• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পেটের তাড়নায় আর কিস্তি আতঙ্কে অভিযানের মধ্যেই নদীতে জেলেরা

  গোপাল দে

১৪ অক্টোবর ২০১৮, ০০:২০
ভোলায় জেলেরা
ছবি : দৈনিক অধিকার

জাতীয় সম্পদ ইলিশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে (সোমবার) ৭ অক্টোবর থেকে (রবিবার) ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন প্রজনন ক্ষেত্রের ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই সময়ের মধ্যে সব ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ভোলায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা নামছেন নদীতে।

দীর্ঘদিন নদীপাড়ে বসে বেকার সময় কাটিয়েছেন জেলেরা। কারন অভিযানের এক মাস আগেও নদীতে তেমন ইলিশের দেখা মিলেনি। জেলেরা নদীতে গিয়ে তেলের টাকাও উঠাতে পারেনি মাছ বিক্রি করে। অভিযান শুরুর ৩-৪ সপ্তাহ আগে জেলেদের জালে ধরা দেয়া শুরু করেছিলো রুপালি ইলিশ। জেলেরা ও আবার ঋন ও অন্যান্য দেনা পরিশোধ করতে শুরু করেছিলো। এমন সময় ঘোষনা এলো ২২ দিনের এই অভিযানের।

‘অভিযান আমাদের ভালোর জন্যই, তবে আমরা কী করবো, পরিবার নিয়ে কি না খেয়ে মরবো? আমাদের প্রত্যেক জেলে পরিবারেরই রয়েছে ৪-৫ জন সদস্য। পরিবারের একমাত্র আয়ের মানুষ, বাবা,মা বা ভাইয়ের উপার্জনে খেয়ে বেঁচে থাকে। কী করে চলবে সংসার আর কী ভাবেই বা মেটাব সমিতির ঋণের কিস্তি তার হিসাব কষতে ব্যস্ত আমরা। অভিযান আমাদের ভালোর জন্যই তবে এই সময়ে তো আর সমিতি তাদের ঋণের কিস্তি নেয়া বন্ধ করবে না’ বলে জানান জেলেরা।

ছবি : দৈনিক অধিকার

এ বছর এখনও কোনো জেলে পায়নি ভিজিএফ (পুর্নবাসন) এর বরাদ্দকৃত চাল। তাই সাংসারের মানুষ গুলোর মুখে ভাত তুলে দেওয়ার জন্যই অনেক জেলে অভিযান চলাকালীন বাধ্য হয়ে নামছে নদীতে। প্রত্যেক বছর কোস্টগার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয় অনেক জেলে, হারায় তাদের মাছ শিকারের জাল, যেতে হয় জেলে না হয় গুণতে হয় আইন অনুযায়ী জরিমানা। অভিযান চলছে ৭দিন, এ পর্যন্ত ভোলা জেলার ৭ উপজেলায় ১ম দিনে ১০ জন ,২য় দিনে ৫,৩য় দিনে ৩ ,৪র্থ দিনে ১১,৫ম দিনে ঘুর্ণিঝড় তিতলির জন্য অভিযান সম্ভব হয়নি, ৬ষ্ঠ দিনে ৪১, ৭ম দিনে ৩৩ মোট ১০৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ,কোস্টগার্ড বাহিনী জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিস কৃর্তক পরিচালিত অভিযানে। যাদের মধ্যে অনেককে জরিমানা করা হয়েছে বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অনেক জেলের দাবি জেলে কার্ডে তারা সঠিক ভাবে সঠিক সময়ে পায়না বরাদ্দের চাল। এ বছর অভিযানের ৭দিন পর হয়ে গলেও চাল হাতে পায়নি তারা। তাই অভিযানকালীন পরিবারের মানুষ গুলোর মুখে খাবার তুলে দিতে তাদের পড়তে হয় বিপাকে। এই সময়ে তাদের প্রত্যেকের ঋণের খাতায় যুক্ত হয় মাহাজন আর দোকানিদের ঋণের বোঝা। অনেক জেলের আবার নেই জেলে কার্ড।

অনেকের দাবি চাল দেওয়ায় নানান গরিমশি করে চেয়ারম্যানরা। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি সুযোগ সুবিধার লোভে ভিন্ন পেশার লোকও জেলে কার্ড নিয়ে সরকারি ভিজিএফের চাল নিচ্ছে। অথচ পেশায় যারা জেলে তারা অনেকই নিবন্ধন কার্ড এখনও হাতে পায়নি।

ভোলা মৎস্য বিভাগের মতে, জেলায় ১ লাখ ৩২ হাজার ২৬০ জেলেকে নিবন্ধনের আওয়তায় এনে তাদের পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু এদের সকলে আবার সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। তাদের মধ্যে মাত্র ৫২ হাজার ২৫০ জনকে সরকারি খাদ্য সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ভোলার মৎস্য কর্মকর্তা মো: আহসান হাবিব খান জানান, জেলায় ২ লক্ষাধিক জেলে থাকলেও এখনও সব জেলে নিবন্ধনের আওয়তায় আসেনি। সরকারি ভাবে নতুন কোনো নির্দেশনা না আসায় এখনও অনিবন্ধিত জেলেদের নিবন্ধন করা যাচ্ছে না। যার ফলে অনিবন্ধিত জেলেরা বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি নানা সুযোগ সুবিধা থেকে।

ছবি : দৈনিক অধিকার

জেলেরা বলছে, প্রায় অভিযানের শেষ সময়ের দিকেই বরাদ্দের চাল হাতে পায় তারা। তাই অনেকে অভিযানকালীন সময়ে পেটের ভাত জোগারের জন্য যান নদীতে। যদি অভিযানের শুরুতেই পূর্নবাসন ভিজিএফ এর চাল হাতে পায় তারা তবে অনেকেই আর নদীতে নামবেনা অভিযান চলাকালীন। জেলেদের দাবি নতুন করে নিরপেক্ষ ভাবে বাদ থাকা জেলেদের কার্ড তৈরি করা হোক।

অভিযানে ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরীয়তপুর, ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী,জামালপুর, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী , মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গোপালগঞ্জ জেলার সব নদ-নদীতে মাছ শিকার (আহরণ) ,বাজারজাতকরণ ও ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করেছে ।

উল্লেখ্য,চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার শাহের খালী থেকে হাইতকান্দী পয়েন্ট, ভোলার তজুমুদ্দিন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দীন থেকে পশ্চিম সৈয়দপুর আওলিয়া পয়েন্ট, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড