মাজেদুল ইসলাম হৃদয়, ঠাকুরগাঁও
মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে সাদা সাদা ফুল। আর ওই সাদা ফুলের ভেতর লুকিয়ে আছে কালো বর্ণের পেঁয়াজবীজের দানা। এসব বীজের বাজারদর চড়া হওয়ায় চাষিরা এ বীজকে ‘কালো সোনা’ বলেও আখ্যায়িত করেন।
জানা যায়, বেশ কয়েকবছর ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে এসব পেঁয়াজবীজ উৎপাদন হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হওয়ায় দিনকে দিন পেঁয়াজবীজ উৎপাদনে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তবে উপজেলাটিতে মৌমাছি সংকটের কারণে পেঁয়াজ ফুলে পরাগায়ন না ঘটায় উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেশিরভাগ কৃষক তাদের পরিবারের লোকজনকে সাথে নিয়ে হাতের স্পর্শে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন ঘটানোর চেষ্টা করছেন।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল, পাড়িয়া ও ধনতলা ইউনিয়নের সাবাজপুর, রায়মহল, পাতিলভাষা, মরিচপাড়া, খোচাবাড়ী, বাঙ্গাটুলি গ্রাম ঘুরে এমন দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে। পেঁয়াজবীজ নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাষিরা।
চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জমিতে পেঁয়াজবীজ বপনের সময় নভেম্বরে। বীজ পরিপক্ব হতে সময় লাগে চারমাস ১০ দিন। পেঁয়াজ ফুলে পরাগায়ন না হলে পরিপক্বতা আসে না। আর এসব ফুলে পরাগায়নের প্রধান মাধ্যম হলো মৌমাছি। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষকেরা খেতে কীটনাশক ছিটান। কিন্তু সেই কীটনাশকে মারা পড়ছে উপকারী পোকা ও মৌমাছি। এ কারণে পেঁয়াজবীজের খেতে দিন দিন মৌমাছির আনাগোনা কমে যাচ্ছে। তাই হাতের স্পর্শে কৃত্রিমভাবে পরাগায়নের চেষ্টা করছেন তারা।
বেসরকারি একটি কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে চলতি মৌসুমে চাড়োল গ্রামের আতাউর রহমান ১ একর জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, পেঁয়াজবীজ কোম্পানি দেয় কোম্পানি থেকে, উৎপাদন করতে হয় নিজ খরচে। পুরো জমিতে পেঁয়াজবীজ উৎপাদন করতে ব্যয় হয়েছে দেড় লাখ টাকা। উৎপাদন শেষে তারাই কিনবেন ১ হাজার দুইশত টাকা কেজি দরে। খেত প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার না হলে ৬০০-৭০০ কেজি পেঁয়াজবীজ হবে বলে আশা করছেন তিনি। যার মূল্য প্রায় ৭ লাখ টাকা।
পাশের খেতে হায়দার আলী চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ করেছেন। তিনি জানান, বাজারে দর থাকায় তার কাছে পেঁয়াজবীজ সোনা চাষের মতো। গেল বছর প্রতি বিঘা জমিতে দেড় লাখ টাকা করে লাভ করেছেন। এছাড়াও খেতের পেঁয়াজ উপহার হিসেবে বিলিয়েছেন পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের মাঝে। চলতি বছর খেতের দেড়গুণ ফলন ও লাভের আশা করছেন তিনি।
পেঁয়াজবীজ চাষি আতাউর রহমানের ছেলে দিনাজপুর জেলার কাহারোলে চাকরি করেন একটি বেসরকারি এনজিওতে। পেঁয়াজবীজ উৎপাদনের লাভ দেখে চাকরি ছেড়ে আসতে চান তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলায় বেসরকারি বীজ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর আওতায় পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন হয়েছে ২৬ হেক্টর জমিতে। গত বছর কৃষি অফিসের নিজস্ব প্রদর্শনী থাকলেও এবার নেই।
আরও পড়ুন : ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় ফতুল্লার যুবক নিহত, আহত ৩
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় বলেন, অফিস থেকে বিভিন্ন পোকা-মাকড় দমনে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বালিয়াডাঙ্গীর পেঁয়াজচাষিরা মানসম্মত বীজ উৎপাদনে সক্ষম। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব পেঁয়াজবীজ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এসব বীজের বেশ কদর রয়েছে।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড