মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের চিহ্নিত মাদক কারবারি ফজলু ও তার সহযোগীদের মাদক ব্যবসা এখন জমজমাট। প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হওয়ায় ও মাদকের সহজলভ্যতায় বিপথগামী হচ্ছে স্কুল কলেজপডুয়া শিক্ষার্থী ও যুবসমাজ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিয়মিত মনিটরিং না থাকায় অবাধে প্রকাশ্যে তারা মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সবাই জানে, এলাকায় মাদকের মূল কারবারি কারা। থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও আছে। প্রশাসনের কাছে আছে তাদের বাসাবাড়ির ঠিকানাও। তারপরও তারা রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এমন মন্তব্য সচেতন চরাঞ্চলবাসীর।
স্থানীয়রা জানায়, রায়পুরা উপজেলার চর এলাকায় মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন পাড়াতলী ইউনিয়নের মধ্যনগর গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে ফজলু (২৭) ও শ্রীনগর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আসাবুদ্দীন (৫০)। তারা পার্শ্ববর্তী ভৈরব উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ইয়াবা, গাঁজা, পেথিডিন ও ফেনসিডিলের চালান নিয়ে এসে তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে এলাকায় বিক্রি করে। এলাকায় ফজলু মিয়া ও আসাবুদ্দীন ‘ইয়াবা সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। গাঁজা ও পেথিডিনের ব্যবসাও তাদের নিয়ন্ত্রণে। আর ফেনসিডিলের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন সফিকুল ইসলাম কেনা। কেনা সায়দাবাদ গ্রামে মাদক ব্যবসা করেন খুচরা দরে।
পুলিশ বলছে, মাদকের এই হোতাদের ধরতে তাদের তৎপরতা অব্যাহত আছে। সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা মাদক ব্যবসার মূলহোতা হিসেবে ফজলু মিয়া ও আসাবুদ্দীনের নাম উল্লেখ করেন। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের তালিকা মতে আসাবুদ্দীন আগেও একবার ইয়াবাসহ আটক হয়েছিল এবং ফজলুর নামেও থানায় মামলা রয়েছে। সে গত কিছুদিন আগে জাল দলিল তৈরি করে প্রতিবেশী মুন্সি মিয়া নামক এক বৃদ্ধার প্রায় দেড়শত বছর যাবৎ বাপ দাদার দখলীয় জমি জোরপূর্বক তার দখলে নেয়। এলাকায় ফজলু ও তার বাহিনীর ভয়ে সাধারণ মানুষ কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। এর আগেও মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে আসাবুদ্দীন ও তার পরিবারের হামলার শিকার হন রায়পুরা থানার তৎকালীন এসআই মফিজ।
এলাকাবাসীর তথ্যমতে, ফজলুর বাড়ি উপজেলার মধ্যনগর এলাকার দক্ষিণপাড়া। দীর্ঘদিন যাবৎ সে বাড়িতেই গোপনে ইয়াবার কারবার করতো। কারবারের তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে দিনের বেলা বাড়ির আশপাশ এলাকায় থাকলেও রাতে অন্যত্র লুকিয়ে থাকে। ফজলু শুধু ইয়াবা কারবারি নয়, জুয়া, দুর্বল শ্রেণির লোকদের জমি দখল, জাল দলিল তৈরিকরণ ও জাল স্ট্যাম্প সরবরাহ করা তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
আরেক মাদক কারবারি আসাবুদ্দীন। সেও বাড়িতে থেকেই ফেনসিডিল, ইয়াবার কারবার, জুয়া, গরুচুরি ও অবৈধ পথে মানবপাচারের ব্যবসা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরেই। তার এ ধরনের ব্যবসার তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে সে এলাকা ছেড়ে পার্শ্ববর্তী বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সুবহানপুর এলাকায় আশ্রয় নেয়।
গত শনিবার ও রবিবার এলাকায় গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, মাদক কারবারি আর স্থানীয় ও বহিরাগত ক্রেতাদের উৎপাতে পুরো এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তাদের প্রশ্ন, কারবারিরা চিহ্নিত হওয়ার পরও কেন ধরা পড়ছে না? প্রশাসন সবকিছু জানলেও এলাকায় কীভাবে মাদকের বিস্তার ঘটছে? প্রশাসনের নীরব ভূমিকা রহস্যজনক বলেও মন্তব্য করেন তারা।
স্থানীয়রা আরও জানান, আগে গোপনে বিক্রি হলেও এক বছর ধরে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে এলাকায়। আসাবুদ্দীন বাঁশগাড়ী, চরমধূয়া ও মির্জাচর, ফজলু মিয়া পাড়াতলী, শ্রীনগর ও চানপুরে মাদক বিক্রি করে থাকে। ইতোমধ্যে তাদের সাঙ্গপাঙ্গও তৈরি হয়েছে শতাধিক।
স্থানীয়রা বলেন, কোন এলাকায় কারা কারবার করে সেটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু কিছু কওনের নাই। কইলেই আমরা তাদের টার্গেট হইয়া যামু। তখন দেখা যাইব, আমাদের উপর উৎপাত শুরু হইয়া যাইব। এলাকায় বসবাস করাই আমাদের দায় হইয়া পড়ব।
এ ব্যাপারে রায়পুরা (এএসপি) সার্কেল সত্যজিৎ কুমার ঘোষের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ওডি/মাহমুদ
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সহযোগী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড