তুষার আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গ্যাসের লিকেজ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে শিশুসহ একই পরিবারের ৪ জন দগ্ধ হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১০ মে) ভোর ৫টার দিকে ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে মো. কাউসারের টিনশেড বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।
দগ্ধরা হলো- ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া রিকশাচালক আনোয়ার হোসেন (৪০), তার স্ত্রী রোজিনা আক্তার (৩২), দুই ছেলে রোমান (১৫) ও রোহান (৮)। দগ্ধ অবস্থায় ৪ জনকে উদ্ধার করে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ইনইস্টিটিউটে পাঠায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
হাসপাতালে থাকা ওই বাড়ির মালিক কাউসার মুঠোফোনে জানিয়েছেন, দগ্ধদের মধ্যে আনোয়ার হোসেন ও তার শিশু পুত্র রোহানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে।
দগ্ধ আনোয়ারের ভাবি রুনা আক্তার দৈনিক অধিকারকে জানান, ‘আনোয়ার ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালাতেন। প্রতিদিনের ন্যায় আজ ভোরে ঘুম থেকে উঠে। একপর্যায়ে ঘরে সিগারেট জ্বালাতে গেলেই হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। ঘরের দরজা-জানালা সব বন্ধ ছিল। তাই ঘরে জমে থাকা গ্যাসের কারণেই ওই বিস্ফোরণ হয়েছে। এতে পরিবারের ৪ জনই ঝলসে যায়।’
বাড়ির ভাড়াটিয়া তুলি রানি দৈনিক অধিকারকে বলেন, ‘ভোর পাঁচটার দিকে বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। এরপর চিৎকার শুনতে পেয়ে দরজা খুলে দেখি একই বাড়ির ভাড়াটিয়া আনোয়ার ও তার স্ত্রী সন্তানরা দগ্ধ শরীর নিয়ে উঠোনের কোণে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে গড়াগড়ি ও চিৎকার করছে। তাদের ঘর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।’
তুলি রানি বলেন, ‘আমাদের চিৎকারে আশপাশের মানুষ এসে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয় এবং আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ পর আগুন নিভলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আসেন এবং তাদের চারজনকেই উদ্ধার করে এ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে হাসপাতালে পাঠান।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাড়িটির বর্তমান মালিকের নাম কাউসার। তিনি কয়েক বছর আগে জনৈক কুমকুম এর কাছ থেকে টিনশেড বিশিষ্ট ওই বাড়িটি ক্রয় করে ভাড়া দেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, টিনশেড বিশিষ্ট ওই বাড়ির ঘরের নিচ দিয়েই তিতাস গ্যাসের সার্ভিস লাইন টানা রয়েছে।
এ বিষয়ে বাড়ির ভাড়াটিয়া তুলি রানির স্বামী কেশব অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘরের নিচ দিয়ে যাওয়া তিতাসের ওই পাইপে লিকেজ ছিল। দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। বিষয়টি বাড়ির মালিক কাউসারকে একাধিকবার জানানো হলেও তিনি তা সংস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়নি। তার অবহেলায় এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।’
দগ্ধ আনোয়ার হোসেনের ভাবি রুনা আক্তার অভিযোগ করেন, ‘ওই বাড়ির পাশ দিয়ে অন্য বাড়ির একটি গ্যাস লাইন নেওয়া হয়েছে। পুরাতন সেই পাইপ লাইনটির রাইজার ছিল আনোয়ারদের ঘরের জানালার পাশে। সেখান থেকে সব সময়ই গ্যাস বের হতো। সবসময়ই গ্যাসের গন্ধ পেতেন তারা। বাড়ির মালিককে বারবার বলা হলেও মেরামত করেনি। ঠিক সময়ে মেরামত হলে এ দুর্ঘটনা ঘটতো না। এ জন্য তিনি বাড়িওয়ালাকে দায়ী করেন।’
এদিকে, অবহেলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাড়ির মালিক কাউসার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে হাসপাতালে ব্যস্ত রয়েছেন বলে ফোন কেটে দেন।
আরও পড়ুন : বৃষ্টির দাপটে আলু চাষিদের সর্বনাশ
ফতুল্লা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আলম হোসেন বলেন, ‘আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভান। এবং দগ্ধদের উদ্ধার করে নিজস্ব অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ইনইস্টিটিউটে পাঠান। বাড়ির পেছনে গ্যাস লাইনের রাইজারের লিকেজ থেকে আগুন লেগে বাড়িতে ছড়িয়ে যায়।’
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড