিডিমূলে পুলিশের জব্দ করা বিভিন্ন ধরণের পরিত্যক্ত যানবাহন গোপনে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের এক এসআইয়ের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের নাম আবু সাঈদ। তিনি ভৈরব থানার মালখানার দায়িত্বে রয়েছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৭ ও ২৮ মার্চ এবং ১৫ এপ্রিল তিন দফায় ভৈরব থানা কমপ্লেক্সের ভিতরে রাখা জব্দকৃত বিভিন্ন ধরনের পরিত্যক্ত যানবাহনের মধ্যে মালিকানাহীন অন্তত ১৪টি যানবাহন অন্যত্র সরিয়ে বিক্রি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ওই যানবাহনের মধ্যে ৬টি প্রাইভেটকার, ৫টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ৩টি মোটরসাইকেল রয়েছে। জব্দকৃত ওই গাড়িগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে অন্তত ১০ লাখ টাকা বিক্রি করার অভিযোগ উঠলেও পুলিশ বলছে, আদালতের অনুমতি নিয়েই আইন অনুযায়ী মাত্র ৩টি গাড়ি প্রকৃত মালিকদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। আর বাকি গাড়ির বিষয়ে কিছু জানেন না বলেই দাবি করছে পুলিশ। এ ঘটনাটি নিয়ে ভৈরব থানার পুলিশ সদস্যসহ বিভিন্ন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনার তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানার একাধিক পুলিশ অফিসার জানান, মহামান্য রাষ্ট্রপতি কিশোরগঞ্জ সফরের সময় ভৈরব থানার অধিকাংশ অফিসার ও স্টাফ দায়িত্ব পালনের জন্য ইটনা, মিঠামইনে ও অষ্টগ্রামে চলে যায়। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভৈরব থানার মালখানার অফিসার এসআই আবু সাঈদ রেকার ব্যবহার করে গত ২৭ ও ২৮ মার্চ দুপুরে ৬টি প্রাইভেটকার ও ৩টি মোটরসাইকেল থানা ডাম্পিং থেকে বের করেন। পরবর্তীতে একই কায়দায় সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় ৫টি সিএনজি চালিত অটোরিকশা আদালতের অনুমতি আছে এমন অজুহাতে থানা কমপ্লেক্সের ভিতরের ডাম্পিং থেকে রেকারের মাধ্যমে ট্রাকে উঠিয়ে গাড়িগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
গাড়িগুলোর বেশিরভাগই ঢাকার চোরাই ও পুরাতন গাড়ি ক্রয়ের সিন্ডিকেটের কাছে আনুমানিক ১০লাখ টাকা বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা যায়।
ঘটনার দিন ২৭ ও ২৮ মার্চ দিনের বেলা থানায় ডিউটি অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এএসআই ছাব্বির এবং ১৫ এপ্রিল থানায় ডিউটি অফিসার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন এসআই আসমা আক্তার। তারা বলছেন, সবার চোখের সামনে ঘটনা ঘটলেও থানার অন্যান্য স্টাফরা ভেবেছে গাড়িগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতেই আসল ঘটনা প্রকাশ পেকে এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিষয়টি এখন লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই আবু সাঈদের সঙ্গে আরও কিছু পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলেও গুঞ্জন উঠেছে। এছাড়া অভিযুক্তরা গাড়ি বিক্রির বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছে বলেও একটি সূত্র থেকে জানা যায়।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে দাবি করছেন সচেতন মহলের লোকজন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এসআই আবু সাঈদ বলেন, আদালতের অনুমতি নিয়ে ১টি মোটরসাইকেল, ১টি প্রাইভেটকার ও ১টি মাইক্রোবাসসহ মোট ৩টি গাড়ির প্রকৃত মালিকদের মুচলেকা নিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলটি মাদক মামলার। কবে কখন ৩টি গাড়ি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে তার তারিখ মনে নেই। কাগজপত্র না দেখে বলতে পারবো না।
তিনি বলেন, শুধু তিনটা না গাড়ির সংখ্যা আরও বেশিও হতে পারে। তবে ১৪টি গাড়ি বের হয়েছে এমন অভিযোগের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছি বলে থানারই কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে বিভিন্নভাবে প্রচার করছে।
তিনি আরও বলেন, আগে এসআই সালাম মালখানার দায়িত্বে ছিলেন। পরে আমি দায়িত্ব পাওয়ার পর বেশকিছু গাড়ি বের হয়েছে। প্রতিমাসেই তো গাড়ি বের হয়। আদালতের অনুমতি ছাড়া গাড়ি বের করার কোনো সুযোগ নেই। জব্দকৃত গাড়িগুলোর মামলা হোক আর জিডি হোক সবগুলোরই পিআর নম্বর দেওয়া হয়। আদালতের অনুমোদন পেয়ে যেগুলো বের হয় ওইগুলো পরবর্তী বছর বাদ দিয়ে মোট সংখ্যার পর থেকে নতুন জব্দকৃত গাড়ির পিআর নম্বর সিরিয়াল অনুযায়ী যুক্ত করা হয়।
মাদকের সঙ্গে জব্দকৃত মালিকবিহীন পরিত্যক্ত গাড়িগুলো কিভাবে ফেরত দেওয়া হয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিকবিহীন পরিত্যক্ত গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায়ের জন্য পুলিশকে আদালতে লিখিতভাবে জানাতে হয়। সেক্ষেত্রে, আদালত ইশতেহার জারির আদেশ দেন। থানার নোটিশ বোর্ডে ইশতেহার জারি করার কপি পেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার ৬ মাস পর মালিক খুঁজে না পাওয়া গেলে তা নিলামে বিক্রি করে সরকারি রাজস্ব আদায় করে আদালতে জমা দেওয়ার নিয়ম। আগের মালখানা অফিসার এসআই সালাম আদালতে অনেকগুলো গাড়ির প্রতিবেদন দিয়েছিল, সে গাড়িগুলোই মূলত এখন বের হচ্ছে।
এ সময় তিনি দাবি করেন, গাড়ি বিক্রি করার বিষয়টি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তবে তিনি কারও নাম বলতে চাননি। এই ঘটনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গোপন তদন্ত করছেন কি-না জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, কাগজের বাইরে কোনো গাড়ি বের হয়নি। কাগজ ছাড়া গাড়ি বের হয়েছে বিষয়টি সঠিক নয়।
এ বিষয়ে ভৈরব সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রেজওয়ান দিপু বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। পিআর করা গাড়ি কিছু হেরফের করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে এসপি স্যারকে জানাব।
কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মীর মাশরুকুর রহমান খালেদ (বিপিএম) মুঠোফোনে বলেন, আনঅফিশিয়ালি বিষয়টি জেনেছি। ঘটনা কতটুকু সত্য তা অনুসন্ধান করছি। ঘটনার সত্যতা প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ওডি/ইমা/এএম
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সহযোগী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড