মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
নরসিংদীতে প্রয়াত ভাসুর মৃত ফজলুর রহমানের স্ত্রী মোসাঃ ফরিদা বেগম, সন্তান মাহমুদুল হাসান রানা ও নাইমুর রহমান রাফির বিরুদ্ধে মৃত আতাউর রহমান মন্টুর স্ত্রী কাজী রুনার নরসিংদীর ব্রাক্ষন্দীতে ২ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কাজী রুনা গত বছরের ২১ মে নরসিংদী পৌর বিরোধ মীমাংসা বোর্ডে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পৌর বিরোধ মীমাংসা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অমান্য করে অদ্যবধি পর্যন্ত বাদিনীর প্রাপ্য বুঝিয়ে না দিয়ে তার জমিতে জোরপূর্বক ইমারত নির্মাণ করে বিবাদিগণ আরাম-আয়েশে বসবাস করে আসছেন।
শনিবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ভুক্তভোগী কাজী রুনা।
সাংবাদিকদের সামনে অশ্রুসিক্ত নয়নে কাজী রুনা বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর থেকে আমি আমার স্বামীকে সুস্থ করে তুলতে সকল প্রকার চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছি। তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমার স্বামীর ক্রয়কৃত বাড়িঘর,আমার গহনা ও পৈত্রিক সম্পত্তিসহ সকল কিছু বিক্রি করেও তাকে বাঁচাতে পারিনি। সর্বশেষ তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে আমার ভাসুরের স্ত্রী ও সন্তানদের শরণাপন্ন হয়েছি কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পাইনি। বরং আমার স্বামীর অসুস্থতার সুযোগে তারা নরসিংদী শহরের ব্রাক্ষন্দী থেকে ২ শতাংশ জমি দেওয়ার কথা বলে আমার স্বামীর গ্রামের বাড়ির সকল সম্পত্তি কৌশলে লিখিয়ে নিয়েছে। বিনিময়ে ব্রাক্ষন্দী থেকে যে জমি দেওয়ার কথা ছিল তাও দেয়নি। আমি আমার স্বামীর চিকিৎসা করাতে গিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু অবশেষে নিয়তির কাছে হার মেনে আমার স্বামী পরপারে পাড়ি জমান।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এনজিওর টাকা পরিশোধ করতে না পারায় আমার নামে মামলা হয়েছে। বর্তমানে আমি বিভিন্ন এনজিও’র একাধিক মামলার বোঝা মাথায় নিয়ে ফেরারি জীবনযাপন করছি। আমার জা ও তার সন্তানদের কাছে আমার সমস্ত সমস্যার কথা খুলে বলার পরও তাদের এতটুকু মায়া হয়নি আমার জন্য। তাদের বিরুদ্ধে পৌর মীমাংসা বোর্ডকে অবগত করেও কোন লাভ হয়নি। পৌর মীমাংসা বোর্ডের দেওয়া রায়ের টাকাগুলো পেলে আমি অন্তত আমার ঋণের বোঝাটা হালকা করতে পারব।
কাজী রুনা আরও বলেন, জীবন চলার সাথীকে হারিয়ে আজ আমি ক্লান্ত ও সর্বশান্ত! আমি স্বামীহারা সহায় সম্বলহীন এক হতভাগ্য নারী। পিতার বাড়িতেও আজ আমার ঠাঁই নেই। সেখান থেকে আমার যেটুকু প্রাপ্য তার চেয়েও বেশি নিয়ে এসেছি স্বামীর চিকিৎসা খরচের জন্য। পুলিশের ভয়ে আমাকে সারাক্ষণ পালিয়ে বেড়াতে হয়। আমার স্বামীর সকল সম্পদ গ্রাস করেও তারা আমার সাথে এতটুকু সহায়তার হাত বাড়ায়নি। আমি আপনাদের মাধ্যমে প্রশাসনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমার সাথে ঘটে যাওয়া এ অমানবিক আচরণের বিচার চাই।
নরসিংদী পৌর মীমাংসা বোর্ডের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, বিবাদীগণ বাদীর স্বামীর ভাইয়ের স্ত্রী পুত্রগণ বিগত ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর সম্পত্তি সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে বাদীর স্বামীর ব্রাক্ষন্দীর বাড়ির ২ শতাংশ জমি বুঝিয়ে দেওয়ার শর্তে আপোষ মীমাংসা হয়। মীমাংসার পর আপসনামার উল্লেখিত শর্ত উভয় পক্ষ মেনে নেয়। এমতাবস্থায় বাদীর স্বামী অসুস্থ থাকা অবস্থায় বাদীকে নিঃসন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করেন। পরে বিবাদীগণ বিগত ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর উক্ত আপস মীমাংসার শর্ত ভঙ্গ করে বাদী নিঃসন্তান হওয়ায় তার সম্পত্তি বুঝিয়ে না দিয়ে তাকে হয়রানি করতে থাকেন।
পরবর্তীতে বাদী পুনরায় পৌর মীমাংসা বোর্ডের স্মরণাপন্ন হলে গত বছরের ৩০ জুন বিবাদীদের ১ম এবং একই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ২য় নোটিশ পাঠানো হয়। ২য় নোটিশের পর বিবাদীগণ হাজির হয়ে এক সপ্তাহের সময় চাইলে তা মঞ্জুর করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তৃতীয় নোটিশ দেওয়া হলে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি উভয় পক্ষের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইপূর্বক শুনানি শেষে পৌর মীমাংসা বোর্ড বাদীর পক্ষে রায় প্রদান করেন। এতে বাদীকে ৩,৪৫০০০/ (তিন লক্ষ পঁয়তাল্লিশ হাজার) টাকা প্রদান করতে বিবাদীগণকে নির্দেশ দেয় পৌর মীমাংসা বোর্ডের সদস্যরা। সেইসাথে টাকা প্রদান করার পূর্ব পর্যন্ত বাড়ির সকল প্রকার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে নরসিংদীর ব্রাক্ষন্দীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাদীকে কোন ধরনের টাকা পয়সা বা আর্থিক সহায়তা না দিয়ে পৌর মীমাংসা বোর্ডকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাড়ি নির্মাণ করে সেখানে আয়েশে বসবাস করছে বিবাদীগণ।
আরও পড়ুন: বন্ধকী জমি রেজিষ্ট্রি দেখিয়ে নামজারির চেষ্টা!
এ সময় বাদীর জা মোসাঃ ফরিদা বেগমের কাছে তাদের উপর আনীত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পৌর মীমাংসা বোর্ড যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি। তাছাড়া আমার দেবরের চিকিৎসার জন্য আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি তার চিকিৎসা সহায়তায় তারা কোন ধরনের কার্পণ্য করেনি বলেও জানান তিনি।
ওডি/এমকেএইচ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড