নাসিম আজাদ, পলাশ (নরসিংদী)
বাংলা নববর্ষকে ঘিরে নির্ঘুম, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন পলাশের মৃৎশিল্পীরা। এবছর ১৪ এপ্রিল বাঙালির প্রাণের উৎসব নববর্ষ হলেও কিছুটা বাধ সাজতে পারে মাহে রমজান। আর এ নববর্ষে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসতে যাচ্ছে বর্ষবরণ মেলা। আর মেলায় চাহিদা থাকে নানা রকমের খেলনা, মাটির তৈরি তৈজসপত্রের।
বৈশাখী মেলাকে দৃষ্টিনন্দিত করতে মৃৎশিল্পীরা নিজের হাতে নিপুণ কারুকাজে মাটি দিয়ে তৈরি করেন শিশুদের জন্য রকমারি পুতুল, ফুলদানি, রকমারি ফল, হাড়ি, কড়াই, ব্যাংক, বাসন, থালা, বাঁটি, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, টিয়া, ময়না, ময়ূর, মোরগ, খরগোশ, হাঁস, কলস, ঘটি, মুড়ি ভাজার ঝাঞ্জুর, চুলা ও ফুলের টবসহ বিভিন্ন রকমের মাটির তৈরি তৈজসপত্র।
পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার কুমারটেক (পালপাড়া), টেঙ্গরপাড়া, চরসিন্দুর ও জিনারদী ইউনিয়নের বরাব গ্রাম এবং পারুলিয়া কুমার পল্লীতে মৃৎশিল্পের কাজে জড়িত রয়েছে প্রায় ২০০টি পরিবার। তারা বিভিন্ন উৎসবে মাটি দিয়ে নানারকমের তৈজসপত্র তৈরি ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বাংলা নববর্ষ বরণে জেলার বিভিন্ন স্থানের মেলায় অধিকাংশ মাটির সামগ্রী সরবরাহ করে থাকেন এসব মৃৎশিল্পীরা। তাই এখানে পুরুষ মৃৎশিল্পীর পাশাপাশি নারী মৃৎশিল্পীরাও সমানতালে কাজ করে যাচ্ছেন।
তার মধ্যে উপজেলার কুমারটেক পালপাড়া গ্রামে বসবাসরত প্রায় ২০টি পাল পরিবার। তাদের অধিকাংশ নারী-পুরুষই শ্রমের বিনিময়ে তাদের উন্নয়নের ভিত শক্ত করেছেন। বৈশাখী মেলা উপলক্ষে নারী মৃৎশিল্পীরা নিজের হাতে নিপুণ কারু কাজে মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন শিশুদের নানা রকম খেলনা। এখন তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেন দম ফেলবার সময়টুকু নেই। মৃৎ শিল্পীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখের পাঁচ দিন আগে থেকে শুরু হয়ে যায় খেলনা গুলোকে দৃষ্টিনন্দিত করার কাজ। দেওয়া হয় বাহারি রং ও নকশা।
সরেজমিনে উপজেলার কুমারটেক পালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মৃৎশিল্পী দিপালী চন্দ্র পাল, নারায়ন চন্দ্র পাল, জয়কৃঞ্জ পাল, নিপেন্দ্র চন্দ্র পাল, ওপেন্দ্র চন্দ্র পাল, ফনিন্দ্র চন্দ্র পাল দেবিন্দ্র চন্দ্র পাল, ওমেল্য চন্দ্র পাল মাটির খেলনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
এখানকার মৃৎশিল্পীরা জানান,পারিবারিকভাবেই তারা পৈত্রিক পেশা এই মাটির কাজ ধরে রেখেছেন। পণ্যের রং ও নকশার কাজ নিজেরাই করে থাকেন। মৃৎশিল্পী দিপালী চন্দ্র পাল বলেন, আমাদের কাজে ছেলে-মেয়েরা সবাই সহযোগিতা করে থাকে। এক সময় সংসারে সবার মুখে ঠিকমত দুবেলা-দুমুঠো খাবার জুটিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া করানো সম্ভব ছিল না। তাই সংসারের খরচ যোগাতে দিপালী চন্দ্র পাল মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা শুরু করেন প্রায় ২৫ বছর আগে থেকে।
বর্তমানে সংসারের সচ্ছলতা এসেছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান, খেলনা তৈরির জন্য মাঠ থেকে মাটি আনা, মাটি নরম করা, সাঁচ বসানো, চুলায় পোড়ানো, রোদে শুকানো ও রং করাসহ প্রায় সব কাজই তিনি করেন। মাটির তৈরি নানা খেলনা রং করায় ব্যস্ত এখানকার আরেক মৃৎশিল্পী মনি রানী পাল জানান, বর্ষবরন ও বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে এক একটি পরিবার প্রায় ২ হাজার খেলনাসহ মাটির বিভিন্ন রকমের তৈজসপত্র তৈরি করেছেন। এরই মধ্যে রংয়ের কাজও শেষ করা হয়েছ। মেলায় বিক্রির জন্য পাইকাররা এসে কিনেও নিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমারটেক পালপাড়া গ্রামের ২০টি পরিবারের প্রায় ৪০ জন নারী তাদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনের জন্য মৃৎশিল্পের কাজ করে যাচ্ছেন। মৃৎ শিল্পীরা জানান, প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের সময়টাতে এ শিল্পের কদর থাকলেও বছরের অন্যান্য দিনে তারা বেশ দূরাবস্থায় থাকেন। শুধু মেলা এলেই কেবল কর্মমুখর হয়ে ওঠে মৃৎ শিল্পীসমৃদ্ধ কুমার পল্লীগুলো। পহেলা বৈশাখের আগে মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন নানা সামগ্রী তৈরিতে।তাই কুমার পল্লীতে বিরাজ করে এক উৎসব মূখর পরিবেশ।
ওডি/এফই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড