• মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ৭ চৈত্র ১৪২৯  |   ২৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মায়ের প্রেমিকের এনে দেওয়া বিষেই প্রাণ গেল ওদের

  সারাদেশ ডেস্ক

১৭ মার্চ ২০২২, ১৬:২৯
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রেস ব্রিফিং (ছবি : সংগৃহীত)

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মিষ্টিতে বিষ মিশিয়ে দুই শিশুকে হত্যায় ঘটনায় মিষ্টি সরবরাহ করেন তাদের মায়ের পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহ। মিষ্টিতে বিষ আগেই মেশানো ছিল বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আনিসুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, শিশুদের বাবা ইসমাইল হোসেন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। এ অবস্থায় তিনি সিলেটে ইটভাটায় কাজ করেন। সেখানে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় শুধু স্লিপ বিতরণ করেন। ১২ বছর আগে তিনি রিমা বেগমকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে তিন সন্তান ছিল।

সংসারের অসচ্ছলতার কারণে চাতাল কলে কাজ শুরু করেন রিমা। সেখানে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সর্দার সফিউল্লাহর সঙ্গে। সফিউল্লাহ শর্ত দেন রিমা তার দুই সন্তানকে সরিয়ে ফেললে তিনি তাকে বিয়ে করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন বিকালে রিমাকে পাঁচ পিস মিষ্টি দিয়ে আসেন সফিউল্লাহ। ওই সময় তিনি বলেন, এই মিষ্টি দুই শিশুকে খাওয়ানোর পর আর কিছু করতে হবে না।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আরও জানান, রিমা ওই মিষ্টি তার দুই সন্তানকে খাওয়ান। এদিন রিমার সঙ্গে সফিউল্লাহর প্রায় ১৫ বার মোবাইলে কথা হয়।

আগে থেকেই শিশু দুটির শরীরে জ্বর ছিল। তাই রিমা নাটক সাজাতে তার শাশুড়িকে দিয়ে ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ আনান। পরে দুই শিশুকে এক চামচ করে খাওয়ান। হাসপাতালে নিয়ে আসার পর দুই শিশুই মারা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন, সরাইল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, ডিআইও-১ ইমতিয়াজ আহমেদ ও আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ রহমান প্রমুখ।

এদিকে দুই শিশু হত্যার ঘটনায় একটি মামলা করেছেন শিশু দুটির বাবা ইটভাটা শ্রমিক ইসমাইল হোসেন। মামলায় শিশুদের মা রিমা বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক সফিউল্লাহকে আসামি করা হয়েছে। রিমাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে ভোরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

মারা যাওয়া দুই শিশু হলো আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের ছেলে ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫)।

অভিযোগ ওঠে, ‘নাপা সিরাপ খেয়ে’ ১০ মার্চ দিবাগত রাতে শিশু দুুটি মারা যায়। ওই সময় শিশুদের মা লিমা বেগম দাবি করেন, ‘দুদিন ধরে মোরসালিন খানের জ্বর হয়। এর আগে থেকে ইয়াসিন খানেরও জ্বর ছিল। ঘটনার দিন বিকেলে দুই শিশুর দাদি পাশের বাজারের মাঈন উদ্দিনের ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ নিয়ে আসেন। দুই শিশুকে সিরাপ খাওয়ানোর পর তারা বমি করতে শুরু করে।’

‘অবস্থার অবনতি হলে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের জেলা সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলে পথে রাত ৯টার দিকে ইয়াসিনের মৃত্যু হয়। পরে রাত ১০টার দিকে মোরসালিনও মারা যায়।’

আরও পড়ুন : নাপা সিরাপে নয়, খাবারে বিষ মিশিয়ে দুই শিশুকে হত্যা

এ ঘটনায় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

আরও পড়ুন : নরসিংদীতে বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

সেই সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘নাপা সিরাপ’ বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দেয় জেলা কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের যে ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ কেনা হয়েছিল, সেখান থেকে জব্দ করা বাকি সিরাপ পরীক্ষায় মান সঠিক পাওয়া গেছে বলে জানায় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর।

ওডি/এফই

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড