নজরুল ইসলাম শুভ, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে চারতলা ভবন নির্মাণের অভিযোগ সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর বিরুদ্ধে।
সোনারগাঁয়ের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁ জি. আর. ইন্সটিটিউশন মডেল স্কুল এন্ড কলেজের ভবন নির্মাণের অভিযোগ তুলেন এলাকাবাসী ও শিক্ষক কর্মচারীরা। তিনি নিন্মমানের রড, বালু সিমেন্ট, অন্য ভবনে ব্যবহার করা ইটের সুরকি, পুরানো রড ব্যবহার করে এ ভবন নির্মাণ করেছেন। শুধু জি. আর. ইন্সটিটিউশনের ভবনই নয় যুবলীগের সভাপতির প্রভাবে সকল ঠিকাদারি কাজে তিনি অনিয়ম করে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তার এ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীকে অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহার অশালীন আচরণ করেছেন। ফলে কেউ তার কাজের বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেননি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের অর্থায়নের ২কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সোনারগাঁয়ের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সোনারগাঁ জি.আর.ইন্সটিটিউশন মডেল স্কুল এন্ড কলেজের চার তলা বিশিষ্ট ভবনের ঠিকাদারি কাজ পান সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু। এ ভবনের নির্মাণ কাজ ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো সে মাত্র ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ করতে পারেননি। তিনি এ ভবন নির্মাণের শুরু থেকেই নিন্মমানের রড, সিমেন্ট, বালু , সুরকি ব্যবহার করেছেন। শুধু তাই নয়, এ ভবন নির্মাণে অন্যকোনো পুরাতন ভবনে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা ইটের সুরকি ও রড ব্যবহার করেছেন। সেই সুরকি ও রড এখনো ওই স্কুল মাঠে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
সরেজমিনের ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল মাঠের দক্ষিণ দিকে একটি তিনতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণাধীন। ওই ভবনের পাশেরই নিন্মমানের ইট, সুরকি, অন্যস্থানে ব্যবহার করা পুরাতন ইটের সুরকি, পুরাতন রড ও বালু মিশ্রিত সিলেকশন বালু ফেলে রাখা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এ ভবন নির্মাণের জন্য তিনি এ স্কুলের বাথরুমের ট্রাংকি ও সীমানা প্রচীর ভেঙ্গেছেন। ফলে গত দুই বছর স্কুলের একই বাথরুম ব্যবহার করতে হচ্ছে শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্র ছাত্রীদের। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন। বাথরুমের ট্রাংকি গভীরভাবে গর্ত করার কারণে ওই স্কুলের মডেল ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। একাধিকবার এ ট্রাংকি মেরামত করার জন্য বলা হলেও কোনো কর্ণপাত করেনি। এ নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ, জেলা প্রশাসক, সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে নাশিল করলেও কোনো লাভ হয়নি।
সোনারগাঁ জি.আর.ইন্সটিটিউশন মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. সুলতান মিয়া বলেন, এ ভবন নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। এখানে নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করেছেন। তাকে বাধা দিলে তিনি কাজ বন্ধ রাখেন। স্কুল ছুটির পর থেকে রাতের আধারে তিনি এ কাজ করেছেন। তাকে তেমন কিছু বলাও যায় না। দীর্ঘদিন ধরে এর নির্মাণ কাজ চলছে। ফলে সীমনা প্রাচীর ভাঙ্গা রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের ফেলে পার্শ্ববর্তী মডেল ভবনেও ফাঁটল দেখা দিয়েছে। মডেল ভবনের ট্র্যাঙ্কিও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। একটি বাথরুমে শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রী ব্যবহার করছে।
সোনারগাঁ জি.আর.ইন্সটিটিউশন মডেল স্কুল এন্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম বলেন, আমাদের সম্পদ আমাদের রক্ষা করতে হবে। এ ভবনে যে পরিমাণ নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এতে করে এ ভবন ৩০ বছর মনে হয় টিকবে না। প্রতিবাদ করে আমাদের সম্পদ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আরিফুল হক বলেন, নিন্মমানের সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পুনরায় নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে থাকলে তা ভেঙ্গে দেওয়া হবে। কেউ প্রকৌশলীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করলে সেটা তার ব্যক্তিত্বের পরিচয়।
অভিযুক্ত ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের চিঠি পাওয়ার পর ন্মিমানের সামগ্রী সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখানে আমার আরেকটি সাইডের কাজের সামগ্রী রাখা আছে। ওই সুরকি দিয়ে সেই সাইডের কাজ করা হচ্ছে। আমি এ ভবনে শতভাগ কাজ দেওয়া চেষ্টা করছি।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদ এলাহী বলেন, ভবন নির্মাণে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়ে থাকলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হবে। তাছাড়া কাজ বন্ধ রাখা হবে। কোনোভাবেই নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা যাবে না।
ওডি/ওএইচ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড