আব্দুল মালেক, স্টাফ রিপোর্টার (গাজীপুর)
গাজীপুরে জেলা প্রশাসকের গাড়িচালক হিরা মিয়ার সাথে ট্রাফিক পুলিশের কথা কাটাকাটির জেরে দুই কনস্টেবলকে ক্লোজ করা হয়েছে।
রবিবার (১০ এপ্রিল) বেলা ১২টার দিকে শহরের রাণী বিলাসমনি বালক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মোড়ে এই ঘটনার সূত্রপাত। এ ঘটনায় দুই ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবলকে ক্লোজ করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন- কনস্টেবল ইউসুফ আলী ও নুর মোহাম্মদ।
প্রত্যক্ষদর্শীসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের জেলা প্রশাসনের স্টিকারযুক্ত গাড়িযোগে তার দুই মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন চালক মো. হিরা মিয়া। বেলা ১২টার দিকে তার গাড়িটি শহরের রাণী বিলাসমনি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মোড়ে এসে পৌঁছালে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ ওই গাড়িটি ঘুরিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে বলেন। চালক হিরা মিয়া ট্রাফিক পুলিশকে জানান- গাড়িতে জেলা প্রশাসকের দুই মেয়ে রয়েছে। এ কথা বলতেই এক ট্রাফিক পুলিশ বলতে থাকে- ‘ডিসির গাড়ি হয়েছে তো কী হয়েছে? আপনাকে রাস্তা ঘুরে যেতেই হবে। আমরা রাস্তায় রোদে দাঁড়িয়ে ডিউটি করি আর আপনারা যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে যাবেন, এটা হবে না।’
জবাবে চালক হিরা মিয়া বলেন, ‘আপনাদের কাজই হচ্ছে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করা।’ এ কথা বলার পর ট্রাফিকের এক পুলিশ সদস্য ডিসির গাড়িতে লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এ সময় চালক হিরা মিয়া প্রতিবাদ করলে লাঠি দিয়ে তাকেও আঘাত করে এবং তাকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামাতে চায় দুই পুলিশ কনস্টেবল ইউসুফ ও নুর মোহাম্মদ। পরে চালক রাস্তা ঘুরে ডিসির বাসভবনে চলে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, ডিসির গাড়ি চালক হিরা মিয়াকে মারধর করার সময় ডিসির দুই কন্যা বার বার পুলিশকে মারধর না করার জন্য অনুরোধ করলেও পুলিশ তা শোনেনি। আতঙ্কে দুই শিশু কান্নাকাটি করতে থাকে এবং ভয়ে তটস্থ হয়ে যায়।
এদিকে জেলা পুলিশের গাড়ি চালককে পুলিশ কর্তৃক মারধরের ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সকল কর্মচারী রাস্তায় নেমে আসে। তারা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে রাজবাড়ি সড়ক অবরোধ করে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা আধা ঘণ্টাব্যাপী ওই সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে প্রশাসকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কর্মচারীদের বুঝিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অভ্যন্তরে নিয়ে যান। সেখানে কর্মচারীদের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে বক্তব্য রাখেন কর্মচারী নেতা রফিকুল ইসলাম, সিরাজউদৌলা, আজহারুল ইসলাম, মো. ইস্রাফিল, মো. রুহুল আমীন, খায়রুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান কার্যালয় থেকে বের হয়ে দ্রুত তার বাসভবনে ছুটে যান। পরে ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুনও জেলা প্রশাসকের বাসভবনে গিয়ে হাজির হন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত দুই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসককে আশ্বস্ত করেন।
জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, এ ঘটনায় তিনি হতভম্ব হয়ে গেছেন। একজন পুলিশ কনস্টেবলকে জেলা প্রশাসনের গাড়ি এবং তাতে তার দুই কন্যা আছে পরিচয় দেওয়ার পরও তার গাড়ি চালককে মারধর করা ঠিক হয়নি। তাছাড়া গাড়িতে থাকা তার দুই শিশুকন্যা ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন : কান্না বাড়ছে তিস্তা পাড়ের মানুষের
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গাড়ি চালকের সাথে ট্রাফিক পুলিশের একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত দুই পুলিশ কনস্টেবলকে ক্লোজ করে পুলিশলাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড