আবিদ মাহমুদ, রাউজান (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামের রাউজানের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে প্রাচীন কারুকার্যমণ্ডিত 'রামধন জমিদার বাড়ি'। ২০০ বছরের প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটি রাউজান উপজেলার ডাবুয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। পরিচর্যার অভাবে খসে পড়ছে প্রাচীন দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ির ছাদ, ভবন ঢেকে যাচ্ছে আগাছায়। এরপরও জমিদারি আবহ নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে জমিদার বাড়ির রাজপ্রসাদ।
ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ে শেওলা জমেছে। উপরের ভাঙা ছাদ গলে তাকিয়ে আছে আকাশ। পুকুর, পুরোনো কিছু বৃক্ষ, রামধন দিঘি, বাড়ির সামনে তোরণ, আনন্দমহল, নাচখানা, খাজনা গ্রহণের বিশেষ কক্ষ ও মন্দির সবই আছে রাজপ্রাসাদে। নেই শুধু সেই পুরোনো জমিদারি। নেই সেই মানুষগুলো। কর্মচাঞ্চল্য আর জৌলুসে ভরা বাড়িটিতে বিরাজ করছে শুনশান নিরবতা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে এই বাড়ির কর্তাদের আধিপত্য ছিল পুরো এলাকাজুড়ে। জমিদারির কর্তৃত্ব ছিল বাড়িটির কর্ণধার রামধনের হাতেই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নানা শ্রেণিপেশার মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকত বাড়িটিতে। সেগুলো এখন শুধুই স্মৃতি।
ডাবুয়া জগন্নাথ হাট, ডাবুয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, চিকদাইর পুলিশ ফাঁড়ি, রাউজান আর. আর. এসি সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় এ জমিদার বংশের বিশেষ অবদানের কথা সর্বস্বীকৃত। জমিদার রামধন ধরের বংশের অনেকেই চট্টগ্রাম শহর ও ঢাকা, কলকতায় বসবাস করেন। কয়েকজন নাতি-নাতনী জমিদার বাড়ির দু:সময়ের সঙ্গী। তাদের একজন ৮২ বছরের বৃদ্ধা ছবি ধর।
তিনি বলেন, 'কি দিন কি হয়ে গেল। কখনও কল্পনা করিনি এই দিন দেখতে হবে। ছোটবেলায় কিছুটা দেখা জমিদারি আর বর্তমান পরিস্থিতির পার্থক্য চিন্তা করলেই মনে হয় পৃথিবীতে সবকিছুই তুচ্ছ।
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের জন্মের পর থেকে দেখেছি ঠাকুর দার (রামধন জমিদার) জমিদারি শাসন। তিনি মারা যাওয়ার পর বাবা কেশব চন্দ্র ধন জমিদারির হাল ধরেন। ১৯৫৫ সালের ৬ জুন বাবার মৃত্যুর পর আমাদের জমিদারি ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।'
জমিদারদের নাতি তীর্থ ধর বলেন, 'আমাদের বাড়িটি প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো। আমাদের দাদারা জমিদারি করেছেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর পরিবারের সদস্যরা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গেছেন। এতে জমিদারির জৌলুস হারিয়েছে। আমরা এখানেই বসবাস করছি। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে বাড়িটি দেখতে। ভালোই লাগে আমাদের।'
আরও পড়ুন: সরকারি নিয়ম মানা হচ্ছে না চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
জমিদারি দেখেননি, বাপ দাদার মুখে শুনেছেন এমন অনেকেই বলেন, জমিদার বাড়িটি রুপার থালা, বালতি, কেটলি ব্যবহারসহ অভিজাত বিলাসিতায় ভরপুর ছিল। এলাকার মানুষদের কাছ থেকে রুপার টাকায় খাজনা আদায় করত জমিদার। যারা খাজনা প্রদান করতে যেতেন, তাদের উৎসাহিত করার জন্য জমিদার বাড়ি থেকে দেওয়া হতো এক জোড়া নারকেল, এক বিড়া পান আর বাতাসা।