নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ)
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার বজ্রপুর গ্রামে লবা প্রামাণিকের মানসিক ভারসাম্যহীন চার ছেলে-মেয়ে ও সিংসাড়া গ্রামের বাসিন্দা মন্টু শিকলবন্দি থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ জীবনে ফিরতে শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন তাদের পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসার পর সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরানোর মানবিক মহানুভব কাজটি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকতেখারুল ইসলাম।
গেল প্রায় ১০ বছর যাবত শিকলবন্দি অবস্থাতে থাকায় তাদের স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানরা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। কেউবা আবার বিয়ে করে নতুনভাবে সংসার শুরু করেছেন। তারা নিচ্ছেন না অসুস্থ মানুষগুলোর কোনো খোঁজ-খবর। নিরুপায় বাবা-মা যখন সন্তানদের চিকিৎসা এবং ভরণ-পোষণে হিমশিম খাচ্ছিলেন; ঠিক তখনই গত বছরের ২২ মে গণমাধ্যমে ‘মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে শিকলে বন্দি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। মূলত ওই সংবাদের সূত্র ধরেই ইউএনও মানসিক ভারসাম্যহীন পাঁচজনকে গত বছরের ২৫ মে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করান।
সরেজমিনে জানা যায়, ব্রজপুর গ্রামের চাল-চুলোহীন ভাঙ্গা টিনের বেড়ার পুরনো ছাপরার কুঁড়েঘরে মা-বাবার সঙ্গে দিনাতিপাত করছে চার ভাই-বোন। অপর দিকে সিংসাড়া গ্রামে তালাক প্রাপ্ত মা জরিনা অসুস্থ মন্টুকে নিয়ে দুটি ছাগল বাড়ীতে রেখে ও মানুষের ঘরে-ঘরে গিয়ে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
শারীরিক সক্ষমতা ততোটা না আসলেও দুর্বল শরীর নিয়ে ধীরে ধীরে সাংসারিক কাজকর্মে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে এসব রোগীদের। আর কয়েক মাস নিয়মিত ওষুধ সেবন ও নিয়ম-কানুন মেনে চললে; দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন : নিখোঁজ সন্তানের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা
এতো কিছুর মাঝেও যখন গত ২ মে প্রধানমন্ত্রীর ইদ উপহার নিয়ে ইউএনও তাদের বাড়ীতে হাজির হয়েছেন; তখন তারা শত যন্ত্রণা ভুলে উৎসবের আনন্দে অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন।
কথা হয় অসুস্থ পাঁচ জনের সাথে। তারা বলেন, হাসপাতালে ভালো ছিলাম। সেখানে আমাদের বন্ধু-বান্ধবী হয়েছিল এবং একে অন্যের সঙ্গে মজার মজার গল্প ও খেলা করত। এখন আমরা শরীর ও হাতে-পায়ে শক্তি কম পাচ্ছি।
আরও পড়ুন : কোনোকিছুর কমতি নেই, এরপরও চোখে-মুখে বিষণ্ণতার ছাপ
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি মানুষের মানবাধিকারের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। পত্রিকার মাধ্যমে গত বছরের ২৫ মে বিষয়টি আমি অবগত হই। এরপর পাবনা মানসিক হাসপাতালে তাদের ভর্তি করি। বর্তমানে সকলেই সুস্থ হয়ে বাড়ীতে আছেন। ডাক্তাররা তাদের সবাইকে আর কয়েক মাস ওষুধ ও বিশ্রাম নিতে বলেছেন।
ওডি/কেএইচআর
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সহযোগী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড