মাজেদুল ইসলাম হৃদয়, ঠাকুরগাঁও
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সয়াবিন তেলের দাম নিম্নআয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে যাওয়ার কারণে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ মানুষের। বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁর ব্যবসায়ীরা। তাই সয়াবিন তেলের খরচ কমাতে ভিন্ন এক পদ্ধতি অবলম্বন করতে দেখা গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার মথুরাপুর এলাকার একটি হোটেলে। বাড়তি মূল্যে কেনা সয়াবিন তেল এ পদ্ধতিতে সাশ্রয়ও হচ্ছে বলে দাবি হোটেল মালিকের।
উদ্ভাবিত এ পদ্ধতি দেখতে ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ। আর এতে বিক্রিও বেড়েছে হোটেল মালিক আব্দুল হামিদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, দোকান ভর্তি মানুষ। কেউ পরোটা খাচ্ছেন কেউ আবার পরোটা ভাজা দেখছেন। সবার চোখ দোকানের মাথার উপর থেকে কড়াই পর্যন্ত ঘুরপাক খাচ্ছে। হোটেলের চুলার কারিগরের মাথার উপর একটি বাঁশে সয়াবিনের তেল ঝুলে থাকতে দেখা যাচ্ছে। সেখান থেকে স্যালাইনের পাইপ বেয়ে পড়ছে তেল। দু এক ফোঁটা করে তেল কড়াইয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। আর কারিগর ও দোকান মালিক তাতে পরোটা ভাজছেন।
হোটেল মালিক আব্দুল হামিদ জানান, তেলের দাম বাড়ার কারণে খুব চিন্তা করছিলাম। গ্রামের দোকান কীভাবে কুলিয়ে উঠবো। পরে রুহুল নামের একজন কাস্টমার আমাকে এ বুদ্ধি দেয়। এখন গ্রামের প্রতিটি বাড়ির লোক এটি দেখতে আসছে। পরোটাও বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ওষুধ সেবনে দুই শিশুর মৃত্যু
তিনি আরও জানান, তেলের এমন সংকটের সময় হোটেল গুলোতে খুব তেল অপচয় হচ্ছে। তেলের অপচয় রোধ করতে এমন চিন্তা করেছি। নিজেই স্থানীয় বাজার থেকে স্যালাইনের পাইপ কিনে এনে সেট করে দিয়েছি। এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসছে। অনেকে এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে। পদ্ধতিটা আরেকটু আধুনিক করলে হোটেলগুলোতে তেলের অপচয় কম হবে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা শক্তিশালী হবে। কারণ বাংলাদেশে তো একটা জিনিসের দাম বাড়ার সাথে সাথে সব কিছুর দাম বাড়তে থাকে।
আব্দুল হালিমের স্ত্রী বলেন, আমরা যে পদ্ধতিতে পরোটা ভাজছি তা দেখতে গ্রামের অনেক মহিলা আমাদের দোকানে আসছেন। অনেক ভিড় হচ্ছে আগের তুলনায়। আমরা এভাবে আর কতদিন চলবো। পরোটা ভাজা না হয় এভাবে হচ্ছে। কিন্তু, বাকি সব কিছুতে তো বেশি বেশি তেল লাগছে। বিকালে তো আবার পুরি ভাজার সময় বেশি তেল লাগছে। এখন পুরি তেমন ভাজছিনা। আবার পুরির কাস্টমার ছুটে যাচ্ছে। আমরা তেল নিয়ে বিপাকে পড়েছি খুব।
দোকানের আরেক ভোক্তা জানান, এরকম ভিন্ন এক পদ্ধতিতে পরোটা ভাজা সৃজনশীল একটি চিন্তা। সয়াবিনের উচ্চ দামের দিনে এমন চিন্তা প্রশংসনীয়। বিষয়টি মজার হলেও সয়াবিন নিয়ে হতাশার দিনেও হাসিমুখে পরোটা ভাজতে অন্তত কষ্ট লাগছে।
স্থানীয় শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, খেটে খাওয়া মানুষ চলতে পারছেনা। তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম মানুষের দম আটকে গেছে। রুহুল একটা স্বস্তির বুদ্ধি এনেছে। তবে এটা সমাধান নয়। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে বাজার মনিটরিং করতে হবে, অসাধু ব্যবসায়ী ঠেকাতে হবে। আর তেল আমদানি করতে হবে সরকারকে।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করছে। সরকারের দেয়া নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি কেউ সয়াবিন তেল বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে আইনআনুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ সময় তেলের অপচয় রোধে সকলকে আহ্বান জানান তিনি।
ওডি/এফএইচপি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড