আব্দুল মালেক, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর
দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে নিজের নাম-মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করে অন্যের জমিতে সাইনবোর্ড স্থাপন করে জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মো. জাকির হোসেন এস.পি. মর্যাদায় বর্তমানে যশোর জেলার সিআইডিতে কর্মরত থাকলেও নিজ গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অনুগত লোকদের দিয়ে তিনি জমি দখলের চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামান গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ন্যায়বিচার চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন।
পুলিশ সুপারের কাছে আবেদনে ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামান উল্লেখ করেন, গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর মৌজাস্থিত সিএস-৯, এসএ-১২৭ ও আর.এস-৯৪ নম্বর খতিয়ানে সি.এস, এস.এ ও আর.এস ৩ নম্বর দাগের জমির মালিক অজিত শীলের নিকট থেকে আম-মোক্তারনামা রেজিস্ট্রি দলিল মূলে-৯৯ শতাংশ জমির মালিক হন। ২০১২ সাল থেকে তিনি যথারীতি ওই জমি ভোগদখলে আছেন। এরপর পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেনসহ চারজন ২০১৮ সালে ওই জমি থেকে ১০ শতাংশ ৩০ লাখ টাকা দামে নগদ অফেরতযোগ্য ৫০ হাজার টাকা দিয়ে তিন মাসের সময় নিয়ে রেজিস্ট্রি বায়না করেন। পরবর্তীতে বকেয়া ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের সময় শেষ হয়ে গেলেও তারা দিতে পারেননি। এ বিষয়ে জমির মালিক মনিরুজ্জামান অভিযুক্ত জাকির হোসেনসহ অন্য তিনজনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করেন।
আরও উল্লেখ করেন, একপর্যায়ে তারা বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। জাকির হোসেনের সাথের অপর তিনজন তোফাজ্জল হোসেন, রানা মিয়া ও কামরুজ্জামান ওই রেজিস্ট্রিকৃত বায়না পণ্ডনামা ঘোষণা দলিল করে দিলেও পুলিশ সুপার জাকির হোসেন দেননি। ওই জমি অন্যত্র বিক্রির চেষ্টা করলে ক্রেতা আসলে তাদের হুমকি দিয়ে সরিয়ে দেন। একপর্যায়ে পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেনের নাম এবং মোবাইল নাম্বার দিয়ে ২০ শতাংশ জমির মালিক দাবি করে সাইনবোর্ড স্থাপন করেন।
এ বিষয়ে জমির মালিক মনিরুজ্জামান তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, হয়ত জমি লিখে দিতে হবে অন্যথায় মোটা অংকের টাকা দিলে তিনি সাইনবোর্ড সরিয়ে নিবেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মনিরুজ্জামান বলেন, জমিতে সাইনবোর্ড স্থাপনের আগে পুলিশ সুপার জাকির হোসেন তার কাছে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন, অন্যথায় তাকে একটি প্লট বিনামূল্যে লিখে দিতে বলেন। এতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করলে জাকির হোসেনের নিজস্ব লোক স্থানীয় আরিফুল ইসলাম, সবুজ আল-মামুন ও লোকমান হোসেনকে দিয়ে জমি জবরদখলে সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। এরপর আবার তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে জাকির হোসেন ফের টাকা দাবি করে, অন্যথায় জমি লিখে দিতে বলে। তা না করলে ওই জমি বিক্রি করতে দিবেন না বলেন এবং জমিতে কেউ গেলে তাকে মারধরের হুমকি দেন। মূলত ঢাকা থেকে গিয়ে গাজীপুরে জমি কিনেছেন বিধায় পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জবরদখলের চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে তিনি গাজীপুর পুলিশ সুপার বরাবর লিখিতভাবে ন্যায়বিচারের আবেদন করেছেন।
তোফাজ্জল হোসেন জানান, কালিয়াকৈরের সফিপুর মৌজায় মো. মনিরুজ্জামানের কাছ থেকে তিনিসহ ৪ জন ৩ মাস মেয়াদে ১০ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি বায়না করেছিলেন। কিন্তু যথাসময়ে বাকি টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তারা স্বেচ্ছায় পণ্ড ঘোষণা দলিল করেছেন এবং ওই জমিতে তাদের কোনো দাবি-দাওয়া নেই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তারা চারজনে ১০ শতাংশ জমি বায়না করেছিলেন। পরে বায়নার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তিনি ব্যক্তিগতভাবে জমির মালিককে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন। এছাড়া তিনি ২০ শতাংশ জমিতে সাইনবোর্ড স্থাপন করতে বলেননি। তিনি তাদের ১০ শতাংশ জমিতেই সাইনবোর্ড দিতে বলেছিলেন। বায়নার মেয়াদ শেষ হলেও জমির মালিক কোর্ট থেকে রেজিস্ট্রি বায়না দলিল বাতিল করেননি।
আরও পড়ুন : রূপগঞ্জে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সঙ্গে ছাত্রদলের সংঘর্ষ
এছাড়া তিনি এবং তার স্ত্রী দুজনে সরকারি চাকরি করে দুই লাখ টাকা বেতন পান, তাদের কারো কাছে চাঁদা চাইতে হবে না বলে তিনি জানান।
ওডি/ওএইচ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড