• শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯  |   ২২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাউজানে হাঁস-মুরগী ও মাছের খাদ্য ‘কালো মাছির লার্ভা’ উৎপাদন

  আবিদ মাহমুদ, রাউজান (চট্টগ্রাম)

০৭ মার্চ ২০২২, ১৩:৩২
রাউজানে হাঁস-মুরগী ও মাছের খাদ্য ‘কালো মাছির লার্ভা’ উৎপাদন
কালো মাছির সঙ্গে রাউজানের আবদুল আজিজ (ছবি : অধিকার)

২০ লাখ কালো মাছির সঙ্গে বসবাস করছেন রাউজানের আবদুল আজিজ। তিনি উপজেলার পূর্বগুজরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ আউলিয়া বাড়ির প্রয়াত আবদুল মতিনের ছেলে। গত তিন বছর আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরলেও গত এক বছর আগে কালো মাছির চাষ শুরু করেন। তার গ্রামের বাড়ির পৈত্রিক জমির পনের শতক জায়গায় গড়ে তোলেন কালো মাছির খামার, উৎপাদন করছেন লার্ভা।

আবদুল আজিজের দিনের অধিকাংশ সময়ই কাটে লার্ভা উৎপাদন, মাছ-মুরগীর উৎপাদন বিষয়ক গবেষণায়। তার কালো মাছির খামারে বর্তমানে ২০ লাখের অধিক কালো মাছি রয়েছে। তিনি বীজ সংগ্রহ করেছিলেন সিলেটের এক লন্ডন প্রবাসীর কাছ থেকে। প্রতিটি মাছি ৪০০-৫০০টি ডিম দেয় এবং তা আবার লার্ভায় পরিণত হয়। প্রতি ১ গ্রাম ডিম থেকে ৪ কেজি লার্ভা উৎপাদন হয়, প্রতি কেজি লার্ভার দাম ৩০ টাকা। লার্ভা উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় মুরগীর বিষ্ঠা এবং সয়াবিন। বিশেষ প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশে বর্তমানে প্রতিমাসে ৫ হাজার কেজি লার্ভা উৎপাদন হচ্ছে।

এসব লার্ভা ব্যবহার করছেন হাঁস-মুরগী ও মাছের খাবার হিসেবে। তার গড়ে তোলা ভাণ্ডার এগ্রো মর্ডান ফিস ফার্মিং ও ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই ফার্মিংয়ে শোল ও গজারসহ দেশীয় মাছের ব্রুড ও পোনা বিক্রি, খামারীর চাহিদা অনুযায়ী লার্ভা ও বীজ বিক্রি করা হয়। এতে রাখা হয়েছে বীজ ক্রেতাকে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থাও। এছাড়া বিক্রি করা হয় উৎকৃষ্ট মানের বিএসএফ সুপার কম্পোস্ট জৈবসার, খুলনার নিউটন কচুর চারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ বা ‘কালো মাছি’র আয়ু মাত্র ৪৫ দিন। ডিম ফোটার ৬ দিন থেকে ১৭ বা ১৮ দিন বয়স পর্যন্ত ধরা হয় লার্ভা, এটি হাঁস-মুরগি ও মাছকে খাওয়ানো যায়। যন্ত্রের সাহায্যে ফিড আকারে তৈরির মাধ্যমে সংরক্ষণও করা যায়। কম জায়গায় অধিক লার্ভা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করছেন প্লাস্টিকের ক্যারট। আফ্রিকার কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে প্রথমে এটি আবিষ্কৃত হয়। আবর্জনা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমাতে মূলত উদ্যোগটি নেওয়া হয়।

রাউজানে হাঁস-মুরগী ও মাছের খাদ্য ‘কালো মাছির লার্ভা’ উৎপাদন

মাছের খাদ্য হিসেবে কালো মাছির লার্ভা ব্যবহার করছেন আবদুল আজিজ (ছবি : অধিকার)

চট্টগ্রামে এটিই প্রথম লার্ভা চাষ। আবদুল আজিজের নিজস্ব মাছের খামার রয়েছে। খামারের তেলাপিয়া, শিং, গজার, মাগুর, কৈ মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের খাদ্যের চাহিদা মেটাচ্ছে কালো মাছির এই লার্ভা। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জৈবসারও। সার ব্যবহার করে উৎপাদন করা হচ্ছে শাকসবজি, কচু।

আরও পড়ুন : ‘সরকার মানুষকে কত কিছু দেয়, আমরাই পাই না’

আবদুল আজিজের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রামমোহন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এসসি., নোয়াপাড়া কলেজ থেকে এইচ.এসসি., জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম. পাশ ও কম্পিউটার ডিপ্লোমা করে ১৯৯৫ সালে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সে দেশের কোরিয়ার একটি কোম্পানিতে চুক্তিভিত্তিক প্রকিউরমেন্ট অফিসার পদে যোগদান করেন। ১২ বছরের চুক্তি সম্পন্ন হওয়ায় ২০১৭ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। চর্চা শুরু করেন কালো মাছির চাষ, মৎস্য ও মুরগীর খামার। অর্গানিক পদ্ধতিতে কালো মাছির লার্ভা থেকে উৎপাদন করছেন হাঁস-মুরগী ও মাছের খাদ্য।

গত তিন বছরে বায়োফ্লক ফিস ফার্মিং বিষয়ক ২৯৫ পৃষ্ঠার তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ একটি লেখনী সম্পাদন করেছেন। ৩৫ হাজার টাকা মূল্যে ম্যানুয়াল তৈরি ফিড মেশিনসহ সব মিলে এ পর্যন্ত তিনি বিনিয়োগ করেছেন ২০ লাখ টাকা। মাছের খামারের উপর ছয় হাজার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মুরগী শেড তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন আবদুল আজিজ।

তিনি বলেছেন, সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা কিংবা স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ পেলে তার কালো মাছির খামার, মৎস্য ও মুরগীর খামার বৃদ্ধি, লার্ভা দ্বারা তৈরি উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ মাছ ও মুরগীর অর্গানিক ফিড বাজারজাত করা যাবে।

এ প্রসঙ্গে রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পীযুষ প্রভাকর বলেন, কালো মাছির লার্ভা আমরা কখনো মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করি নাই। এই ধরনের ফিড কেয়ার আমরা সাপোর্ট করি না। আমরা সাধারণত মাছের যে ফিডগুলো আছে, সেগুলো খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকি। লার্ভার উপযোগিতা সম্পর্কে আমি অবগত নই। বিষয়টি আমি রিসার্চ করব।

রাউজানে হাঁস-মুরগী ও মাছের খাদ্য ‘কালো মাছির লার্ভা’ উৎপাদন

রাউজানে উৎপাদিত কালো মাছির লার্ভা (ছবি : অধিকার)

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, যদি হাঁস-মুরগীর বিকল্প খাবার হিসেবে নতুন কিছু হয়ে থাকে নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। তবে এই ধরনের লার্ভা উৎপাদন সম্পর্কে আমার ধারণা নেই।

আরও পড়ুন : গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে সন্তানের সামনে গৃহবধূকে ধর্ষণ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান হালদা গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, লার্ভা দিয়ে উৎপাদিত মাছ মনস্তাত্ত্বিকভাবে মানুষের খাওয়ার উপযোগী হবে কি-না বা গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি-না একটা বিষয় আছে। গবেষণা করছেন ঠিক আছে, কিন্তু সরকারি অনুমোদন নিতে হবে। সে মাছি অন্য কোনো রোগের কারণ হয় কি-না, মানবদেহের জন্য ক্ষতি হয় কি-না সেটি দেখা প্রয়োজন। যেহেতু আফ্রিকার কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে আবিষ্কৃত হয়েছে আপনি বলছেন, সেহেতু সে দেশের খাদ্য তালিকার সঙ্গে আমাদের মিল নেই, সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ওডি/কেএইচআর

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড